স্নেহাশিস সুর, বাকু –
পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেউচা পাচামি কয়লা প্রকল্প রূপায়ণের দিকে আরেকটা বাধা পেরলো। বর্তমানে আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৯-এ ‘জাস্ট ট্রানজিশন’ বিষয়ে ভারত সরকার তার যে মনোভাব বা নীতি ব্যক্ত করেছে, সেই দিক থেকে এই প্রকল্প রূপায়ণে কোনও বাধা আসবে না।
‘জাস্ট ট্রানজিশন’ নীতিতে পরিবেশের কথা মাথায় রেখে জ্বালানির উৎস হিসেবে কয়লার ব্যবহার পর্যায়ক্রমে কমিয়ে ফেলতে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু বাকুর রাষ্ট্রসঙ্ঘের জলবায়ু সম্মেলনে এ বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভারত সহ উন্নতিশীল দেশের পক্ষে এখনই কয়লার ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব নয়। উন্নত দেশগুলি এ ব্যাপারে যে ব্যাপক চাপ দিচ্ছে, সেটা বাস্তবসম্মত নয় এবং কয়লা ব্যবহার বন্ধের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবের কথা ভুললে চলবে না। ভারত দ্যর্থহীন ভাষায় এ ব্যাপারে উন্নত দেশগুলির মনোভাবের কড়া সমালোচনা করে বলেছে, তাদের মাত্রাহীন কার্বন ব্যবহারের ফলে পরিবেশের যে ভয়ানক ক্ষতি হয়েছে, তার মূল্য উন্নত দেশগুলিকেই চোকাতে হবে— উন্নতিশীল দেশের প্রতি সেই বোঝার ভার চাপানো ঠিক নয়। সেই সঙ্গে ভারত এও জানিয়ে দিয়েছে যে, কয়লার ব্যবহার বন্ধের বিষয়টি তার জলবায়ু পরিবর্তন রোধ তথা পরিবেশ রক্ষা সংক্রান্ত ন্যাশনাল ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন বা এনডিসি এবং জাতীয় প্ল্যানে বা এনএপি’তে এখনই অন্তর্ভুক্ত করার কথা ভাবছে না।
সুতরাং জ্বালানি হিসেবে কয়লার ব্যবহার বন্ধ করার কোনও সিদ্ধান্ত যে ভারত সরকার এখনও নিচ্ছে না, সেটা পরিষ্কার হয়ে যাওয়াতে পশ্চিমবঙ্গে দেউচা পাচামি কয়লা প্রকল্পের রূপায়ণে এই বিষয়ে ভারত সরকারের দিক থেকে আর কোনও বাধা আসবে না। বীরভূমে অবস্থিত এই প্রকল্পে মাটির নিচে ২১০২ টন কয়লা জমা আছে। সেদিক থেকে দেউচা পাচামি পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় কয়লা ভাণ্ডার। কেন্দ্রীয় সরকারের এই মনোভাবে নিঃসন্দেহে কেন্দ্রের কাছ থেকে এই প্রকল্পের এই বিষয়ে কোনও বাধা আসবে না। এই প্রকল্প এখন অন্যান্য বিষয়ে সঙ্গতি বা অনুমোদনের জন্য দরখাস্ত করতে পারবে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার শিল্প-বাণিজ্যের প্রসারে যে সামগ্রিক পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে এই প্রকল্পটির ক্ষেত্রে কেন্দ্রের এই মনোভাব নিঃসন্দেহে অনিশ্চয়তা কাটাবে এবং এক ব্যাপক বিনিয়োগের সম্ভাবনা দেখা দেবে। রাজ্যের শিল্পবাণিজ্যের প্রসারে এটা ব্যাপক সহায়ক হবে।
আগামী দিনে কার্বন পরিমণ্ডলে উন্নত এবং উন্নতিশীল দেশের জায়গা পাওয়ার ভাগাভাগি নিয়ে ভারত সোচ্চার হয়েছে এবং উন্নতিশীল দেশ যাবে আরও বেশি জায়গা পায়, তার জন্য দর কষাকষি করছে। ভারত আরও বলেছে, পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি জোগাড় করতে যে ব্যাপক অর্থের প্রয়োজন তা উন্নত দেশগুলিকেই দিতে হবে কারণ এতদিন তাদের শিল্পোন্নয়নের নামে লাগামছাড়া পরিবেশ দূষণের ফলেই আজ পৃথিবীর এই অবস্থা। তাই এর মূল্য চোকাতে হবে উন্নত দেশগুলিকেই।
Advertisement
Advertisement
Advertisement



