এত লু বইছে, তবু হারাতে হবে বিজেপিকে : মমতা

নিজস্ব প্রতিনিধি — ভোটপ্রচারে গিয়ে গরমে অতিষ্ট খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও৷ বুধবার বর্ধমানের আউশগ্রাম ও গলসিতে সভা করেন তৃণমূল সুপ্রিমো৷ আউশগ্রামের সভার কাজ শেষ করে মুখ্যমন্ত্রীর কপ্টার যখন গলসিতে নামে, তখন ঘড়িতে প্রায় সাড়ে তিনটে৷ তাপমাত্রার পারদ চড়েছে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে৷ বাতাসে গরম হলকা৷ সেই আগুন ঝলসানো গরমেই মাইক হাতে গলসির জনসভায় উঠে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, আজকে গরমটা খুব বেশি৷ বাইরে এতটাই লু বইছে, যে কল্পনা করা যায় না৷ কিন্ত্ত এত লু বইলেও বিজেপিকে কিন্ত্ত হারাতে হবে৷

মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য থেকেই বোঝা যায়, প্রকৃতির দাবদাহ তাঁর কাছে অসহনীয় হলেও রাজনীতির ময়দানে বিজেপি তার চেয়েও বেশি অসহ্য৷ তাই যেভাবেই হোক বিজেপির বিরুদ্ধে তিনি নির্বাচনী প্রচার চালিয়েই যাবেন৷ এদিন স্বগতোক্তির মতো তাঁকে বলতেও শোনা গেল, আর তো একমাস৷ টেনে দেব, আপনাদের আশীর্বাদ থাকলে বাংলা তো বটেই, ভারত থেকেও বিজেপিকে বিদায় দেব৷

গত ৩১ মার্চ থেকে ভোট প্রচার শুরু করেছেন তৃণমূল নেত্রী৷ টানা পঁচিশ দিন ধরে রুটিন করে বিভিন্ন জেলা চষে বে.ডাচ্ছেন৷ একের পর এক লোকসভা কেন্দ্রে নির্বাচনী জনসভা করছেন৷ বুধবার কমিশনকে আক্রমণ করে বললেন, আগে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে ভোট শেষ হয়ে যেত৷ এবারই প্রথম এপ্রিল-মে-জুন তিন মাস জুড়ে ভোট হচ্ছে৷ নির্ঘাত কোনও চক্রান্ত করে রেখেছে৷ তা না হলে ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু করে জুন মাসের ৪ তারিখ পর্যন্ত নির্বাচন প্রক্রিয়া টেনে নিয়ে যাওয়া হল কেন?


বুধবার, তৃণমূল সুপ্রিমো প্রকাশ্য জনসভায় বলেন, ‘প্রচন্ড লু লেগেছে৷ যে হেলিকপ্টারে করে যাতায়াত করি, বললে বিশ্বাস করবেন না, ওটা গরমে এমন গরম হয়ে থাকে, যেন হিট চেম্বার৷ শরীরের সব জল শুকিয়ে গিয়েছে৷’ গরমের দাপটে এদিন চোখ থেকে বারবার রোদ চশমাটা খুলে ফেলতে এবং অাঁচল দিয়ে মুখ মুছতেও দেখা গিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে৷ তবে বিজেপিকে আক্রমণের প্রসঙ্গে, তার গলার ঝাঁঝ, বৈশাখের দুপুর রোদের তাতের সঙ্গে পাল্লা দিয়েছিল৷

লোকসভা ভোটের মধ্যেই ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষকর্মীর চাকরি বাতিলের জন্য কলকাতা হাইকোর্টের রায় তৃণমূলের ভাবমূর্তিতে একটা বড় ধাক্কা দিয়েছে৷ কিন্ত্ত হাইকোর্টের এই রায়কে ধাক্কা হিসেবে না দেখে, একে ‘মুলুক যার জোর তার’ হিসেবেই দেখছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বুধবার আউশগ্রামের সভা থেকে কলকাতা হাইকোর্টের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন আক্রমণ শানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বললেন, কলমের খোঁচায় ২৬ হাজার চাকরি কেড়ে নিল৷ আমার হতে ১০ লক্ষ চাকরি রেডি রয়েছে৷ কিন্ত্ত কোর্ট আটকে দিচ্ছে নিয়োগ৷ বিজেপি কলকাতা হাইকোর্টকে কিনে রেখেছে বলেও অভিযোগ করেন তৃণমূল সুপ্রিমো৷ অন্যদিকে এদিন নাম না করে নরেন্দ্র মোদিকে ‘প্রচারবাবু’ বলেও কটাক্ষ করেন মমতা৷ সেই সঙ্গে এবারের লোকসভায় বিজেপির বিদায় ঘোষণাও করলেন৷ বিভিন্ন রাজ্য ধরে হিসেব কষে বুঝিয়ে দিলেন, বিজেপি এবার আর ক্ষমতায় আসবে না৷

নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে হাইকোর্টের রায় প্রসঙ্গে মমতা এদিন অভিযোগ করেন, বিজেপি আপিল করলে যা চাইবে তা-ই হবে, অন্যরা কেউ বিচার চাইলে তা পাবে না৷ আমি কলকাতায় এরকম দুরবস্থা কোনওদিন দেখিনি৷

সুপ্রিমকোর্টের কথা বলছি না, তবে বিজেপি হাইকোর্টকে (কলকাতা) কিনে নিয়েছে৷ এদিন মুখ্যমন্ত্রীকে একাধিকবার বলতে শোনা যায়, ভাত দেওয়ার ক্ষমতা নেই, কিল মারার গোঁসাই৷ চাকরি দেওয়ার ক্ষমতা নেই, চাকরি খেয়ে নিতে পারে৷

এদিন মমতা আউশগ্রামের জনসভায় চাকরি বাতিলের সূত্র ধরে বলেন, ভুল হয়ে থাকলে সেটা শুধরে নেওয়া যেত৷ কিন্ত্ত কোনও সুযোগই দেওয়া হল না৷ বাংলার স্কুলগুলো কি বন্ধ হয়ে যাবে? বাংলার ছেলেমেয়েরা কি পড়াশুনো করতে পারবে না?

প্রসঙ্গত নিয়োগ দুর্নীতি মামলার রায়ে সোমবার ২০১৬ সালের পুরো প্যানেলটাই বাতিল করে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট৷ তথ্য অনুয়ায়ী ৫ হাজার জনের চাকরিতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে৷ এই ৫ হাজার জনের জন্য কেন বাকি ২১ হাজার জনকে ভুগতে হবে, এই প্রশ্ন তুলে বুধবারই সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে তৃণমূল৷

শুধু হাইকোর্টই নয়, এদিন বিজেপির বিরুদ্ধেও আক্রমণ শানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বুধবার বর্ধমানের আউশগ্রামের সভা থেকে মমতা ঘোষণা করলেন, মাটির কথা শুনুন৷ এবারে আর বিজেপি ক্ষমতায় আসছে না৷ আগের বারে ৩০৩ আসন পেয়েছিল, এবারে আর সেটাও পাবে না৷ এদিন রাজ্য ধরে ধরে বিজেপি কোথায় কত আসন পেতে পারে, তার সম্ভাব্য হিসেবও দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ হাত গুণে হিসেব করে তৃণমূল সুপ্রিমোকে এদিন বলতে শোনা গেল, গোটা দেশে বিজেপির সম্ভাব্য ফলাফল৷ বললেন, উত্তরপ্রদেশে এবারে অখিলেশরা ভালো লড়াই করছে৷ ওখান বিজেপি আর বেশি আসন পাবে না৷ বিহারে অর্ধেক আসনও পাবে না৷ রাজস্থানে তো প্রথম ভোটেই কুপোকাত৷ মধ্যপ্রদেশে অর্ধেক ভোটও পাবে না৷ তামিলনাড়ুতে জিরো, কেরালায় বাম-কংগ্রেসই অধিকাংশ আসন পাবে৷ কর্ণাটক আর তেলেঙ্গানাতেও বিজেপির ফল খারাপ হবে৷ এইভাবে মমতা এদিন হিসেব কষে বোঝাতে চাইলেন, চব্বিশের লোকসভায় বিজেপি আর ক্ষমতায় আসবে না৷

এরপরও বিজেপি ক্ষমতায় এলে দেশের কী বিপদ ঘটবে, সে কথাও জনতার সামনে তুলে ধরলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এই দেশে বিজেপি ফের ক্ষমতায় এলে ধর্ম পালনের অধিকার, কথা বলার অধিকার, জীবন জীবিকার অধিকার খর্ব হবে৷ পনেরো লক্ষ টাকা করে সাধারণ মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট দেওয়ার জন্য বিজেপির মিথ্যে প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন৷ একশো দিনের কাজ, বাংলার আবাস যোজনা, গ্রামীণ রাস্তা নির্মাণ ইত্যাদি প্রকল্পে বাংলাকে বঞ্চনা করার প্রসঙ্গ তুললেন৷

তৃণমূল সুপ্রিমো এদিন নাম না করে নরেন্দ্র মোদিকে ‘প্রচারবাবু’ বলেও মন্তব্য করেন৷ বলেন, সকাল থেকে ঘুমোতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত টেলিভিশন খুললেই ‘প্রচারবাবু’র মুখ৷ আর মুখটা দেখলেই সারাটা দিন গেল৷