মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে সশরীরে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের তিন সদস্যের বেঞ্চ। আগামী ২৪ জুন এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদার বলেন, ‘পরবর্তী শুনানির আগে হাসিনার ঢাকার বাড়ি সুধা ভবনে চিঠি পাঠিয়ে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ জানিয়ে দিতে হবে। নির্দেশের কথা জানিয়ে খবরের কাগজে বিজ্ঞপ্তিও দিতে হবে।’
সোমবারই হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে ট্রাইব্যুনালে। হাসিনার পাশাপাশি প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদার ছাড়া ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের পাশাপাশি নাম রয়েছে পুলিশের তৎকালীন আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আসামি। তাঁদের মধ্যে মামুন ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। শেখ হাসিনা এবং আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে গত ১ জুন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আদালতে বলেন, ‘শেখ হাসিনা এবং আসাদুজ্জামান খান কামালের ঠিকানায় গিয়ে পুলিশ তাঁদের পায়নি। তাঁরা দেশের বাইরে আছেন বলে খবর মিলেছে। এই অবস্থায় নিয়ম অনুযায়ী পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাঁদের হাজির হতে বলতে হবে।’
একটি বাংলা এবং একটি ইংরেজি দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁদের ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
হাসিনা অবশ্য আগেই এই বিচারকে প্রহসন আখ্যা দিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি ও তাঁর দল ওই শুনানি প্রক্রিয়া বয়কট করবেন। আসাদুজ্জামান খান একটি সংবাদ মাধ্যমকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি এই বিচার মানি না। পুলিশ, সেনাকে গুলি চালানোর নির্দেশ সরকার দেয়নি। তারা ফৌজদারি দণ্ডবিধি মেনে আত্মরক্ষার্থে গুলি চালাতে বাধ্য হয়।’ আওয়ামী লিগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াবদুল কাদের একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘শুনানি বর্জন করে আওয়ামী লিগ রাজপথে থাকবে।’
জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি সহ কয়েকটি দল নির্বাচনের আগেই শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচার শেষ করার দাবি জানিয়ে আসছে। আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল সম্প্রতি এক ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনামলেই এই বিচার শেষ হবে বলে তিনি আশা করছেন।’