এবারে অলরাউন্ডারদের দক্ষতাই বিশ্বকাপে ভারতকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে নিয়ে যাবে

ক্রিকেট বিশ্বে ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ভারতের নাম একই সঙ্গে উঠে আসে। বলা হয় মূলত যে সকল দেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল সেখানেই ক্রিকেটের পত্তন হয়।

Written by Satyabrata Kabiraj Kolkata | May 29, 2019 5:27 pm

ভারতীয় দল (Photo: Twitter/@imVkohl)

ক্রিকেট বিশ্বে ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ভারতের নাম একই সঙ্গে উঠে আসে। বলা হয় মূলত যে সকল দেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল সেখানেই ক্রিকেটের পত্তন হয়।

মনে রাখতে হবে বিশ্বের সব থেকে জনপ্রিয় ক্রীড়ানুষ্ঠান অলিম্পিকে কিন্তু ক্রিকেটের কোনও স্থান নেই। এখানে বিভিন্ন দেশের চিরাচরিত দলগত এবং একক খেলাগুলিরই প্রতিযােগিতা হয়ে থাকে। একারণে ক্রিকেটের আলাদা করে একটা বিশ্বকাপের আসর শুরু করতে হয়েছে।

ক্রিকেট খেলার নিয়ম ও পদ্ধতিতে বহু পরিবর্তন এসেছে কালের নিয়মে। কিন্তু অন্যান্য খেলাগুলির ক্ষেত্রে এতটা পরিবর্তন দেখা যায়নি। ক্রিকেটে কেবল পাঁচ দিনের টেস্ট খেলাটাই প্রচলিত ছিল। এর পরে আমেরিকার এক ব্যবসায়ী এই খেলার সময় কমিয়ে পঞ্চাশ ওভারে নামিয়ে আনেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন দেশের সেরা খেলােয়াড়দের নিয়ে এক একজন ব্যবসায়ী তাদের দলগঠনের সুযােগ পেলেন। এখানে ক্রীড়া দক্ষতার সঙ্গে আর্থিক লেনদেনই ছিল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।

এরপর ক্রিকেট আরও স্বল্প সময়ের করা হল। মাত্র কুড়ি ওভারের খেলা শুরু হল। বর্তমানে টি২০ এবং পঞ্চাশ ওভারের বিশ্বকাপ খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আসর বসছে ইংল্যান্ডে।

১৯৮৩ সালে কপিল দেবের নেতৃত্বে ভারত প্রথমবার বিশ্বকাপ জিতেছিল। ভারতীয় দলে কপিল দেবের মতাে অলরাউন্ডার আগেও ছিল। কিন্তু সেসময়ে ক্রিকেট বিশ্বকাপের এমন অনুষ্ঠান হত না। তবে অত্যন্ত পরিশ্রমী এবং খেলা অন্ত প্রাণ কপিল দেব ক্রিকেট খেলাটাকে একটা অন্যমাত্রায় নিয়ে যেতে সমর্থ হন।

এক সাধারণ ঘরের ছেলে কপিল নিজের দক্ষতায় ইংল্যান্ডে ক্রিকেট বিশ্বকাপের আসরে দলের অন্যান্যদের অনুপ্রাণিত করে সাফল্য তুলে নিয়ে আসেন। মূলত কপিল দেবের বােলিং ও ব্যাটিং দক্ষতাতেই অসাধ্য সাধন করে ভারতীয় দল। যদিও সেসময়ে ভারতীয় দলে মহীন্দর অমরনাথ, রজার বিনি এবং মদন লালের মতাে অলরাউন্ডার নিজেদের সবটুকু উজার করে দিয়েছিলেন।

মহীন্দর অমরনাথ কপিল দেবের তুলনায় অধিক অভিজ্ঞ হওয়া সত্ত্বেও কপিল দেবের অধিনায়কত্বে তাঁর পারফরমেন্স প্রদর্শনে কোনও ক্রটি রাখেননি। আর মহীন্দর অমরনাথ ছিলেন এক প্রখ্যাত ক্রিকেটারের পুত্র কিন্তু কপিল দেবের সেসব কোনও তকমাই ছিল না। এমন সব প্রতিভার ভিড়ে নিজেকে অধিনায়কত্বে তুলে নিয়ে যাওয়ার একমাত্র মূলধন ছিল তাঁর নিজের ক্রীড়াদক্ষতা। ক্রিকেটের প্রতি তাঁর অসাধারণ অঙ্গীকার আর নিষ্ঠাই কপিল দেবকে সর্বোচ্চ সাফল্য পেতে সাহায্য করেছিল।

বিশ্বকাপ জেতার লক্ষ্যে কপিল দেব এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে, সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, ফাইনাল খেলার সময় তিনি নিজের ব্যাগে একটা শ্যাম্পেনের বােতল নিয়ে গিয়েছিলেন। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর তিনি সেই শ্যাম্পেন দিয়েই সতীর্থদের অভিসিক্ত করেন।

মূলত একটি পঞ্চাশ বা ষাট ওভারের খেলায় একজন অলরাউন্ডারের কতটা প্রয়ােজন সেটাই এখানে উপজীব্য। কারণ ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অলরাউন্ডাররাই প্রধান ভূমিকা পালন করেন। এরপর ২০১১ সালে মহেন্দ্র সিং ধােনির নেতৃত্বে আবারও ভারত বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়। সে দলে একমাত্র অলরাউন্ডার হিসেবে ছিলেন ইউসুফ পাঠান। কিন্তু যুবরাজ সিং বাঁহাতি স্পিন বােলিংয়ের জাদুতে ৯ ম্যাচে ১৫ উইকেট এবং ৩৬২ রান করে প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট হন। মুলত ইউসুফ পাঠান ও যুবরাজ সিংয়ের অলরাউন্ড পারফরমেন্সেই ধােনি স্কোয়াড সেবার বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়।

অন্যদিকে ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপে মহীন্দর অমরনাথ সেমিফাইনালে ও ফাইনালে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন। তাঁর মতাে অলরাউন্ডারই দলের ভারসাম্য রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করেন। অলরাউন্ডাররাই প্রয়োজন অনুযায়ী পারফরমেন্স করার বিষয়ে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন।

চলতি সময়ে বিরাট কোহলির ব্যাটের বাহার বিশ্বময় বন্দিত। কিন্তু তিনি তাে আর অলরাউন্ডার নন। যদিও দলে দুই ফাস্ট বােলার অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া এবং বিজয় শঙ্কর, স্পিন বােলিং অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজা এবং কেদার যাদব ব্যাটসম্যান সাইড আর্ম অফস্পিনে পারদর্শী।

কোহলির স্কোয়াড এবার বিশ্বকাপে ফেবারিট দল হিসেবে প্রতিযােগিতায় অংশ নিচ্ছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রাক্তন অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড আসন্ন বিশ্বকাপে অলরাউন্ডাররাই ভারতের ভাগ্য নির্ধারণ করবে বলে মন্তব্য করেছেন। কপিল দেবের পর হরিয়ানার হার্দিক পান্ডিয়া অলরাউন্ডার হিসেবে ক্রীড়া বিশেষজ্ঞদের নজর কাড়েন। ২০১৬ সালে এই খেলােয়াড়ের আবির্ভাব। ব্যাট ও বলে হার্দিক সমান দক্ষতা দেখাতে সমর্থ হয়েছেন। আর সবথেকে উল্লেখযােগ্য বিষয় হল হার্দিক দলের যেকোনও পরিস্থিতিতে মাথা ঠাণ্ডা রেখে খেলতে সক্ষম।

২৫ বছর বয়সী হার্দিক পান্ডিয়া ২০১৬ বিশ্ব টি২০ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শেষ ওভারে শেষ তিন বলে মাত্র দুই রান দিয়ে ১ রানে ভারতের জয় ছিনিয়ে এনেছিলেন। এখন সে ব্যাটসম্যান হিসেবেও যথেষ্ট পরিণত। দুর্ভাগ্যবশত একটি চ্যাট শােতে যৌনতা নিয়ে মন্তব্যের জেরে হার্দিক ও কে এল রাহুলকে সাময়িকভাবে সাসপেন্ড করা হয়। ফলে তাঁকে বছরের প্রথমে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত ওডিআই সিরিজে দেখা যায়নি। কিন্তু সাসপেনশন উঠে যাওয়ার পর পান্ডিয়া নিজেকে আরও পরিণত করেছেন।

সম্প্রতি সমাপ্ত আইপিএল চ্যাম্পিয়নশিপে পান্ডিয়া মুম্বই ইন্ডিয়ানসের হয়ে ১৫ বার ব্যাট হাতে ৪০২ রান করেন। এছাড়া ১৪ টি উইকেটও রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। তাই বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আসরে অন্যান্যদের সঙ্গে হার্দিক তাঁর দক্ষতা প্রদর্শনে কোনও কসুর করবে না। এছাড়া দলে রয়েছেন, রবীন্দ্র জাদেজা, বিজয় শঙ্করের মতে অলরাউন্ডাররাও।