ফের দিল্লি থেকে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থকদের জন্য দলের নেত্রীর অডিও বার্তা। এবার প্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাক। দলের কর্মী সমর্থকদের কাছে বাংলাদেশ জুড়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানালেন শেখ হাসিনা। অডিও বার্তায় কর্মী-সমর্থকদের প্রতি হাসিনা বলেছেন, ‘জনগণ আমাদের সঙ্গে রয়েছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়েই এই দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। প্রত্যেকে প্রস্তুত হয়ে যান। যাঁর যা কিছু রয়েছে, তা নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। প্রচুর মোকাবিলা করতে হবে। এরা দেশের শত্রু, জাতির শত্রু, জনগণের শত্রু! গণশত্রুদের হাত থেকে দেশ রক্ষার জন্য যা কিছু আছে, তা নিয়ে ময়দানে নামেন, এটাই এটাই আমার নির্দেশ।”
এই বার্তার পাশাপাশি, শেখ মুজিবুরের সমাধিক্ষেত্র নিয়েও এক বার্তা দিয়েছেন মুজিবুর কন্যা।তিনি বলেছেন, মুজিবুরের স্মৃতি ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটি ধ্বংসের পর এরপর বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামি দলের নিশানায় রয়েছে মুজিবুর রহমানের সমাধিক্ষেত্র। সমাধি রক্ষায় আওয়ামী লীগের সমর্থক-কর্মীদের সতর্ক করেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
হাসিনার এই আহ্বানের পরই বাংলাদেশ জুড়ে হাওয়া বদলের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দিকে দিকে শুরু হয়েছে প্রতিরোধ। বেশ কয়েক জায়গায় আক্রান্ত বৈষম্য বিরোধী জোটের নেতা কর্মীরা। গাজীপুরে জনতার হাতে মার খেয়েছেন সমন্বয়করা। গুরুতর জখম কুড়ি জনেরও বেশি। তাঁদের বেশিরভাগ জামাত ও ছাত্র আন্দোলনের লোক বলে প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে।
বুধবার রাত থেকে বাংলাদেশের একাংশে নতুন করে অশান্তি ছড়িয়েছে। ঢাকার ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩২ নম্বরের বাড়িতে প্রথমে ভাঙচুর চালানো হয়। পরে ক্রেন দিয়ে ওই বাড়ি গুঁড়িয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। তারপরই রুখে দাঁড়ানোর ডাক হাসিনার।
ফরিদপুরের গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মস্থানেই রয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি ক্ষেত্র। শনিবার আওয়ামী লীগ নেত্রীর এই সতর্কবার্তা পাওয়ার পর মাঠে নেমে পড়েছে দল। দলের সব স্তরে জানানো হয়েছে, যে কোনও মূ্ল্যে বঙ্গবন্ধুর সমাধিক্ষেত্র রক্ষা করতে হবে। দলের ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, শরিয়তপুর, নড়াইল, খুলনার নেতা কর্মীদের প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
হাসিনা দলের মধ্যে প্রচার করা বার্তায় এক ‘জরুরি গোপন সংবাদ দিয়েছেন । সেখানে উল্লেখ করা করেছেন, বিএনপি জামাত সমন্বয়করা বরিশাল-সহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে দশ হাজার লোক নিয়ে পৌঁছাবে গোপালগঞ্জে। সেখানে বিএনপি-জামাতের লোকদের বাড়িতে অবস্থান করে একযোগে গভীর রাতে হামলা চালাবে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে। সতর্ক থাকার আহবান জানাচ্ছি দেশবাসীকে।’ হাসিনার এই বার্তা পাওয়ার পর দলের সব ইউনিটকে প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে আওয়ামী লীগের তরফে।
গত বছর ৫ অগাস্ট গণ-অভ্যুত্থানের দিন মুজিবের ধানমন্ডির বাড়ির পাশাপাশি টুঙ্গিপাড়ার সমাধিতেও হামলার চেষ্টা হয়। সেনা বাহিনীর হস্তক্ষেপে বড় কোনও অঘটন ঘটেনি। আবার টুঙ্গিপাড়াতেই তখন সেনার অভিযান ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে পড়েছিল।
উল্লেখ্য, গত বুধ ও বৃহস্পতিবার ঢাকায় ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়িটি ভাঙা শুরু হলে টুঙ্গিপাড়াতেও উত্তেজনা ছড়ায়। সমাজমাধ্যমে আগে থেকেই কিছু লোক মুজিবুরের সমাধি ভাঙার পক্ষে জনমত তৈরি করতে থাকে। তাদের অন্যতম বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী মেয়ে জামাই ফাহাম আবদুস সালাম। সমাজমাধ্যমে তিনি লেখেন শেখ হাসিনা পাবলিক অ্যাড্রেস করলে ফ্যাসিস্ট বিরোধীদের টুঙ্গিপাড়ার সমাধিক্ষেত্র বুলডোজ করার ডাক দেওয়া উচিত।