• facebook
  • twitter
Tuesday, 29 July, 2025

অন্যপথে গ্যাংটকে

রংপো থেকে গ্যাংটক আর মাত্র ২৭ কিমি পথ। মাঝে রাণীপুল এলো। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি আবার শুরু হয়েছে। গাড়ি ছুটছে। আজ রাতে গ্যাংটকে গণ্ডগোল হবে না আশা করছি।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

সুব্রত সরকার

চলো মন ভ্রমণে বলে তো বেরিয়ে পড়েছি। যাব নর্থ সিকিমের দুর্গম এক উপত্যকা— জঙ্গু ভ্যালি। বছর দুয়েক আগে জঙ্গু উপত্যকায় যাব বলেও কাছ থেকে ফিরে এসেছিলাম। সেবার নর্থ সিকিমে ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়েছিল। চুংথাং-এ ভেঙে পড়েছিল গোটা জলাধার। ক্লাউড বার্স্ট করেছিল। ভেসে গিয়েছিল ফৌজি ব্যারাক। সাধারণ মানুষের বাড়িঘর, জনপদ। অনেক প্রাণহানি ও বিপুল বিপর্যয়ে কাবু হয়ে গিয়েছিল সিকিম-সহ কালিম্পং জেলা।

এবার আবার যাব বলে মুসাফিরের জোব্বা চাপিয়ে লোটাকম্বল গোছাচ্ছি, খবর এলো শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক সড়কপথে সরাসরি যাওয়া যাবে না। বিকল্প পথে যেতে হবে অনেক ঘুরে। আমি গ্যাংটক হয়ে নর্থ সিকিমে ঢুকব। সেই গ্যাংটকে পৌঁছতেই একটা দিন চলে যাবে।

জাতীয় সড়ক ১০-এর কাজ হবে টানা তিনদিন। বর্ষার আগে প্যাচআপ যাকে বলে। এ পথ ধরেই গ্যাংটকে যেতে হত। এখন বিকল্প পথে অনেক ঘুরে গ্যাংটকে গাড়ি যাবে। পৌঁছতে সময় লাগবে প্রায় দ্বিগুণ। বিকল্প পথ কী, তাও জেনে গেলাম— শিলিগুড়ি থেকে সেবক, বাগরাকোট, ওদলাবাড়ি, গরুবাথান, লাভা, রিশপ, আলগাড়া, রামধুরা, রংপো হয়ে গ্যাংটক!

দার্জিলিং মেলে নিউ জলপাইগুড়ি নেমে চটজলদি শেয়ারের টেম্পোতে চলে গেলাম SNT (Sikkim National Transport) বাস ডিপোতে। ঢুকে জানলাম, আজ কোনও বাস গ্যাংটকে যাবে না। অগত্যা শেয়ার জিপের খোঁজ— দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে একটা সিট যোগাড় করলাম ড্রাইভার কেবিনে।

শেয়ারের সুমো যাত্রী বোঝাই হতেই ছেড়ে দিল। শিলিগুড়ি শহর ছাড়িয়ে শালুগাড়া, বেঙ্গল সাফারি পেরিয়ে সেবকের দিকে গাড়ি ছুটছে। মেঘলা আবহাওয়া। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে, আবার থেমেও যাচ্ছে। আমার পাশের যাত্রী রংপো যাবেন। কলেজের ছুটিতে বাড়ির পথে। তিনি ফিজিক্সের অধ্যাপক বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশনের। সুভদ্র পাহাড়ি যুবক— সুদীপ সুব্বা।

সেবকের আগে পথের ধারের পান্থশালায় জলখাবারের ছোট্ট বিরতি। গরম রুটি, আলু- মটরের কারি, ওমলেট ও চা খেয়ে নাস্তা ভালোই হলো। শেয়ারের সুমো এবার দৌড়তে শুরু করেছে। নাস্তা খেয়ে নিয়ে ড্রাইভারও চাঙ্গা।

আমি খুব উৎসাহ নিয়ে বিকল্প পথে গ্যাংটক যাওয়াটাকে উপভোগ করতে চাইছি। কারণ বিকল্প পথটা আমার অনেক দিনের চেনা। চিরসুন্দর এক সবুজ পথ। ডামডিম মোড় থেকে গরুবাথান, পাপড়ক্ষেতি, লাভা, রিশপ, রিকিসুম, আলগাড়া হয়ে যাওয়াটা দারুণ উপভোগ্য সড়ক-সফর।

সেবক করোনেশন সেতু দিয়ে বাগরাকোটের রাস্তায় উঠে সুমো টপ গিয়ারে ছুটছে। এই রাস্তাটা চমৎকার। যেমন চওড়া, তেমন নিরিবিলি। পথের ধারে অনেক চা বাগান। নদী পড়ল লিস। তারপর বাগরাকোট শহিদ মোড় আসতেই গাড়ির চালকের হঠাৎ মত বদল হয়ে গেল, সে বলল, ‘আজ নতুন পথে গ্যাংটকে যাব। শর্টকাট হবে।’ নতুন পথ হলো— বাগরাকোট থেকে বিশাল এক ঝুলন্ত পথ তৈরি হয়েছে অতি সম্প্রতি, একদম নাথুলা সীমান্ত পর্যন্ত। সে পথ দিয়ে লোলেগাঁও লাভা, আলগাড়া, রামধুরা হয়ে রংপো পৌঁছে যাওয়া যাবে। আমার তো আরও আনন্দ, আরও মজা। এ পথ তৈরি হওয়ার সময় একবার এসেছিলাম, তখন আমি চুইখিম যাচ্ছিলাম। আজ সে পথ তৈরি হয়ে গেছে। নতুন পথে সফর করব, অজানার আনন্দ উপভোগ করব। মুসাফির মন আমার উৎফুল্ল হয়ে গেল আরও।

বাগরাকোট চা বাগান, জনপদ ও ফৌজি ব্যারাক পেরিয়ে আমাদের সুমো ধীরে ধীরে ঝুলন্ত সেতুপথে উঠতে শুরু করেছে। অপূর্ব লাগছিল সে সময় এ পথটাকে। বৃত্তাকারে ঘুরে ঘুরে গাড়ি ওপরে উঠছে। সমতল থেকে অনেকটা ওপরে ঝুলন্ত সেতুতে গাড়ি উঠে আসতেই অনুরোধ না করে পারলাম না। বললাম, ‘ভাইয়া একটু রোখো। দো-চারটো ফোটো নেব।’ অল্পবয়সী গাড়ির চালক পথের ধারে গাড়ি থামাল। আমরা সবাই নেমে চারপাশের দৃশ্য উপভোগ করছি। মনের সুখে ছবি তুলছি। সুদীপ সুব্বার সঙ্গে সেলফি তুললাম। হঠাৎ কোথা থেকে একজন পুলিশ এসে চিৎকার করে বললেন, ‘এখানে গাড়ি দাঁড়ানো নিষেধ। ছবি তুলবেন না। চলে যান। চলে যান।’

আমরা হুড়মুড় করে গাড়িতে উঠে বসতেই গাড়ি ছেড়ে দিল। ছবি যা তোলার তা তোলা হয়ে গিয়েছিল। দৃশ্য দেখার আনন্দও পেয়ে গিয়েছিলাম সকলে। সত্যিই এই উড়ন্ত-ঝুলন্ত সেতু থেকে বাগরাকোট সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলটাকে অপূর্ব দেখতে লাগছিল। এই নতুন পথে ভ্রমণের শুরুটাই মনকে মাতিয়ে তুলল।

আবার গাড়ি ছুটতে শুরু করেছে। রাস্তা তো মসৃণ, চমৎকার নির্জন। কিছুটা পথ এগিয়ে এসে ডানদিকে একটা রাস্তা চলে গেছে, লেখা দেখলাম ইয়েলবং। সেই ইয়েলবং! চুইখিম থেকে হেমন্ত খাওয়াসের স্কুটিতে করে এসেছিলাম। তখন তো এমন সুন্দর রাস্তা হয়নি। পাহাড়-জঙ্গলের এবড়োখেবড়ো পথ দিয়ে পৌঁছেছিলাম ইয়েলবং। তারপর ইয়েলবংয়ের আবিস্কারক ফ্রানচিস রাইয়ের সঙ্গে কত গল্প, কত কথা। পায়ে পায়ে একটু গ্রাম ভ্রমণও করে নিয়েছিলাম। ইয়েলবংয়ের সেরা আকর্ষণ রিভার ক্যানিয়ন। রংতি নদীর জলস্রোতে পা ডুবিয়ে দুর্গম সুন্দর এক অভিযান শেষে অপরূপ এক গিরিখাত দেখতে পাওয়া যায়। সেবার এই রোমাঞ্চকর ভ্রমণ আমার করা হয়নি। ফ্রানচিস রাই বলেছিল, ‘আপনি নেক্সট টাইমে আসুন। আমি আপনাকে নিয়ে যাব রিভার ক্যানিয়ন ট্রিপে।’ ফ্রানচিসের কথাগুলো মনে পড়ল। সাহস করে এবার একদিন চলে আসতে হবে। এই সব সুখস্মৃতি আজকের যাত্রাপথকে কেমন মন কেমনে ভরিয়ে তুলছে। সত্যিই এ এক স্মৃতিসরণি ধরে যাওয়ার আনন্দ!

ইয়েলবং ছাড়িয়ে একটু এগিয়ে এসেই দেখতে পেলাম চুইখিম। সেই চুইখিম। দু’রাত ছিলাম এই সুন্দর পাহাড়ি গ্রামে। চুইখিম নির্জনতা উপভোগ করার জন্য আদর্শ গ্রাম। পায়ে পায়ে ঘুরে বেড়ালেই গ্রামটাকে দেখা হয়ে যায়। চুইখিমে ছিলাম প্রসূনদার বাড়িতে। ‘পর্যটন’ পত্রিকার প্রসূন চক্রবর্তী। আমার খাওয়া ও ঘুরে বেড়ানোর দায়িত্ব নিয়েছিল হেমন্ত খাওয়াস। সে দু’রাত্রি চুইখিম বাসের স্মৃতি মনের আরশিতে মায়া অঞ্জন মাখিয়ে দিল নতুন করে আজ আবার।

চুইখিমের পর থেকে রাস্তা ঠিক নেই অনেকটা। কাজ চলছে। টাটা সুমো এই ভাঙা পথ দিয়েই এগিয়ে চলল। সামনেই এলো বরবট। চুইখিম থেকে রাতের অন্ধকারে জোনাকির আলোর মত আলো ঝিলমিল বরবটকে সেবার চিনিয়েছিল হেমন্ত। সেই সুদূরের বরবটকে আজ দিনের আলোয় কাছ থেকে দেখলাম।

বরবটের পরে এলো শান্ত সুন্দর গ্রাম নিমবং। নিমবংয়ের কথা শুনেছিলাম হেমন্তর মুখেই। দু’একটা হোম স্টে হয়েছে এখন। রাস্তার ধারে সাইনবোর্ডে লেখা আছে। এসব গ্রামগুলো অজ্ঞাতবাসের দারুণ ঠিকানা। মন ভালো রাখার, মনের শুশ্রূষার জন্য একবার চলে আসতে পারলেই দিল দিওয়ানা।

গাড়ি একটু একটু করে যত এগোচ্ছে, আমি ডাউন মেমোরি লেনের মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছি। মনে পড়ে যাচ্ছে কত সুন্দর সুন্দর সব ভ্রমণের স্মৃতি। পাহাড়ি মানুষগুলোর নাম। সামনেই আসছে কাফের, লোলেগাঁও। কাফেরে সুনীল তামাংয়ের কাছে ছিলাম একরাত। পাইনের জঙ্গলে ঢাকা পথ দিয়ে সুনীলের হোম স্টেতে যাওয়ার মজাই অন্যরকম। বিশেষ শিরোপা পাওয়া সুনীলের হোম স্টে খুব সুন্দর।

লোলেগাঁওয়ের লাকপা শেরপার কথা মনে পড়ল। কত পুরোনো দিনের স্মৃতি। লোলেগাঁও তখন একদম অফবিট ডেস্টিনেশন ছিল। কেউ চিনত না। জানত না। আমরা চারবন্ধু চলে এসেছিলাম। বনবিভাগের বাংলোতে ছিলাম। লাকপার দোকানে খেতাম। ওর দোকানের মোমো, ছাং ও ‘হিট’ বিয়ার ছিল আমাদের প্রিয়। লাকপার তখন বিয়ে হয়নি। পাহাড়ি সুশ্রী সপ্রতিভ কন্যা লাকপা শেরপার সঙ্গে দারুণ বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। সেই বন্ধুত্বের যোগাযোগ আজও আছে। ক’দিন আগেই ফোন করেছিল, ওর মেয়েকে বিশ্বভারতীতে ভর্তি করাতে চায়। নিয়মকানুন জানতে চেয়ে ফোন। যতটুকু যা জানতাম বলে দিলাম। এই লোলেগাঁও থেকে রবিঠাকুরের বিশ্বভারতীতে পড়তে যেতে চায় আমারই বন্ধুর পাহাড়ি কন্যা! জীবনের এই সুসম্পর্কগুলো সুখস্মৃতিময় আনন্দ এনে দিচ্ছে আজকের অন্যপথের ভ্রমণে।

শেয়ারের গাড়ি। লোলেগাঁওতে থামবে না। থামতে বলতেও পারলাম না। একটু থামলে বন্ধুর সঙ্গে দেখা করা হয়তো যেত। থাক! কিছু কিছু না দেখাও জীবনে অন্য মাধুর্য এনে দেয়।

এরপর এলো লাভা। সেই নির্জন রূপসী লাভা আর নেই। লাভা এখন ব্যস্ত জনপদ। যত্রতত্র হোটেল আর ভেজাল হোম স্টেতে ছেয়ে গিয়েছে। পাহাড়ের কত সুন্দর সুন্দর জায়গা আজ এভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তারপর এলো রিকিসুম। দারুণ সুন্দর এক ছোট্ট শান্ত লেপচা গ্রাম। দেখলাম আজও তেমনই নিঝুম সুন্দর রয়েছে। এই গ্রামে বেশ কয়েকবছর আগে পরিবার নিয়ে এসে এক রাত ছিলাম। রিকিসুম নিয়ে লিখেওছি। মনে পড়ে গেল সেই সব স্মৃতি। রিকিসুমের পরেই এলো আলগাড়া। একটু একটু করে এমন সব বহুদিনের চেনা পথের মধ্যে দিয়ে চলে এলাম অনেকটা পথ। বড় ভালো লাগছে এই জার্নিটা। এমন ঘুরপথে কোনওদিনই হয়তো গ্যাংটকে যাওয়া হত না। আজ ঘটনাচক্রে এমন সুন্দর এক ডাউন মেমোরি লেনের যাত্রী হয়ে যাত্রা করছি। পথকে প্রণাম। আমি সামান্য এক পান্থজন। মুসাফির। পথে বেরিয়ে এত পাওয়ার আনন্দ আমাকে বিহ্বল করে দিয়েছে।

চলে এসেছি আলগাড়া। এখান থেকে রাস্তা চারদিকে ছড়িয়ে গেছে। একটা রাস্তা সোজা পেডং হয়ে কালিম্পং চলে গেছে। একটা রাস্তা মাইরুং গাঁও, তেন্দ্রাবং হয়ে ডুকা ভ্যালিতে গিয়ে শেষ হয়েছে। ডুকা ভ্যালির সিলভাস্টার লেপচার কথা মনে পড়ল। ওর হোম স্টেতে ছিলাম সেবার দু’রাত। অন্য একটা পথ ফড়িংগাঁও চলে গেছে। আমরা যাচ্ছি রামধুরার দিকে। সরু রাস্তা। দু’পাশে পাহাড়। শান্ত নিটোল গ্রাম রামধুরা। এখানেও এসে থাকা হয়েছে। চিনতেও পারলাম সেই পাহাড়ি দিদির হোম স্টে ‘রাজা লিম’কে। এগোতে এগোতে পেলাম ইচ্ছেগাঁও। পাহাড়ের ওপর ইচ্ছেগাঁওয়ের হোম স্টেতে পরিবার নিয়ে এসে বেড়িয়ে গিয়েছি অনেক বছর আগে। মনে পড়ল সে সব দিনরাত্রির কথা। সব মনে পড়ে যাওয়া স্মৃতি সব সময় সুখের অনুভূতি এনে দেয় না হৃদয়ে। বরং ভারাক্রান্ত হয়ে যায় বুক। কষ্ট হয়, গোপন কান্না এসে ঝাপসা করে দেয় চোখের দৃষ্টি।

ইচ্ছেগাঁওয়ের পর এলো বারমিক। জলসা বাংলো। বারমিকও খুব সুন্দর পাহাড়ি নির্জনতা নিয়ে সাজানো এক গ্রাম। অনেক হোম স্টে আছে। জলসা বাংলো আগের বার এসে ঘুরে দেখে গিয়েছিলাম। এরপর এলো দাঁড়াগাঁও। এই গ্রামে আমি কোনওদিন এসে থাকিনি। দেখলাম সুন্দর একটা হোম স্টে রয়েছে। সুযোগ করে একবার চলে আসব। এই সব গ্রামগুলোতে এখনো মহার্ঘ নির্জনতা রয়েছে।

আকাশ আজ নীলিমায় নীল তেমন নয়। মেঘ রয়েছে। বৃষ্টিও হচ্ছে বিরতি নিয়ে নিয়ে। দিনের তাপমাত্রা খুব আরামদায়ক। বেলা হয়েছে। সফর করছি অনেকটা সময় হয়ে গেল। মাঝে মাঝে সহযাত্রীর সঙ্গে টুকিটাকি গল্পও করছি। সে আর একটু পরেই নেমে যাবে। ফোনে কথা বলল স্ত্রীর সঙ্গে। ভদ্রমহিলা নিজে গাড়ি নিয়ে রংপো চলে আসছেন। সুদীপকে নিয়ে ফিরবেন। শুনে বেশ ভালো লাগল। সংসারের এই সুখচিত্রগুলো বড় অপূর্ব এবং দামি।

আমার চেনা ও দু’রাত রাত কাটানো আরও একটা সুন্দর গ্রাম এবার চলে এলো— মনসুং। ভীষণ সুন্দর এক গ্রাম। এই গ্রামে বসন্ত তামাংয়ের হোম স্টেতে ছিলাম, সেখান থেকে তিস্তাকে দারুণ সুন্দর লাগে দেখতে। শুধু এই তিস্তার রূপ দেখার জন্যই মনসুং-এ এসে দুটো দিন চুপ করে বসে থাকা যায়।

মনসুংয়ের পর গাড়ি গড়াতে গড়াতে নিচে নেমে এলো। বাংলা-সিকিমের বর্ডার রংপো। বর্ডারের চেক পোস্ট পেরিয়ে একটু এগিয়ে শহরে এসে থামল টাটা সুমো। সুদীপ সুব্বা নেমে যাবেন। দেখলাম রাস্তার ধারেই গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছেন ওঁর স্ত্রী, মা ও ছোট্ট ছেলে। ক্ষণিকের দেখা তাঁদের সঙ্গে। সৌজন্য ও নমস্কার বিমিময় হলো আমাদের। টা-টা করতে করতে এগিয়ে গেলাম।
গাড়ি এবার চেনা রাস্তায় চলতে শুরু করেছে। শিলিগুড়ি থেকে রংপো রাস্তা বন্ধ আছে। রংপো থেকে গ্যাংটক সেই পুরনো পথ। এ পথ খোলা। পথের ধারে চোখে পড়ল সিকিম সরকারের বড় একটা ব্যানার, 50th Statehood Day of Sikkim, 16th May, 1975-16th May, 2025.

বিকেল গড়িয়ে এসেছে। প্রায় সাতঘন্টা হয়ে গেল এই লম্বা সফর। আমার ডাউন মেমোরি লেন আজ এক অনন্য আনন্দ উপহার দিল। আগামীকাল থেকে শুরু হবে আসল ভ্রমণ— যাব গ্যাংটক থেকে মংগন হয়ে জঙ্গু উপত্যকা। আজকের এই অন্যপথে গ্যাংটকে আসাটা দারুণ সুন্দর পথ-ভ্রমণের স্মৃতি হয়ে রয়ে গেল আমার মুসাফির জীবনে।

রংপো থেকে গ্যাংটক আর মাত্র ২৭ কিমি পথ। মাঝে রাণীপুল এলো। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি আবার শুরু হয়েছে। গাড়ি ছুটছে। আজ রাতে গ্যাংটকে গণ্ডগোল হবে না আশা করছি। চটজলদি খুঁজে নিতে হবে একটা পান্থশালা। তারপর রাতটা কাটিয়ে নতুন সকালে নতুন ভ্রমণে চলে যাব নর্থ সিকিমের জঙ্গু উপত্যকায়। এ আমার একলা ভ্রমণ, তাকে করব রমণীয়।