পাকিস্তানের এফ-১৬ বিমান ব্যবহারের শর্তভঙ্গ যাচাই করবে আমেরিকা

ভারতে সাম্প্রতিক বিমান হানা চালানোর সময় পাকিস্তান আমেরিকা থেকে শর্তসাপেক্ষে কেনা এফ-১৬ বিমান ব্যাবহার করেছিল।

Written by SNS March 3, 2019 7:38 am

পাকিস্তানি এফ-১৬ (Photo: iStock)

নিজস্ব প্রতিনিধি- ভারতে সাম্প্রতিক বিমান হানা চালানোর সময় পাকিস্তান আমেরিকা থেকে শর্তসাপেক্ষে কেনা এফ-১৬ বিমান ব্যাবহার করেছিল। তারা যে এফ-১৬ বিমান ব্যাবহার করেছিল তার প্রমান ইতিমধ্যেই দিয়েছে ভারত। শনিবার এই বিষয়ে আরও তথ্য চেয়েছে মার্কিন প্রশাসন, কারন ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের এফ-১৬ ব্যাবহার আমেরিকা থেকে বিমানটি কেনার সমায় দু’দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির শর্তাবলির পরিপন্থী। পাকিস্তান যদিও অস্বীকার করে আসছে যে তারা ভারতে এফ-১৬ বিমান পাঠায়নি, কিন্তু ভারত ইতিমধ্যেই যে প্রমাণগুলি দাখিল করেছে, তাতে নড়েচড়ে বসেছে আমেরিকাও। সেই জন্য তারা এ বিষয়ে আরও তথ্য জানতে চেয়েছে শনিবার।

কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সন্ত্রাসবাদী হামলার পর ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হানা চালিয়ে ধ্বংস করেছিল সেখানকার জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির এবং সেই হানায় একাধিক জঙ্গি মারা গিয়েছিল বলে দাবি করেছিল ভারত। পাকিস্তান প্রত্যাঘ্যাত করতে গিয়ে ভারতীয় আকাশসীমা লঙ্ঘন করে তাদের এফ-১৬ বিমান পাঠিয়েছিল ভারতের সামরিক ঘাঁটি আক্রমন করতে কিন্তু ভারতীয় বিমান বাহিনী পাকিস্তানের সেই প্রয়াস সফল হতে দেয়নি। ভারতীয় মিসাইলের মারে ভেঙে পড়েছিল পাকিস্তানের এফ-১৬ বিমান। পাকিস্তান অবশ্য তাদের এফ-১৬ বিমান ভারতে পাঠানোর অভিযোগ অস্বীকার করে। কিন্তু পাকিস্তানি বিমান হানার পর ভারতের এয়ার ভাইস মার্শাল আর জি কে কাপুরেক সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, সাম্প্রতিক মিশনে পাকিস্তান তাদের এফ-১৬ বিমানই ব্যাবহার করেছিল যার প্রমাণ আছে ভারতের কাছে। ভারতীয় সীমানার মধ্যে কাশ্মীরের রাজৌরির উত্তরে পাকিস্তানের বিমান হানার পর এএমআর এএএম নামক এয়ার টু এয়ার মিসাইলের টুকরো পাওয়া গিয়েছে, যা প্রমাণ করে পাকিস্তান এফ-১৬ বিমান থেকে ভারতের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে এই মিসাইল ছুড়েছিল, যাকে অকেজো করে দেয় ভারতের প্রতিরক্ষা সিস্টেম। ভারতের এয়ার ভাইস মার্শাল জানিয়েছেন, উক্ত মিসাইল শুধু এফ-১৬ বিমান থেকেই ছোঁড়া যায়। পাকিস্তানের কাছে অন্য কোনও যুদ্ধ বিমান নেই, যেখান থেকে এএমআর এএএম মিসাইল ছুঁড়তে পারে পাকিস্তান। ভারতের তরফে এই অ্যাডভান্সড মিডিয়াম রেঞ্জ এয়র টু এয়র মিসাইলের টুকরো দেখিয়ে অকাট্য প্রমাণ বলে দাবি করা হয়েছে, যার ফলে এটা প্রমাণিত হয় যে, পাকিস্তান এফ-১৬ বিমান ভারতে প্রত্যাঘাতের স্বার্থে ব্যাবহার করেছিল এবং এখানেই সমস্যায় পড়েছে পাকিস্তান। ভারত তাদের এই বিষয়ে যাবতীয় তথ্যপ্রমান ভাগ করে নিয়েছে আমেরিকার আধিকারিকদের সঙ্গেও। শনিবার মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক মুখপাত্র সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান যে এফ-১৬ বিমান ব্যাবহার করেছিল, এই খবরের ব্যাপারে আমরা অবগত আছি, তবে আমরা আরও তথ্য যাচাই করে দেখতে চাই। কারণ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এফ-১৬-এর ব্যবহার নিয়ে চুক্তি ভঙ্গ হয়েছে কিনা, সেটা জানা জরুরি। মার্কিন মুখপাত্র আরও বলেছেন যে, অন্য কোনও দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তির গোপনীয়তার জন্য আমরা এ ব্যাপারে এখনই কোনও পদক্ষেপ করছি না। অন্যসুত্র থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, আমেরিকা পাকিস্তানকে এফ-১৬ বিমান বিক্রি করা নিয়ে যে চুক্তি করেছিল, তাতে অন্যতম শর্ত ছিল আক্রমনের জন্য এফ-১৬  বিমান ব্যবহার করা যাবে না, যাকে বলা হয় ‘নো অফেনসিভ ইউজ’। গত বুধবার পাকিস্তানের দাবি মতো তারা কোনও এফ-১৬ যুদ্ধ বিমান ব্যবহার করেনি। তাদের কোনও বিমানও ভারত ধ্বংস করেছে, এটাও স্বীকার করেনি পাকিস্তান, কারণ পাকিস্তানের তরফে এই স্বীকৃতি তাদের অভিযুক্তের কাঠগড়ায় দাঁর করিয়ে দেবে।

২০১৬ সালে পাকিস্তানকে এফ-১৬ বিমান বিক্রি করার মার্কিন প্রশাসনের সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছিল ভারত। আমেরিকা বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামরিক সরঞ্জাম বিক্রেতা দেশ, কিন্তু তারা পাশাপাশি প্রতিটি সামরিক সরঞ্জাম কিংবা অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে খুব কঠিন চুক্তিতে বেঁধে রাখে ক্রেতা দেশকে, যাতে সেই অস্ত্রের অপব্যবহার না হতে পারে। চুক্তির শর্ত ভঙ্গকে খুব গুরুতর অপরাধ বলে মনে করে আমেরিকা। পাকিস্তানকে আমেরিকার এফ-১৬ বিমান বিক্রির ক্ষেত্রে মূল শর্ত ছিল এই বিমান সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের ক্ষেত্রেই শুধু ব্যবহার করা যাবে। এই ব্যাপারে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনও চুক্তি ভঙ্গ কিংবা এফ-১৬ যুদ্ধ বিমানের অপব্যবহার নিয়ে পদক্ষেপ করার আগে আমেরিকা নিশ্চিত হতে চায় যে পাকিস্তান সত্যি চুক্তি ভঙ্গের দায়ে দোষী, তাই তারা আরও তথ্য যাচাই করে দেখতে চায় বলে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা।