প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার চলাকালীন বেশ কয়েকবার হামলার মুখে পড়েছিলেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ করতে পারেননি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শুল্ক নীতি নিয়ে বিতর্ক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দমনপীড়নের অভিযোগ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়টা একেবারেই ভালো যাচ্ছে না। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সামনে হাজির নতুন সমস্যা। আমেরিকায় ক্রমেই জোরালো হচ্ছে ট্রাম্প-বিরোধী আন্দোলন। অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে লস অ্যাঞ্জেলেসে যে প্রতিবাদ-আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল, ক্রমেই তা দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে।
আয়োজকদের দাবি, ট্রাম্পের ‘স্বৈরাচারী নীতি’র বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। সকলের হাতেই নানা ধরনের পোস্টার। কোনও পোস্টারে লেখা ‘গদি ছাড়ো’, আবার কোনও পোস্টারে লেখা, ‘সংবিধান বাঁচান’। এই আন্দোলনের পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে ‘নো কিংস’। অর্থাৎ, রাজা চাই না! শনিবার ফ্লোরিডার টালাহাসির পুরনো কেপিটল বিল্ডিংয়ের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে হাজারখানেক বিক্ষোভকারী জড়ো হন। ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে শুরু ফ্লোরিডায় নয়, দেশের অন্তত ২১০০ শহরে রাস্তায় নেমেছিলেন সাধারণ মানুষ। অন্তত ১০০-রও বেশি সংগঠন এক ছাতার তলায় এসে এই বিক্ষোভ-কর্মসূচির আয়োজন করেছিল।
নিউ ইয়র্ক, শিকাগো, সিয়াটেল, ডেনভার, সান ফ্রান্সিসকো, ফ্লোরিডা, আটলান্টা-সহ আমেরিকার অন্যান্য বড় শহরেও অভিবাসন এবং ট্রাম্প প্রশাসনের দমননীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখা গিয়েছে। বিক্ষোভের কেন্দ্রস্থল লস অ্যাঞ্জেলেসে ৪০০০ সেনা (ন্যাশনাল গার্ড) এবং ৭০০ মেরিন নামিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। শহরজুড়ে ব্যাপক ধরপাকড় ও আটক অভিযান চলছে। এদিকে শনিবার ছিল ট্রাম্পের জন্মদিন। একই দিনে ছিল আমেরিকান সেনার ২৫০-তম বর্ষপূর্তিও। সেই উপলক্ষে হোয়াইট হাউসের পিছনে কনস্টিটিউশন অ্যাভিনিউয়ে বিশেষ প্রদর্শনী হয়। প্রদর্শনী চলাকালীন ওয়াশিংটনের লোগান সার্কলেও অন্তত ২০০ জন মানুষ জড়ো হয়ে ট্রাম্প-বিরোধী স্লোগান তোলেন।
সপ্তাহখানেক আগেই আমেরিকায় অবৈধভাবে বসবাসকারী ভিনদেশের নাগরিকদের চিহ্নিত করতে পদক্ষেপ শুরু করে ট্রাম্প প্রশাসন। লস অ্যাঞ্জেলেস-সহ ক্যালিফর্নিয়ার বিস্তীর্ণ অংশে মার্কিন অভিবাসন এবং শুল্ক দপ্তরের (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট বা আইসিই) আধিকারিকেরা হানা দেন। গ্রেপ্তার করা হয় হাজার হাজার মানুষকে। নথিহীন অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হতেই বিভিন্ন অঞ্চলের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পাল্টা ন্যাশনাল গার্ড নামিয়ে বিদ্রোহ দমানোর চেষ্টা করে ট্রাম্প প্রশাসন। যদিও বিক্ষোভ দমন তো দূর, যত সময় যাচ্ছে, বিক্ষোভের ব্যাপকতা আরও বাড়ছে।
প্রসঙ্গত, গত নভেম্বরে নির্বাচনের প্রচারেই ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, তিনি ক্ষমতায় এলে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করবেন। আমেরিকায় অনুপ্রবেশ বরদাস্ত করা হবে না। অনুপ্রবেশকারীরা যদি নিজেদের দেশে ফিরে না যান, তা হলে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছিল ট্রাম্প সরকার।