ভারতীয় মহিলা ফুটবল দল ২০২৬,এশিয়ান কাপ ফুটবলের মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলো। ভারত আয়োজক থাইল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে দিল। জোড়া করলেন বাংলার সংগীতা বাসফোর। টুর্নামেন্টে সংগীতার ৪টে গোল হয়ে গেল।তাই ম্যাচ শেষে সংগীতাকে দেখা গেল আবেগে কাঁদছেন।সংগীতাকে ঘিরে ভারতীয় দলের ফুটবলারদের দেখার মত জয়ের সেলিব্রেশন ছিল।
ভারতীয় দলের জয়ে বাংলার ফুটবলারকে আলাদা করে দেখার মধ্যে আঞ্চলিকতার মনোভাব প্রকাশ হতে পারে।কিন্ত দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া আমাদের বাঙালিদের এমন মনোভাব প্রকাশ করা ছাড়া কিছুই নেই। ভারতীয় ফুটবলে বাঙালি ফুটবলার নেতৃত্ব দিচ্ছেন,এটা গর্বের ঘটনা।
ভারতীয় পুরুষ দল ভারতীয় মহিলা দল যেখানে বিশ্বকাপের মূলপর্বে যাওয়ার সম্ভবনাকে জিইয়ে রাখতে পারলো,ভারতীয় পুরুষ দল আগেই বিশ্বকাপের যোগ্যতাপর্ব থেকেই ছিটকে গেছে। এখন এশিয়ান কাপের অনিশ্চয়তার মধ্যে চলছে।
ভারতীয় পুরুষ দলের হংকংয়ের বিরুদ্ধে হারার পর আমারা প্রাক্তন ফুটবলার বাইচুং ভুটিয়ার কলকাতায় প্রেস কনফারেন্স করতে দেখলাম। ভারতীয় দলের পরাজয়ে তিনি অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের পরিচালন ব্যবস্হাকে দায়ী করলেন। বিশেষত: সভাপতি কল্যান চৌবের প্রতি তিনি উষ্মা প্রকাশ করলেন।অনেকেই ভারতীয় ফুটবলের এমন দশার জন্য দেশের প্রধান লিগ আইএসএলকে দোষারোপ করলেন। আইএসএলের প্রমোশন ও রেলিগেশন নিয়ে টালবাহানার জন্য লিগের মান ক্রমশ: খারাপ হচ্ছে বলে দাবি করা হচ্ছে। আইলিগকেও ফেডারেশন যথাযথ গুরুত্ব দিচ্ছেনা বলে কথা উঠেছে।এছাড়া ভারতীয় দলগঠনে আইলিগকে উপেক্ষা করার অভিযোগ উঠেছে। ভারতীয় পুরুষ ফুটবলে এখন দিশাহীন পথে চলেছে।
প্রসঙ্গত, বলা যায় বাইচুং ভুটিয়ার অধিনায়কত্বে ভারতীয় দল এশিয়ান কাপে টানা ১০বছর একটাও ম্যাচ জিততে পারেনি। ১১টা ম্যাচ খেলে মাত্র ১টা ম্যাচ ড্র করেছে। এবং ১০টা ম্যাচ হেরেছে। বাইচুংদের ভারতীয় দল ৪টে গোল দিয়ে ৪০টা গোল হজম করেছিল। যার মোদ্দাকথা হলো হঠাৎ করে ভারতীয় পুরুষ ফুটবল দলের এমন অধ:পতন হয়নি। ভারতীয় পুরুষ দলে বাঙালি ফুটবলার হারিয়ে যেতেই,ভারতীয় দলকে দিশাহীন দেখাচ্ছে। এই সত্যটা মানা হচ্ছেনা।
ভারতীয় ফুটবলে বাঙালি ফুটবলার হারিয়ে যাচ্ছে কেন?
ভারতীয় ফুটবলে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলার তিন বড় দলের গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা ছিল।বাংলার তিন বড় দলের মধ্যে মহমেডান স্পোটিং ক্লাব তার উপস্হিতিকে হারিয়ে ফেলেছে।ইষ্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের ভূমিকাকে অস্বীকার করা যাচ্ছেনা। কিন্ত ইষ্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান ক্লাব থেকে ভারতীয় দলে ডাক পাওয়া ফুটবলারদের মধ্যে বাঙালি ফুটবলার নেই বললেই চলে।কারন,বাংলার তিন প্রধানে এখন আর সেই অর্থে বাঙালি ফুটবলার খেলেনা।
হঠাৎ করে তিনপ্রধানে বাঙালি ফুটবলারদের আকাল হয়ে পড়লো কেন?
ভারতবর্ষের সেরা লিগ হিসেবে পরিচিত কলকাতা লিগে তিন প্রধানের নজরে পড়া বাঙালি ফুটবলার উঠে আসছে না বলে দাবি করা হচ্ছে। কলকাতা লিগে বাঙালি ফুটবলারদের আধিপত্য থাকে। সেখান থেকে বাঙালি ফুটবলার উঠছেনা, এই সমস্যার সমাধান কে করবে?
কলকাতা লিগ পরিচালনা কারা করে?
কলকাতা লিগ পরিচালনা করে আইএফএ। কলকাতা লিগ থেকে বাঙালি ফুটবলার উঠে না আসার সমস্যার সমাধানের পথ আইএফএকেই ভাবতে হবে।কলকাতা প্রিমিয়র লিগের ম্যাচে প্রতি ক্লাবে নূন্যতম ৬জন বাঙালি ফুটবলাদের খেলানো বাধ্যতা মূলক করা হয়েছে। কিন্ত এই সিদ্ধান্ত নিতে আইএফএর দ্ধিধাগ্রস্ত মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে।
বাঙালি ফুটবলার ও ভিন্নরাজ্যের ফুটবলারদের মধ্যে এমন দড়ি টানাটানির প্রয়োজন হলো কেন?
ভারতীয় ফুটবলার তুলে আনতে লোকাল লিগে বিদেশী ফুটবলার খেলানো বন্ধ করা হয়েছে। তবে,লোকাল ফুটবলার তুলে আনতে ভিন্নরাজ্যের ফুটবলার খেলানো বন্ধ হবেনা কেন? ভারতীয় ফুটবলে এখন নর্থইষ্টের ফুটবলারদের আধিপত্য দেখা যাচ্ছে।বাংলার ফুটবল লিগেও নর্থইষ্টের ফুটবলারদের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে।কিন্ত নর্থইষ্টের ফুটবলে,বিশেষতঃ: মণিপুর ও মিজোরাম লিগে ক’জন বাংলার
ফুটবলার খেলার সুযোগ পান?
বাংলার ফুটবলে এই ভিন্নরাজ্যের ফুটবলারদের বাংলার ক্লাবগুলোই নিয়ে আসছে। বিপুল টাকা খরচ করে বাংলার ক্লাবগুলো ভিন্নরাজ্যের ফুটবলার আনছে কেন? যখন বাংলার ক্লাবগুলো আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত বলা হচ্ছে,তখন কিভাবে বিপুল খরচ করে ভিন্নরাজ্যের ফুটবলার নিয়ে আসা হচ্ছে? কারা বাংলার ক্লাবগুলোকে এই টাকা জোগাড় করে দিচ্ছে? চিটফান্ড থেকে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের কালো ছায়া কলকাতা লিগে পড়ছে।আইএফএ এমন পরিস্হিতে নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকতে পারেনা। কলকাতা লিগ থেকে বাঙালি ফুটবলার হারিয়ে যাওয়ার নানা কারনের মধ্যে এই অশুভ শক্তিকে উপেক্ষা করা যাচ্ছেনা।
অপরদিকে, প্রিমিয়র লিগকে ২মাসের খেলায় পরিনত করা হয়েছে। ৩মাসের ফুটবল মরশুমে বাঙালি ফুটবলারদের পরিচর্চা কিভাবে হবে?একজন নর্থইষ্টের ফুটবলার একাধিক রাজ্য লিগ খেলার সুযোগ পায়।একজন বাঙালি ফুটবলার কলকাতা লিগ ছাড়া দেশের গুরুত্বপূর্ন অন্য রাজ্য লিগে খেলার সুযোগ পায়না।
কলকাতা লিগকে স্বচ্ছ পথে পরিচালনা করে বাঙালি ফুটবলার তুলে আনতে হবে।বাঙালির ফুটবলার উঠে আসলেই ভারতীয় পুরুষ দলের দৈন্যদশা কাটবে।
বাংলা থেকে পুরুষ ফুটবলার হারিয়ে যাওয়ার নানা কারন নিয়ে চর্চা হয়েই চলেছে। কিন্ত সমস্যা সমাধানের পথ কোথায়?
এমনসময়, সংগীতা বাসফোরের জোড়া গোলে ভারতীয় মহিলা দল এশিয়ান কাপের মূলপর্বে পৌঁছে গেল। তাই সবাইকে ভাবতে হবে মহিলারা যদি পারেন তাহলে পুরুষ ফুটবলারদের গলদটা কোথায়?