ব্রাজিলের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসেনারোর বিরুদ্ধে চলতে থাকা বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ট্রাম্প। শুধু তাই-ই নয়, ব্রাজিল থেকে আমেরিকায় রপ্তানি হওয়া পণ্যের উপর অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুল্ক কার্যকর হবে আগামী ১ অগস্ট থেকে। এর ফলে ব্রাজিলীয় পণ্যে মোট শুল্ক দাঁড়াবে ৬০ শতাংশ।
হোয়াইট হাউস থেকে পাঠানো এক চিঠিতে ট্রাম্প জানান, ব্রাজিলের বর্তমান সরকার ‘মিথ্যা অভিযোগে’ প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বোলসেনারোর বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া চালাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘শ্রদ্ধেয় বোলসেনারোর সঙ্গে যে আচরণ করা হচ্ছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। বিচারপ্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত।’
ব্রাজিলের উপর শুল্ক আরোপের নেপথ্যে ‘অন্যায্য বাণিজ্য ঘাটতি’-র বিষয়টিও তুলে ধরেন ট্রাম্প। তাঁর অভিযোগ, ব্রাজিল দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকায় বেশি পণ্য রপ্তানি করলেও আমেরিকান পণ্যের জন্য তাদের বাজারে জায়গা কম। শুল্ক আরোপ করে সেই ভারসাম্য আনার দাবি তুলেছেন তিনি।
শুধু ব্রাজিলই নয়, বুধবার আরও ছ’টি দেশের উপর আমদানি শুল্ক চাপানোর ঘোষণা করেন ট্রাম্প। আলজেরিয়া, ইরাক, লিবিয়া এবং শ্রীলঙ্কার পণ্যে ৩০ শতাংশ, ব্রুনেই ও মলডোভার পণ্যে ২৫ শতাংশ, এবং ফিলিপাইনের পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ট্রাম্প জানিয়েছেন, এই শুল্ক নীতির লক্ষ্য আমেরিকার অর্থনীতিকে রক্ষা করা ও বৈদেশিক বাণিজ্যে ‘ন্যায্যতা’ ফিরিয়ে আনা।
ট্রাম্পের ঘোষণার পরেই কড়া জবাব দেন ব্রাজিলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা। সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে লুলা বলেন, ‘ব্রাজিল একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ। আমরা কারও নির্দেশে চলি না।’ তিনি স্পষ্ট জানান, বোলসেনারোর বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া চালাচ্ছে ব্রাজিলের বিচারবিভাগ, প্রশাসন নয়।
২০২২ সালের সাধারণ নির্বাচনে পরাজয়ের পর বোলসেনারো দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁর সমর্থকেরা সংসদ ভবনে হামলার চেষ্টা করলে মামলা হয়। সুপ্রিম ইলেকটোরাল কোর্ট তাঁকে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’-এর দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে এবং আগামী আট বছর তাঁকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে নিষিদ্ধ করে।
ট্রাম্প তাঁর চিঠিতে অভিযোগ করেন, ব্রাজিলে আমেরিকানদের বাক্স্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে। এর প্রেক্ষিতে লুলা পাল্টা অভিযোগ করেন, ‘মার্কিন সমাজমাধ্যম সংস্থাগুলি বারংবার বর্ণবৈষম্য ও হিংসা ছড়ানোর কাজ করেছে, সেগুলির বিরুদ্ধে আদালতের রায়ই উপযুক্ত।’ পাশাপাশি তিনি দাবি করেন, গত ১৫ বছর ধরেই বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে ব্রাজিলের, আমেরিকার নয়।
লুলা হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান, একতরফাভাবে ব্রাজিলের উপর শুল্ক চাপানো হলে তাঁদের পারস্পরিক অর্থনৈতিক আইন অনুযায়ী উপযুক্ত পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।