• facebook
  • twitter
Sunday, 8 December, 2024

কলকাতা লিগ পরিচালনায় স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্নের মুখে আইএফএ

মানা ও নামানার মাঝে অনেক প্রশ্নই কিন্তু উঁকিঝুঁকি দেওয়া শুরু করছে। কারন, গ্রুপ-বিতে কিন্তু প্রায় গ্রুপ-এর কাছাকাছি চিত্রের প্রতিফলন ঘটেছে।

প্রতীকী চিত্র

কলকাতা প্রিমিয়ার লিগের খেলা প্রায় শেষ পর্যায়ে আছে। চ্যাম্পিয়ানশীপের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খেলা বাদে লিগের অন‍্যান খেলা শেষ হয়ে গেছে। এবারের লিগ পরিচালনা নিয়ে খোদ আইএফএর বিরুদ্ধে নানা প্রশ্ন উঠছে।খেলার সূচী নির্নয়েই অনেক ক্লাব সন্তষ্ট নয়।গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোতে রেফারিদের পোষ্টিং ও ম‍্যাচ পরিচালনা নিয়ে ম‍্যাচ পরবর্তী কোনো নজরদারি নেই। লিগের প্রথম ম‍্যাচেই আইএফএর প্রেসিডেন্ট ওনারর ক্লাবের ম‍্যাচ শেষে রেফারিং নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। আবার, লিগের শেষ পর্যায়ে জর্জ টেলিগ্রাফ ক্লাবের পক্ষ থেকেও তাদের ম্যাচে রেফারির ম‍্যাচ পরিচালনা নিয়ে অসন্তোষ তোলা হয়েছে।ম‍্যাচ পরিচালনায় যেখানে রেফারির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে, সেখানে আইএফএ ও রেফারি সংস্থার মধ্যে কেন সমন্বয়ের অভাব হবে?

কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ ২৬টা দল নিয়ে হচ্ছে। গতমরশুমে ৪টে দলের নীচের ডিভিশন থেকে প্রমোশন পাওয়া ও ৪টে দলের নীচের ডিভিশনে নেমে যাওয়ার নিয়ম ছিল। এবার ৪টে দলের ওঠানামার পরিবর্তে ২টো দলের ওঠানামার নিয়ম ছিল। ১ বছরের মধ‍্যেই এই ওঠানামার নিয়ম বদল নিয়েও আইএফএ সিদ্ধান্ত প্রশ্নের মুখে পড়েছে। অনেকেই এই সিদ্ধান্তে নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্লাবের স্বার্থরক্ষার দিকে আঙ্গুল তুলছে।একইভাবে তার আগের মরশুমে প্রিমিয়ার-এ ও প্রিমিয়ার-বি এক করে দেওয়া নিয়ে কথা উঠেছিল।এখন প্রিমিয়ার ডিভিশনে ক্লাব সংখ‍্যা বেড়ে গেছে। ফলে, লিগকে দুটো গ্রুপে ভাগ করে প্রথমে গ্রুপস্টেজ ও পরবর্তী সময়ে গ্রুপস্টেজে পয়েন্টের ভিত্তিতে চ‍্যাম্পিয়ানশীপ ও অবনমনের খেলা করতে হচ্ছে। এই বিন‍্যাসের ফলে অর্ধেকেরও বেশি দল এক মরশুমে ১২টার বেশি ম‍্যাচের সুযোগ পাচ্ছেনা। এতে টিমের অধিকাংশ ফুটবলারদের ক্ষতি হচ্ছে। প্রতিটা দল যদি ৩০/৩৫জনের স্কোয়াড তৈরি করে। প্রতি দলের সেই স্কোয়াডের ১০/১৫জন করে ফুটবলার ৩টে করে ম‍্যাচেরও সুযোগ পাচ্ছেনা। এই যদি পরিসংখ্যান হয়, তবে ২০০র উপর স্কোয়াডের ফুটবলার সেই অর্থে খেলার সুযোগই পাচ্ছেনা।

এছাড়াও লিগের খেলায় কোন নির্দিষ্ট বিভাগকে গ্রুপ বিন‍্যাস করে খেলালে তা আর লিগের খেলা হয়।লিগের নিয়মে তো টেবিলের শীর্ষ টিম চ্যাম্পিয়ান হয় এবং টেবিলের নীচের টিমের অবনমন হয়। এভাবে নানা হযবরলের মধ্যে প্রিমিয়ার লিগের খেলায় আর স্বচ্ছতা থাকছেনা।

প্রিমিয়ার লিগের খেলায় অবশ‍্য গতমরশুম থেকেই খেলার বাইরের অনেক বিষয় নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে আসছে। ম‍্যাচ ফিক্সিংয়ের মত গুরুতর অভিযোগ এসেছে। সেসব ঘটনা নিয়ে নাকি থানা পুলিশও হয়েছে। এবারের মরশুম শুরুর আগে এবিষয় নিয়ে তার কম চর্চা হয়নি। প্রিমিয়ার লিগের গ্রুপস্টেজের খেলা শেষ হয়েছে।সেই ১৫৬টা খেলার উপর, ‘খেলার বাইরের প্রভাব’ কি অস্বীকার করা যায়?

গত মরশুমের ঘটনা প্রভাব থেকে মুক্ত করতে—এবার প্রিমিয়ার লিগের স্বচ্ছতা আনতে আইএফএ সচেষ্ট আছে বলে ঘোষনা ছিল।প্রসঙ্গত বলা যায়, প্রিমিয়ার লিগের ২৬দলের মধ্যে আইএফএর চেয়ারম্যান ও সচিবের যেমন ক্লাব আছে। তেমনই, আইএফএর সভাপতি ও সহসভাপতিদেরও ক্লাব আছে। আইএফএর চেয়ারম্যান থেকে সহসভাপতিদের ক্লাবগুলো যে বিভাগে আছে—সেখানে সকলের নজর থাকবেই। এবং স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচের নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতার আলোচনা হতেই পারে।

গ্রুপ বিন‍্যাসে চেয়ারম্যান ও সচিবের ক্লাব গ্রুপ-বিতে পড়েছে। এবং সভাপতি ও সহসভাপতিদের ক্লাবগুলো গ্রুপ-এতে পড়েছে। প্রতি গ্রুপে ১৩টা করে ক্লাব আছে। ফলে ১৩ রাউন্ডের খেলায় কোনও রাউন্ডেই ৬টার বেশি ম‍্যাচ হয়না। একদিনে সবোর্চ্চ এই ৬টা ম‍্যাচেরই খেলা হতে পারে। লিগের উদ্বোধনী ম‍্যাচকে ব‍্যতিক্রম ধরে বলা যায়, দুটো গ্রুপের ১৩ রাউন্ডকে যুক্ত করে ২৬রাউন্ডের খেলা ধরা যায়। এই ২৬ রাউন্ডের মধ্যে মাত্র ৩টে রাউন্ডে একদিনে ৬টা করে ম‍্যাচ হয়েছে। এবং তা লিগ শুরুর প্রথম দিকের রাউন্ডে হয়েছে। প্রতি রাউন্ডেই একদিনে সব ম‍্যাচ দিতে হবে—এমন বাধ‍্যবাধকতা নেই। কিন্তু চ‍্যাম্পিয়ানশিপের প্রশ্নে বা অবনমনের আওতার গুরুত্বপূর্ণ  রাউন্ডে কেন একদিনে সবম‍্যাচ হবে না?এবং তা হতে গেলে লিগ শুরুর প্রথম দিকে নয়, লিগের শেষদিকেই একদিনে সব টিমের ম‍্যাচ হওয়ার কথা। কিন্তু তা হয়নি।

৭ম থেকে ৯ম রাউন্ডের খেলাগুলো ২দিনের বদলে ৩দিনে করার প্রয়োজন হয়ে পড়ল কেন? তাহলে, ১ থেকে ৬ ও ৭ থেকে ১৩ রাউন্ডকে একটু চর্চায় আনা যাক। এই দুইভাগে গ্রুপ-এর লিগ টেবিলে চ্যাম্পিয়ানশিপ ও অবনমনের আওতার ক্লাবগুলোর অবস্থান কেমন ছিল? ১ম থেকে ৬ষষ্ঠ রাউন্ড শেষে চ‍্যাম্পিয়ানশিপ ও অবনমনে যে দলগুলো ছিল, ১৩তম রাউন্ডে তারা কোন অবস্থানে শেষ করলো?

৬ষষ্ঠ রাউন্ড শেষে চ‍্যাম্পিয়ানশিপে থাকা ৩টে দলের মধ্যে ডায়মন্ড হারবার এফসি ও এনএ সুরুচী সংঘ তাদের অবস্থান ধরে রাখতে পারলেও, ইউনাইটেড স্পোর্টস ১৩তম রাউন্ডের শেষে চ‍্যাম্পিয়ানশিপ থেকে ছিটকে গেছে। ইউনাইটেড স্পোর্টস শেষ ৬ ম‍্যাচে মাত্র ৬পয়েন্ট তুলতে পেরেছে। মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব শেষ লড়াইয়ে চ‍্যাম্পিয়ানশিপে ইউনাইটেড স্পোর্টসের জায়গা নিয়েছে।

৬ষ্ঠ রাউন্ড শেষে যারা অবনমনের আওতায় ছিল,তাদের মধ্যে সার্দান সমিতি ও পাঠচক্র নিজেদেরকে ১৩তম রাউন্ড শেষে অবনমনের আওতায় থেকে বার করে নিতে পেরেছে।তাদের জায়গা নিয়েছে যথাক্রমে উয়াড়ী ক্লাব ও কালিঘাট মিলন সংঘ। আর্মি একাদশ ৬ষষ্ঠ রাউন্ডের শেষের যে অবস্থানে ছিল, ১৩তম রাউন্ডের শেষে সেই অবস্থান থেকে একধাপ নীচে নেমেছে।

সার্দান সমিতি শেষ ৬ ম‍্যাচে ১০পয়েন্ট তুলে মোট ১৪পয়েন্টে লিগ টেবিলের ৭ম স্থান পেয়েছে। এবং পাঠচক্র শেষ ৬ ম‍্যাচে ১৩পয়েন্ট তুলে মোট ১৪ পয়েন্ট ও গোলপার্থক‍্যে লিগ টেবিলের ৮ম স্থান পেয়েছে।

প্রসঙ্গত, গ্রুপ-এতে ৭ম রাউন্ড থেকে ১৩তম রাউন্ডের পর্যায় দেখা যাচ্ছে। লিগ টেবিলের ১৩ দলের মধ্যে ডায়মন্ড হারবার এফসি সবোর্চ্চ পয়েন্ট পেয়েছে। তারা ৭ ম‍্যাচে ১৯পয়েন্ট তুলেছে। তারপরে, দ্ধিতীয় দল হিসেবে পাঠচক্র ৭ ম‍্যাচে ১৩পয়েন্ট অর্জন করেছে। তৃতীয় দল হিসেবে এন এ সুরুচি সংঘ ৬ ম‍্যাচে ১১পয়েন্ট পেয়েছে।

উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্স করেছে পাঠচক্র ক্লাব। পাঠচক্র ক্লাব ইউনাইটেড স্পোর্টসের ডেভলপমেন্ট টিম।মাদার ক্লাব ইউনাইটেড স্পোর্টস যেখানে শেষ ৬ ম‍্যাচে মাত্র ৬পয়েন্ট তুলতে পেরেছে, সেখানে ডেভলপমেন্ট টিম পাঠচক্র ক্লাব দ্ধিগুনের বেশি পয়েন্ট পেয়েছে? ৭ ম‍্যাচে তারা ১৩ পয়েন্ট অর্জন করেছে।অবশ‍্য, মাদার ক্লাব ও তার ডেভেলপমেন্ট ক্লাবকে একই গ্রুপে রাখার পরিবর্ত বিকল্প ভাবনা আইএফএ দেখাতে পারেনি।ফলে লিগের দুটো পর্যায়ের শেষেরদিকের ম‍্যাচগুলো থেকে কিছু ক্লাবের অস্বাভাবিক পয়েন্ট পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

লিগ টেবিলের সূচি নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। একটা গ্রুপে ১৩টা দল মানে একরাউন্ডে ৬টা ম‍্যাচ হয়।এই ৬টা ম‍্যাচকে দুদিনে হলে একেকদিনে ৩টে করে ম‍্যাচ হলে,কোন দলগুলো প্রথমদিনে খেলবে এবং কোনকোন দলগুলো দ্ধিতীয়দিনে খেলবে—এর নির্দিষ্ট নিয়ম কি আছে? লিগের শেষ পর্যায়ে যা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। এই সূচি নিয়ে নির্দিষ্ট টিমের প্রতি চক্রান্তের অভিযোগ উঠছে। যেমন, প্রবল বর্ষণের সময় উলুবেড়িয়া মাঠে আর্মির মত গুরুত্বপূর্ণ ম‍্যাচ কালীঘাট মিলন সংঘকে খেলতে হয়েছে। ঐ ম্যাচে বর্ষার জন‍্য মাঠের খারাপ অবস্থা নিয়ে বলতে গিয়ে তাদের টিম ম্যানেজারকে লাল কার্ড দেখতে হয়। আশ্চর্য যে, কালীঘাটের ঐ ম‍্যাচের পর পরবর্তী একমাসের মধ্যে উলুবেড়িয়ার ঐ মাঠে গ্রুপ-এর আর কোন ম্যাচ হয়নি।

কিন্তু ঐ সময়কালে গ্রুপ-এর গুরুত্বপূর্ণ ৪টে রাউন্ডের খেলা হয়েছে।গ্রুপের অন্যান্য দলগুলোর খেলা সেইসময় ঐ মাঠে কেন দেওয়া হলোনা? কোন দল কোন মাঠে কটা ম‍্যাচ খেলেছে—সব তথ‍্য আইএফএতে আছে। কালীঘাট মিলন সংঘ আইএফএর প্রেসিডেন্টের ক্লাব। পদাধিকারের সৌজন্যে তিনি কিছু বলেননি। কিন্তু এমন নানা অভিযোগ বিভিন্ন ক্লাবের আছে।

এছাড়াও নির্দিষ্ট ফুটবলারকে নির্দিষ্ট ম‍্যাচকে টার্গেট করে রেফারি দিয়ে সেকেন্ড কশান করানোর অভিযোগও উঠেছে। এমন অভিযোগ উঠলে রেফারিদের একাংশকে কিভাবে সন্দেহের উর্দ্ধে রাখা যায়?আইএফএর প্রেসিডেন্ট এবিষয়ে কোনো মন্তব্য জানাতে চাননা।তিনি খেলোয়াড়দের অনভিজ্ঞতার কথা বললেন। তরুণ খেলোয়াড়দের নিয়ে টিম গঠনে কখনও ভালো, কখনও খারাপ রেজাল্টকে মেনে নিয়েছেন।

মানা ও নামানার মাঝে অনেক প্রশ্নই কিন্তু উঁকিঝুঁকি দেওয়া শুরু করছে। কারন, গ্রুপ-বিতে কিন্তু প্রায় গ্রুপ-এর কাছাকাছি চিত্রের প্রতিফলন ঘটেছে। ফলতঃ লিগ পরিচালনায় খোদ আইএফএর ভূমিকা নিয়ে উঠেছে।