৪০ বছরে সুনীল ছেত্রী ৮ মাসে আগে নেওয়া অবসর ভেঙ্গে ভারতীয় দলে ফিরে আসলেন। অবসর ভেঙ্গে ফিরে আসার ক্ষেত্রে তার লক্ষ্য সম্পর্কে কোনো বক্তব্য ফুটবল ফেডারেশন কিংবা সুনীল ছেত্রী নিজে কিছু জানাননি। ভারতীয় দলের কোচ মানলো মার্কুয়েজ সুনীল ছেত্রীর সাথে কথা বলে তার অবসর ভাঙ্গিয়েছেন। ভারতীয় দলের কোচের কথায়, ২০২৭ এএফসি এশিয়ান কাপের মূলপর্বে খেলার লক্ষ্যে, আসন্ন কোয়ালিফাইং ম্যাচে ভারতীয় দলকে শক্তিশালী করতেই সুনীল ছেত্রীকে টিমে নেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত বলা যায়,আগামী ২৫ মার্চ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় দল এএফসি এশিয়ান কাপের কোয়ালিফাইং ম্যাচ খেলবে। তার আগে ১৯ মার্চ ভারতীয় দল মালদ্বীপের বিরুদ্ধে ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলবে।
২ বছর পরে ২০২৭ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে ৫ই ফেব্রুয়ারি এএফসি এশিয়ান কাপের মূল পর্বের খেলা হবে। আগামী ২ বছরের লক্ষ্যে টিমকে পরিচালনা করতে হবে। এই ২বছরের মধ্যে কেবল এশিয়ান কাপের খেলা নয়, ২০৩০ বিশ্বকাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডের খেলাও শুরু হয়ে যাবে। আগামী দু বছরের মধ্যে যে ভারতীয় দলকে গুরুত্বপূর্ণ খেলায় অংশগ্রহণ করতে হবে, সেই টিম গড়ার ক্ষেত্রে সুনীল ছেত্রীকে কি বিবেচনার মধ্যে রাখা হচ্ছে? ২ বছর পরে সুনীল ছেত্রী ৪৩ বছরে পড়বে।
ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন তাদের নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে সুনীল ছেত্রীর অবসরকে হাতিয়ার করেছে। কেন ভারতীয় ফুটবল দলকে এশিয়ান কাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ড খেলতে হচ্ছে?
২০২৬ বিশ্বকাপ ও ২০২৭ এএফসি এশিয়ান কাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডের খেলা একই সাথে শুরু হয়েছে। এশিয়ার ২৭ থেকে ৪৬ নম্বরের সারিবদ্ধ তালিকার ২০টা দেশ প্রথম রাউন্ড থেকে খেলা শুরু করেছিল। ২০টা দেশের মধ্যে থেকে ১০টা দেশ দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। এবং এশিয়া ফুটবলের সারিবদ্ধ তালিকায় ১ থেকে ২৬ পর্যন্ত ২৬টা দেশ দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে খেলা শুরু করেছিল। ভারতীয় দল দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে খেলা শুরু করে। দ্বিতীয় রাউন্ডের মোট ৩৬টা দেশের মধ্যে ১৮টা দেশ বিশ্বকাপের যোগ্যতা পর্বের তৃতীয় রাউন্ড ও এশিয়ান কাপের মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে নিয়েছে। বিশ্বকাপের যোগ্যতা পর্বের তৃতীয় রাউন্ড থেকে ছিটকে যাওয়া ১৮টা দল এশিয়ান কাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডের খেলায় অংশগ্রহণ করছে। বিশ্বকাপের তৃতীয় রাউন্ডের ব্যর্থ হওয়া ১৮টা দেশের মধ্যে ভারতীয় দল অন্যতম। ব্যর্থ ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্য ও দলের অধিনায়ক ছিলেন সুনীল ছেত্রী। সুনীলের নেতৃত্বে ভারতীয় দল বিশ্বকাপের তৃতীয় রাউন্ড ও এশিয়ান কাপের মূল পর্ব থেকে ছিটকে গেল। সেই সুনীল ছেত্রীকে অবসর ভাঙ্গিয়ে আবার ভারতীয় দলকে কোয়ালিফাইং রাউন্ড থেকে উত্তীর্ণ করে এশিয়ান কাপের মূলপর্বে ভালো ফলের জন্য লক্ষ্য স্হির করছে?ফেডারেশনের হাস্যকর সিদ্ধান্তে ভারতীয় ফুটবলের দৈন্যদশা প্রকট হচ্ছে।
অনেকেই বলবে বর্তমান আইএসএলে সুনীল ছেত্রী ১২টা গোল করেছে,স্বাভাবিকভাবেই সে এখনও ভারতীয় ফুটবলে অপরিহার্য। ভারতীয় ফুটবলে আইএসএল হলো সার্কাস লিগ। যে লিগে অবনমন নেই, সেটা কখনোই লিগের পর্যায়ে পরেনা। সুনীল ছেত্রী এবারের আইএসএলে কলকাতার তিন বড় দলের বিরুদ্ধে খেলেছে। বাংলার তিন বড় ক্লাবের বিপক্ষে মোট ৬টা ম্যাচ খেলে সুনীল ছেত্রী ৩টে গোল করেছে। ৩টেই পেনাল্টিতে গোল করেন।
২০ বছর ধরে ৬০০র কাছাকাছি ম্যাচ খেলে ৩০০র কাছাকাছি যিনি গোল করেছেন,তার গোল করার দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে না।
প্রশ্নটা ভিন্ন প্রেক্ষিতে উঠছে। এক্ষেত্রে তার খেলার দক্ষতা নয় বয়স অন্তরায় হয়ে উঠেছে। এই বয়সে সুনীল ছেত্রীর পক্ষে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পুরো সময় মাঠে ১০০% দেওয়া সম্ভব নয়। এটাই বাস্তব সত্য।এই বাস্তবতা মানতে হবে।
৮ মাস আগে সুনীল ছেত্রী ভারতীয় দল থেকে অবসর নিয়েছেন। ৮মাস আগেই ভারতীয় দল বিশ্বকাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডের দ্বিতীয় ধাপ থেকেই বিদায় নিয়েছে। তার কয়েকমাস আগে ২০২৩ এএফসি এশিয়ান কাপ থেকে ভারতীয় দল বিদায় নিয়েছে। প্রাকৃতিক কারনে ২০২৩এর এশিয়ান কাপ ২০২৪-এ শেষ হয়েছে। ৩টে ম্যাচেই ভারতীয় দল হেরেছে। এবং ৬টা গোল খেলেও ভারতীয় দল একটাও গোল করতে পারেনি।
হঠাৎ কি এমন অবস্হা তৈরি হলো যে, ৪০বছরের সুনীলকে অবসর ভেঙ্গে ফিরতে হচ্ছে?
আর ফিরছেন যখন ঘরের যুবভারতী স্টেডিয়ামে কুয়েতের বিরুদ্ধে ‘মাষ্ট উইন ম্যাচ’ জেতার ফোকাস নষ্ট করে,ম্যাচটা অবসর নেওয়ার মঞ্চ বানানো হল কেন? এতে,কুয়েত টিমকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হলো না?
প্রসঙ্গত, অবসর ভেঙ্গে যে ২০২৭ এএফসি এশিয়ান কাপে খেলতে চলেছে— এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করার দাবিদার ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের ছিল। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন সেই দাবি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়। এবং সৌদি আরব বিনাবাধায় এই টুর্নামেন্ট করার দায়িত্ব পায়। এই প্রসঙ্গে আরেকটি বিষয় খুব প্রাসঙ্গিক— ২০২২/২৩ মরশুমের সন্তোষ ট্রফির চূড়ান্ত পর্যায়ের নকআউটের খেলা একবার বিদেশের মাটিতেই নিয়ে যাওয়া হলো। হ্যাঁ, ঐ একবার, সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের কিং ফায়াদ আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম।
বাংলাদেশ, হংকং, সিঙ্গাপুরের মত এশিয়ার দুর্বল দলগুলোর বিরুদ্ধে খেলার জন্য সুনীল ছেত্রীর সন্মানজনক অবসরকে হাস্যকর করা হল না? স্পষ্ট বলা যেত সুনীলের দেশের হয়ে গোল করার সংখ্যা বর্তমানে ৯৪, ওটা বাংলাদেশ কিংবা হংকং মত দুর্বল দলের বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ মিললে সংখ্যাটা সহজেই ১০০ পার হতে পারে। বাংলাদেশ, হংকং, সিঙ্গাপুরের মত চূড়ান্ত দুর্বল দেশ কিংবা ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচগুলোতে ভারতের যুব ফুটবলারদের আন্তর্জাতিক আঙ্গিনায় অভিষেক না হলে কিভাবে ভবিষ্যতের ভারতীয় দল তৈরি হবে? এশিয়ান কাপের মূলপর্বে
এখন ১৮ দেশের পরিবর্তে ২৪ দেশ নিয়ে হচ্ছে। তাই, ভারতীয় দলের খেলার সুযোগ মিলেছে। নচেৎ খেলার সুযোগই থাকতো না।অবসর ভেঙে সুনীল ছেত্রীর ভারতীয় দলে ফিরে আসাটা ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের ছেলেখেলা বলা যায়।