পাকিস্তানের জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করতে ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু করে ভারতীয় সেনা। সেই অভিযান শুরুর পরে ৭-৮ মে রাতে অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির লক্ষ্য করে ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার চেষ্টা করেছিল পাকিস্তানি সেনা। আবার রাজধানী দিল্লিতেও বড়সড় আঘাত হানতে পরমাণু অস্ত্রবহনে সক্ষম শাহিন ব্যালিস্টিক মিসাইল ছুড়েছিল তারা! যা ভারতীয় সেনার দুর্ভেদ্য প্রাচীর ভেদ করতে পারেনি। একটি আঁচড়ও কাটতে পারেনি রাজধানীর বুকে। সূত্রে খবর, এমনটাই জানানো হয়েছে সেনাবাহিনীর তরফে। পাশাপাশি এই বার্তাও দেওয়া হয়েছে যে, পাকিস্তান বা অন্য কোনও দেশ যতই আণবিক অস্ত্রের আস্ফালন দেখাক, মুহূর্তের মধ্যে তা রুখে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে ভারতের আছে।
ভারতের অপারেশন সিঁদুরে পাকিস্তানে গুঁড়িয়ে যায় একের পর এক জঙ্গিঘাঁটি। নিকেশ হয় শতাধিক জেহাদি। যার বদলা নিতে ভারতে হামলার ব্যর্থ চেষ্টা করে পাক সেনা। সোমবার এমনটাই জানালেন সেনাবাহিনীর ১৫ নম্বর ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) মেজর জেনারেল কার্তিক সি শেষাদ্রি। তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা স্বর্ণমন্দিরকে আধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির ছাতায় ঢেকে ফেলেছিলাম।’’
তাই সেখানে আঁচড় কাটতে পারেনি। সোমবার সেনা আধিকারিক কার্তিক জানিয়েছেন, ভারতে নির্দিষ্ট কোনও নিশানা পাকিস্তানের ছিল না। তাই তারা নাগরিকস্থল নিশানা করার চেষ্টা করেছিল। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা জানতাম যে পাকিস্তানের নির্দিষ্ট লক্ষ্য নেই। তাই মনে করেছিলাম যে, তারা ভারতীয় সেনাঘাঁটি, নাগরিক এমনকি, ধর্মীয় স্থান লক্ষ্য করে হামলা চালাতে পারে।’’
প্রসঙ্গত পহেলগামে নৃশংস জঙ্গি হামলার বদলা নিতে ৬ মে মধ্যরাতে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি জঙ্গি ঘাঁটিতে আঘাত হানে অপারেশন সিঁদুর। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় লস্কর-ই-তইবা, জইশ-ই-মহম্মদ ও হিজবুল মুজাহিদিনের ঘাঁটি। জঙ্গিদের জন্য প্রাণ কেঁদে ওঠে ইসলামাবাদের। পাল্টা বদলা নিতে ৭ মের রাতে ভারতের সীমান্তবর্তী ১৫টি শহরকে টার্গেট করে পাক সেনাবাহিনী। এইসব শহরকে লক্ষ্য করে বৌ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার চেষ্টা করেছিল পাক সেনা। সেই হামলা রুখে দেয় রাশিয়ার এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ও দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ‘আকাশতীর’ মিসাইল সিস্টেম। এক রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতীয় সেনা ভিডিও প্রকাশ করে জানিয়েছে, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে পাকিস্তান নাকি শাহিন সিরিজের ব্যালিস্টিক মিসাইল, চিনের এ-১০০, ফাতেহ ১,২-সহ অন্যান্য ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল। এই শাহিন মিসাইলের টার্গেট ছিল দিল্লির একটি বিশেষ স্থান। কিন্তু ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘লৌহবর্ম’ ভেদ করতে পারেনি সেই মিসাইল।
সেনা জানিয়েছে, এভাবে পাক সেনাবাহিনীর সমস্ত হামলাই ভারতের শক্তিশালী ও আধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে প্রতিহত করেছে। শুধু শত্রুপক্ষের আক্রমণ রুখে দেওয়াই নয়, কোথায়, কখন আঘাত হানতে হবে, গোয়েন্দা তথ্য সুরক্ষিত রাখতে হবে এটাই ছিল ভারতের নয়া রণকৌশল। তবে সমর বিশ্লেষকরা বলছেন, পাক সেনার এই পরমাণু অস্ত্রবহনে সক্ষম শাহিনের ব্যবহার বড় বার্তা। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অস্ত্রের ব্যবহার করে পাকিস্তান বুঝিয়ে দিয়েছে, তাদের সার্বভৌমত্বে আঘাত হানলে এবং দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে তারা পারমাণবিক অস্ত্র প্রয়োগে পিছপা হবে না।
কিন্তু কী সেই পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র? জানা গিয়েছে, এটি একটি মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল। যা ২ হাজার ৭৫০ কিমি পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম। ২০১৫ সালের ৯ মার্চ পাকিস্তান প্রথম এর পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করেছিল। পাক সেনার কাছে এই ক্ষেপণাস্ত্রই আপাতত সবচেয়ে দীর্ঘ পাল্লার।
যদিও অপারেশন সিঁদুরের পর জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাফ জানিয়ে দেন, পরমাণু হামলার হুঁশিয়ারি দিয়ে ভারতকে চোখ রাঙানো যাবে না। এরকম কিছু হলে ভারতীয় সেনা মোক্ষম জবাব দিতে প্রস্তুত। ভারতের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সমস্ত আঘাত প্রতিহত করে পালটা মার দেবে।