দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের অভিযোগ, কাশ্মীর উপত্যকাকে অশান্ত করে তুলতে পাকিস্তান মদত দেয় জঙ্গিদের। পহেলগামে জঙ্গি হামলার পর পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফ জঙ্গিদের মদত দেওয়ার কথা স্বীকার করে নেন। এরপর ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ নিহত পাক জঙ্গিদের শেষকৃত্যে হাজির থাকতে দেখা যায় পাক সেনা এবং পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের। আর এবার পাকিস্তানে প্রকাশ্য সভা করলেন পহেলগাম হামলার মাস্টারমাইন্ড লস্কর কমান্ডার সাইফুল্লাহ কাসুরি। বুধবারের ওই সভায় কাসুরির সঙ্গে দেখা গিয়েছে পাকিস্তানের একাধিক রাজনৈতিক নেতা এবং চিহ্নিত জঙ্গিদের। প্রশ্ন উঠছে, আন্তর্জাতিক স্তরে লস্কর-ই-তৈবা নিষিদ্ধ সংগঠন। পাকিস্তানের মধ্যেও কাগজে-কলমে নিষিদ্ধ, তা সত্ত্বেও কীভাবে খোলাখুলি কাজকর্ম চালিয়ে যায় তারা?
পাকিস্তান মারকাজি মুসলিম লিগ বুধবার পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে একটি মিছিল ও জনসভার আয়োজন করে। পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার বর্ষপূর্তি হিসেবে এই আয়োজন। এই সভা থেকেই প্রকাশ্যে ভারতবিরোধী মন্তব্য করেছেন একাধিক বক্তা। সূত্রের দাবি, কাসুরি সভা থেকে বলেছেন, ‘পহেলগামের জঙ্গি হামলার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে আমি এখন গোটা বিশ্বে বিখ্যাত হয়ে গেলাম।’ বক্তব্য রাখার সময় ‘মুদাসির শহিদ’-এর নামে রাস্তা ও হাসপাতাল তৈরির ঘোষণা করেছেন সাইফউল্লাহ কাসুরি। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, মুদাসির শহিদ আসলে মুদাসির আহমেদ। লস্কর-ই-তৈবার শীর্ষ স্তরের এই নেতা অপারেশন সিঁদুরে মারা গিয়েছেন।
লস্কর প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ সইদের ছেলে সন্ত্রাসবাদী হিসেবে চিহ্নিত তালহা সইদকেও ওই সভায় ভারত-বিরোধী স্লোগান তুলতে দেখা গিয়েছে। ২০২৪ সালে পাকিস্তানের লোকসভা নির্বাচনে লাহোরের একটি আসনে লড়েও হেরে গিয়েছিলেন তালহা। এর আগে পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফ জঙ্গিদের মদত দেওয়ার কথা স্বীকার করে নেন। এক সাক্ষাৎকারে আসিফ বলেন, ‘আমরা এই নোংরা কাজ তিন দশক ধরে করছি আমেরিকা, ব্রিটেন-সহ পশ্চিম দুনিয়ার জন্য।’ পাক মন্ত্রী দাবি করেন, লক্সর-ই-তৈবার আর কোনও অস্বস্তিই নেই। তিনি বলেন, ‘লস্কর-ই-তৈবা পুরোনো নাম। এর কোনও অস্বস্তি নেই।’
‘অপারেশন সিঁদুর’-এ ভারতের হামলায় একাধিক পাকিস্তানি জঙ্গির মৃত্যু হয়েছিল বলে জানায় ভারতীয় সেনা। সেই জঙ্গিদের শেষকৃত্যে হাজির থাকতে দেখা যায় পাক সেনা এবং পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের। পরবর্তীতে ভারতীয় সেনা মোট পাঁচ জন পাকিস্তানি শীর্ষ আধিকারিকের নাম, ছবি প্রকাশ করে। জঙ্গিদের শেষকৃত্যে ছিলেন পাক সেনার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফায়াজ হোসেন শাহ সহ আরও কয়েকজন সেনা-পুলিশ কর্তা। ফায়াজ লাহৌরের চার নম্বর কোরের কমান্ডার। এখানেই শেষ নয়, শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে দেখা যায় লস্কর-ই-তৈবা জঙ্গি হাফিজ আব্দুল রাউফকে। আমেরিকার তৈরি সন্ত্রাসবাদীদের তালিকায় বিশেষ ভাবে চিহ্নিত তাঁর নাম।