ইরানের এক ম্যারাথনে হিজাব ছাড়া দৌড়নো কয়েক জন মহিলাকে কেন্দ্র করে নতুন বিতর্ক। হিজাব আইন বহাল থাকলেও কেন তাঁদের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দেওয়া হল— এই প্রশ্ন তুলে আয়োজকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির বিচার বিভাগ।
ইরানের দক্ষিণ উপকূলের কিশ দ্বীপে আয়োজিত একটি ম্যারাথনে ২০০০ মহিলা এবং ৩০০০ পুরুষ আলাদা বিভাগে দৌড়ান। তবে মহিলাদের দৌড়ের ছবি প্রকাশ্যে আসতেই দেশজুড়ে শুরু হয় বিতর্ক। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে মহিলাদের হিজাব পরা বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু বাস্তবে বহু মহিলা হিজাব না-পরেই দৌড়ান। শুধু তাই নয়, অনেকের মাথায় কোনও রকম আবরণও ছিল না, যা ইরানের কঠোর পোশাকবিধির সরাসরি লঙ্ঘন হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনাই ম্যারাথন কেন্দ্র করে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
Advertisement
ঘটনাটি সামনে আসতেই দেশজুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। ইরানের বিচার বিভাগের ওয়েবসাইট জানায়, ম্যারাথনের দুই আয়োজকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে তাঁদের আটক করা হয়েছে। পশ্চিম এশিয়ার শিয়া অধ্যুষিত এই দেশে মহিলাদের জন্য কঠোর পোশাকবিধি প্রচলিত, যার নিয়ম অনুযায়ী জনসমক্ষে সব সময় হিজাব পরা বাধ্যতামূলক। আইন ভঙ্গ করলে রয়েছে কঠোর শাস্তির বিধানও। এই পোশাকবিধিকে কেন্দ্র করে অতীতেও বহুবার ইরানজুড়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।
Advertisement
অতীতেও হিজাব না-পরে বাইরে বেরোনোর ‘অপরাধে’ ইরানের মহিলাদের নানা রকম কড়া শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে। ২০২২ সালে তরুণী মাহসা আমিনিকে হিজাব সঠিকভাবে না পরার অভিযোগে আটক করেছিল নীতিপুলিশ, আর গ্রেপ্তার হওয়ার মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশি হেফাজতে তাঁর মৃত্যু ঘটে—এর পর সারা ইরান জুড়ে তীব্র প্রতিবাদ হয়েছিল। গত বছরও পোশাক-ফতোয়ার বিরোধিতায় ইসলামিক আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী আহু দারইয়াই প্রকাশ্যে অন্তর্বাস পরে হাঁটার সাহসিকতা দেখিয়েছিলেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকেই তাঁকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ।
ম্যারাথন ঘিরে ইরানে দেখা দিয়েছে তীব্র মিশ্র প্রতিক্রিয়া। পোশাকবিধি শিথিলের পক্ষে থাকা নাগরিকেরা হিজাব ছাড়া দৌড়নো মহিলাদের সাহসিকতার প্রশংসা করছেন, তাঁদের মতে এটি প্রশাসনের কঠোর নিয়মের বিরুদ্ধে বিরাট প্রতিবাদ। অন্যদিকে, রক্ষণশীল মহলের একাংশের মতে, এই ঘটনা ‘জনসাধারণের শালীনতা লঙ্ঘন’।
Advertisement



