প্রশ্ন: পরপর দু’বছর চ্যাম্পিয়ান হওয়া, কঠিন কাজটা কিভাবে সহজ হলো?
জাহিদ মীর: প্রথমদিন ট্রায়ালেই প্রায় ৪০০ ফুটবলার উপস্হিত হয়েছিল। এত ছেলের মধ্যে সঠিক টিম বেছে নেওয়াটা খুব চাপের ছিল। কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি ৬০জন খেলোয়াড় বাছাই করে নিয়েছিলাম। তার থেকে ৪০ জনে
বেছে নিয়েছি। দল গঠনে ৪০জনের ফুটবলারের নাম নথিভুক্ত করার কাজটা আগে সেরে ফেলি। এরপর সেই স্কোয়াড নিয়ে প্রায় একমাস প্র্যাকটিস সেশন হয়েছে। ছেলেরা কঠিন পরিশ্রম করেছে। আমাদের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন সবরকম সাহায্য করেছে। কৃত্রিম ঘাসের মাঠে খেলা ছিল। আমাদের কৃত্রিম ঘাসের মাঠে একমাসের প্রস্ততির বন্দোবস্ত অ্যাসোসিয়েশন করে দিয়েছিল। প্রেসিডেন্ট,মিষ্টার অঞ্জু গুপ্তা দলের পরিচর্যায়ের গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা নিয়েছেন।ফলে,আমাদের প্রস্ততি ভালো হয়ে ছিল।
প্রশ্ন: সুদেভা দিল্লি এফসির প্রধান কোচ থেকে দিল্লি দলের কোচ হওয়াতে,কতটা সুবিধা হয়েছে?
জাহিদ মীর: দিল্লি লিগের পরিকাঠামোর অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সিনিয়রদের লিগের পাশাপাশি বিভিন্ন বয়সভিত্তিক লিগ আছে। ইয়ুথ ফুটবলে এখানে ফোকাস বাড়ানো হয়েছে। যেমন,অনূর্ধ-১৯ লিগকে দুটো ভাগ করা হয়েছে।
টায়ার -১ ও টায়ার-২। দুটো বিভাগে খেলা হয়। টায়ার-১ ভালো ভালো টিম আছে। কঠিন লড়াই হয়। এখানে কিছু অভিজ্ঞ ফুটবলার খেলে। টায়ার-২’তে আবার বেশ প্রতিভাবান ফুটবলারদের পাওয়া যায়। এই দুটো বিভাগ থেকেই ফুটবলারদের নিয়ে ভালো টিম গঠন করা যাচ্ছে। আমাদের সুদেভা দিল্লি এই লিগে খেলে।ফলে,অধিকাংশ ফুটবলারের খেলা সম্পর্কে আমার একটা ধারনা ছিল।
প্রশ্ন: আপনি সুদেভা দিল্লির কোচ। দলগঠনে আপনার ক্লাবকে প্রাধান্য দেওয়া বা পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠার সম্ভবনা ছিল?
জাহিদ মীর: প্রথমেই বললাম,লিগের খেলা দেখে আমার টিম গড়তে সুবিধা হয়েছে। লিগে ৬/৭টা লোকাল ক্লাবের সঙ্গে.গাড়োয়াল এফসির মতন শক্তিশালী টিম লিগে খেলে। নআমাদের সুদেভা দিল্লি এফসি রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন ডেভলপমেন্ট লিগে খেলেছে। এই টিমের কিছু খেলোয়াড় দিল্লি দলে ছিল। তবে,২০জনের স্কোয়াডে মাত্র ৫জন সুদেভার ফুটবলার জায়গা পেয়েছে। তবেএটা জানা ছিল,ক্লাবের হয়ে খেলা ও রাজ্য দলের হয়ে কাজ করায় পার্থক্য আছে। ক্লাবের ক্ষেত্রে আমাকে দলের মালিকের কাছে কৈফিয়ৎ দিতে হয়। আর, রাজ্য দলের ক্ষেত্রে দায়িত্ব আরো অনেক বেশি। ক্লাবের ক্ষেত্রে কাজ করার সময় পাওয়া যায়। রাজ্য দলের হয়ে কম সময় কাজ করার সুযোগ মেলে। কিন্তু রাজ্যের সম্মানে সাফল্য তুলে আনার দায়বদ্ধতা থাকে। এখানে রাজ্যের সম্মান রক্ষার প্রশ্ন জড়িয়ে থাকে। তাই সর্তকভাবেই কাজ করতে হয়। তা ছিলাম বলেই সুফল পেয়েছি।
প্রশ্ন: ছত্রিশ গড়ের রামকৃষ্ণ মিশন ফুটবল গ্রাউন্ড ভালো ফুটবল খেলতে কতটা সাহায্য করছে?
জাহিদ মীর: জুনিয়র ফুটবলারদের ক্ষেত্রে এই টুর্নামেন্টের অনেক গুরুত্ব আছে। দেশের ভবিষ্যৎ ফুটবলারদের নিজেদের প্রমান করার উপযুক্ত জায়গা। নারাইনপুর মিশনের যে পরিবেশে খেলা হয়, ছেলেদের এই পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার ও এখান থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। আমি আবাসিক অ্যাকাডেমির সঙ্গে যুক্ত আছি। জুনিয়র ছেলেদের মানসিক গঠন ও শিক্ষাগত যোগ্যতায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়াতে, আমাদের দায় থাকে। আর,সর্বদা এই খেলা নিয়ে থাকতে গেলে, একপেশে মনোভাবে বিরক্ত লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে এডুকেশন ‘সহযোগী’র গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা নেয়। বই বন্ধুর মতন হাত বাড়িয়ে দেয়। মিশনের মাঠে খেলার সময় সেই ভাবনাকে মনে করিয়ে দেয়।
প্রশ্ন: একমাস ধরে ৩৬ রাজ্যের জুনিয়র ফুটবলারদের টুর্নামেন্ট সামনে থেকে দেখলেন। ভারতীয় ফুটবল সম্পর্কে কতটা আশাবাদী?
জাহিদ মীর: দেশে জুনিয়রদের লিগ হচ্ছে। প্রতিটা রাজ্যের আবার নিজস্ব বয়সভিত্তিক লিগ চালু হয়েছে। রাজ্যে লিগ চালু হওয়াতে খেলোয়াড়দের পরিবার মাঠে আসছে। নিজেদের সন্তানের টার্গেটের প্রতি নজর রাখতে পারছে। ছেলেরা কঠিন পরিশ্রমে ও নিজেদের সততার মধ্যে রাখলে, উন্নতি কেন হবেনা? ভারতীয় ফুটবল সম্পর্কে আমি বেশ আশাবাদী।
প্রশ্ন: আপনার চ্যাম্পিয়ান দিল্লি দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে আগামীদিনে কারা দেশের সর্বোচ্চ লেভেলে খেলতে পারে?
জাহিদ মীর: আমাদের টিমের ছেলেদের গড় উচ্চতা যথেষ্ট ভালো।অধিকাংশ খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত স্কিল আপনার নজর কাড়বে। আমাদের গোলকিপার করন মাখার টুর্নামেন্টের ‘সেরা গোলকিপা’র হয়েছে। রাউল মিটেই টুর্নামেন্টে সবচাইতে বেশি,৯টা গোল করেছে।আদিত্য অধিকারী ফাইনাল ম্যাচের সেরা হয়েছে। এবং ‘টুর্নামেন্টের সেরা’র পুরস্কারও আদিত্য পেয়েছে।জাজো প্রাসান সদ্য অনূর্ধ-১৯ সাফ গেমসে চ্যাম্পিয়ান ভারতীয় দলের সদস্য ছিল। রাউল,জাজো’রা মণিপুরের হলেও গত ১০বছর ধরে সুদেভা দিল্লির অ্যাকাডেমিতে খেলা শিখছে। এরাই এই টুর্নামেন্টে নজর কেড়েছে। আগামীদিনে এদেরকে দেশের টপ লিগে দেখা যেতেই পারে।
প্রশ্ন: দিল্লি লিগের কথা উঠলেই ম্যাচ ফিক্সিং নিয়ে কথা উঠে যায়। এই ফিক্সিং দিল্লি ফুটবলের ক্ষতি করছে না?
জাহিদ মীর: দিল্লি রাজ্য দল সন্তোষ ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে। জাতীয় গেমসের সেমিফাইনালে হেরে গেছে।স্বামী বিবেকানন্দ জাতীয় লিগ পরপর দু’বার চ্যাম্পিয়ান হলো।কেবল ম্যাচ ফিক্সিং হলে এমন সাফল্য আসতো? ম্যাচ ফিক্সিং নিয়ে অ্যাসোসিয়েশনের চিন্তাভাবনা আছে। অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। ক্লাব ও ফুটবলারদের সাসপেন্ড করেছে। বাংলার বেশকিছু ফুটবলারকে গত মরশুমে সাসপেন্ড করা হয়েছে। আগামীদিনের জন্য নিশ্চয়ই তারা আরো সর্তক হবে।
প্রশ্ন: বাংলার ফুটবলে আগামীদিনে কাজ করার জন্য কতটা আগ্রহ আছে?
জাহিদ মীর: আমি কাশ্মীরের ছেলে হয়ে দু’বছর ধরে দিল্লিতে কাজ করছি। কাশ্মীরের টিম নিয়ে সন্তোষ ট্রফিতে কাজ করেছি। জুনিয়র লিগ খেলতে বাংলায় এসে নৈহাটি স্টেডিয়ামে খেলেছি। আমার সেই অনূর্ধ-১৫ টিমে সুহেল ভাট ছিল। সুহেল মোহনবাগান সুপার জায়েন্টস হয়ে এখন ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছে। ইসফাক আহমেদ ও মেহেরাজউদ্দিন ওয়াডু বাংলার হয়ে খেলে পরিচিতি পেয়েছে। এখন ওনারা কোচিংয়ে সাফল্য পাচ্ছেন। আমিও ওনাদের মত কাশ্মীরের ছেলে। এবং অবশ্যই বাংলায় কাজ করতে পারলে ভালো লাগবে। তবে,এখন আমার সবে ৩০বছর পার হয়েছে। কোচিংয়ে ‘এ’ লাইসেন্স চলছে।এটা শেষ করে,স্বাধীনভাবে কাজ করতে চাই। আরও কোচিং অভিজ্ঞতা বাড়ানো এখন আমার প্রধান লক্ষ্য আছে।