• facebook
  • twitter
Wednesday, 10 December, 2025

ভারতীয় ফুটবলের দৈন্যদশার মাঝে কলকাতায় আসছেন লিওনেল মেসি

লেকটাউনের মোড়ের কাছে একটি মেসির সত্তর ফুটের একটি মূর্তির উদ্বোধন হবে। ওই অনুষ্ঠানে মেসি নাকি থাকবেন। তবে, সশরীরে তিনি থাকবেন না।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

ভারতীয় ফুটবলে যে দৈন্যদশা, তা নিয়ে ফুটবল বিশেষজ্ঞরা কোনওকিছুই ভাবতে সময় নষ্ট করছেন না। নিজেদের কীভাবে উন্নতি করা যায়, সে বিষয়ে কোনও পরিকল্পনাই নেই। এই মুহূর্তে ফিফা র্যা্ঙ্কিংয়ে ১৩৩তম স্থানে রয়েছে ভারত। যত দিন যাচ্ছে, ততই ভারতের ফুটবলে শুধু মরচে পড়ছে না, তলানিতে গিয়ে হাবুডুবু খেতে হচ্ছে। যে দেশে ৫০ হাজার মানুষ বাস করেন, সেই দেশ ফুটবলে বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন দেখা নয়, তাঁরা আগামী বিশ্বকাপে খেলতে নামবেন। আর ভারতীয় ফুটবলের করুণ অবস্থা দেখে আমরা লজ্জবোধ করি না।

কিন্তু বিদেশিদের নিয়ে নানারকম আষাঢ়ে গল্প বানাতে জুরি নেই। গালভরা কথা বলা হয়েছিল আইএসএল ফুটবল থেকে ভারতীয় ফুটবলে উজ্জ্বল অধ্যায় রচনা হবে। সেই উজ্জ্বল ভূমিকা এখন অন্ধকারে ঢাকা। কিন্তু আমরা সবসময়ই পছন্দ করি পাশ্চাত্য দেশের বিভিন্ন খেলা এবং নায়ক ফুটবলদের নিয়ে নাচানাচি করতে। ঠিক এই সময়েই কোনও একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী ফুটবলার লিওনেল মেসিকে কলকাতায় আনার তোড়জোড় করেছেন। আমরা কেউই জানি না, ভারতীয় ফুটবলের উন্নতিতে এই চমক দেওয়া মেসিকে নিয়ে সার্কাস করার অর্থ কী।

Advertisement

মেসি কলকাতায় আগেও এসেছিলেন। তখন সারা পৃথিবীজুড়ে ফুটবলের অগ্রগতিতে মেসিকে সামনে রেখে ফিফা একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী মেসিকে রেখে প্রদর্শনী ম্যাচ করা হয়েছিল। কলকাতায় খেলে যাওয়ার পরে মেসি গিয়েছিলেন বাংলাদেশে। তারপরেও বিশ্বকাপ জয়ী মারাদোনা থেকে শুরু করে অলিভার কান, রজার মিলার সহ আরও বেশ কিছু আন্তর্জাতিক স্তরে ফুটবলাররা কলকাতায় এসেছেন। তার আগে অবশ্য ইডেন উদ্যানে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলে গেছেন কসমস দলের হয়ে ফুটবল সম্রাট পেলে। তাঁদের খেলা দেখে ভারতীয় ফুটবলে কোনও কি প্রতিচ্ছবি পড়েছিল? তা নিয়ে কোনও সমীক্ষাও হয়নি। কিন্তু সারা ভারত ফুটবল ফেডারেশন ১৯৮৪ সালে প্রথম নেহরু কাপ ফুটবল শুরু করেছিল। সেখানে আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে থেকে শুরু করে বেশ কিছু দলকে নিয়ে আসা হয়েছিল ভারতীয় দলের বিরুদ্ধে খেলার জন্য। সেই নেহরু কাপ থেকে ভারতীয় ফুটবলাররা নজরে এসেছিলেন এবং ফুটবলের উন্নতিও হয়েছিল। এমনকি এশিয়ান গেমসে ভারত নজর কাড়ে। সেই দিনগুলি এখন কেউই স্মৃতিতে ধরে রাখেননি।

Advertisement

মেসি কলকাতায় আসছেন, তা নিয়ে ফুটবলের উন্নতি কী হবে, সে বিষয়ে কেউ আলোকপাত করছেন না। সবাই ভাবছেন, দূর থেকে দেখা হলেই অনেককিছু পাওয়া হয়ে যাবে। এই মোহনবাগান ক্লাবে যখন পেলে খেলেছিলেন বা মারাদোনা এসে তাঁর অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রকাশ করেছিলেন, তা কিন্তু মেসি দেখাবেন না। এটা অনেকটা ফ্যাশন শোয়ের মতো— মেসি আসছেন এবং র্যাোম্পে হেঁটে নিজেকে প্রকাশ করবেন। হয়তো অনেকে আবদার করবেন মেসিকে নিয়ে কিছু নতুনত্ব করা যায় কিনা।

শোনা যাচ্ছে, মোহনবাগান ক্লাব তাঁর হাতে আইএফএ শিল্ড জয়ের প্রতীক হিসাবে জার্সি তুলে দেবেন। খুব ভালো কথা, কিন্তু মোহনবাগান ক্লাবের ফুটবলের চরিত্রে তার কী প্রভাব ফেলবে? যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণে যে প্রীতি ম্যাচ হবে, সেখানে কিন্তু খেলবেন না মেসি। তবুও মোহনবাগানের সচিব সৃঞ্জয় বসু ও সভাপতি দেবাশিস দত্ত ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন মেসির হাতে মোহনবাগানের জার্সিটা তুলে দেবেন। কিন্তু এখন মোহনবাগানের জার্সির নামই বদলে গেছে। নাম হয়েছে মোহনবাগান সুপারজায়ান্ট। তাহলে শিল্ড জয়ের প্রতীক হিসেবে ওই জার্সির কী মূল্য থাকল?

এদিকে লেকটাউনের মোড়ের কাছে একটি মেসির সত্তর ফুটের একটি মূর্তির উদ্বোধন হবে। ওই অনুষ্ঠানে মেসি নাকি থাকবেন। তবে, সশরীরে তিনি থাকবেন না। ওই মূর্তি হোটেল থেকে ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন মেসি। মেসিকে নিয়ে আরও চমক দেওয়া অনুষ্ঠানও হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু এত কিছু হওয়ার পরেও ভারতীয় ফুটবলের দৈন্যদশা ঘুচবে কি? এই প্রশ্নের উত্তর দেবে কে?

Advertisement