মুর্শিদাবাদে তিনটি কেন্দ্রেই জয়ী হব : অধীর চৌধুরি

নিজস্ব সংবাদদাতা, বহরমপুর, ৫ এপ্রিল— মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে বুধবার রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে জনসভা করতে এসে দাবি করেছিলেন মুর্শিদাবাদের তিনটি এবং মালদহের দু’টি আসনে জয়ী হবে বিজেপি প্রার্থীরা৷ কংগ্রেস এবং তৃণমূল তৃতীয় স্থানে চলে যাবে৷ শুভেন্দুবাবুর এই দাবির রেশ না কাটতেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা বহরমপুর কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরি জানিয়ে দিলেন, মুর্শিদাবাদের তিনটি কেন্দ্রেই জয়ী হবে বাম-কংগ্রেস প্রার্থীরা৷ বৃহস্পতিবার জেলার রঘুনাথগঞ্জ রবীন্দ্র ভবনে কর্মিসভা শেষে সাংবদিকদের সামনে খুব স্পষ্ট ভাষাতেই তিনটি লোকসভা কেন্দ্রে জয়ের দাবি করেন অধীর চৌধুরি৷ এদিন তিনি জঙ্গিপুর কেন্দ্রে জোট প্রার্থী কংগ্রেসের মহম্মদ মুর্তজা হোসেন বকুলের সমর্থনে কর্মিসভা করতে আসেন৷ এদিনের সভায় প্রায় পাঁচ শতাধিক কর্মী উপস্থিত ছিলেন৷ এদিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন জঙ্গিপুর মহকুমা সভাপতি হাসানুজ্জামান বাপ্পা, লালগোলা, খড়গ্রাম, নবগ্রাম, সাগরদিঘি ব্লক কংগ্রেস সভাপতি যথাক্রমে যদুরাম ঘোষ, আবুল কাশেম, মীর বাদাম আলি, মুকলেশুর রহমান, জঙ্গিপুর টাউন সভাপতি মোহন মাহাতো প্রমুখ৷ এছাড়াও জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভার বাম-কংগ্রেস নেতৃত্বরা উপস্থিত ছিলেন৷

এদিন কর্মিসভা শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন অধীর চৌধুরি৷ কয়েকদিন আগেই ‘টর্নেডো’য় ক্ষতিগ্রস্ত হয় উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি সহ কয়েকটি জায়গা৷ মানুষের অভিযোগ, তাঁরা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না৷ এ নিয়ে এদিন সাংবাদিকরা অধীরবাবুকে প্রশ্ন করলে, তিনি বলেন, ‘ঝড়ে বাড়ি ভেঙে যাওয়ার জন্য যে কোনও রাজ্য সরকারের কাছে টাকা গচ্ছিত থাকে৷ ভারতবর্ষে কংগ্রেস সরকার ২০০৫ সালে একটা আইন করেছিল, সেই আইন বলে প্রত্যেকটা রাজ্যে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় দ্রুত প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে মোকাবিলা করার জন্য গচ্ছিত টাকা রাখা থাকে৷ সেই টাকা থেকে যে কোনও রাজ্যে সাইক্লোন, বন্যা, ভূমিকম্প, টর্নেডোতে যেসব মানুষ বিপদে পড়ে তাদের টাকা দেওয়ার সুযোগ সেখানে থাকে৷ এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দয়া, দান, কিছু নয়৷ প্রশ্ন হচ্ছে, টাকাটা দিতে দেরি হচ্ছে কেন? টাকা তো পড়ে আছে৷ রাজ্যে রাজ্যে যে টাকাটা পড়ে থাকে, তার নাম রাজ্য প্রাকৃতিক বিপর্যয় তহবিল৷ সেই টাকা দিতে দেরি হচ্ছে কেন? দেব দেব কেন? এখনও দেওয়া হয়নি কেন? আমাদের প্রশ্ন এখানেই৷’

এদিন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে অধীর চৌধুরি বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর একটা সময় ভারতবর্ষে সম্মান এবং মর্যাদা ছিল৷ হঁ্য, সত্যিই উনি বিজেপির বিরুদ্ধে লড়েন৷ কিন্ত্ত আজ সারা দেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির দালাল হিসেবে পরিগণিত হয়েছেন৷ বিজেপির কাছে আত্মসমর্পণকারী নেত্রী উনি৷ কেজরিওয়াল, হেমন্ত সোরেন প্রমুখরা বিজেপির কাছে আত্মসমর্পণ করেনি৷ কিন্ত্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী অনেক আগেই বিজেপির কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন৷ না হলে ‘ইন্ডিয়া’ জোট সৃষ্টিকারী বলে যিনি নিজেকে দাবি করেন, তিনি ‘ইন্ডিয়া’ জোট ছেড়ে পালালেন কেন? তার ব্যাখ্যা আগে দিতে হবে৷ আপনি পলায়নকারী৷ মোদির হাত থেকে বাঁচার জন্য, ইডি-সিবিআইয়ের আক্রমণের হাত থেকে বাঁচার জন্য, আপনার নিজের খোকাবাবুকে বাঁচানোর জন্য আপনি আপনার নৈতিকতাকে, আপনার আদর্শকে বিসর্জন দিয়ে, জলাঞ্জলি দিয়ে মোদির কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন৷ রাজভবনে শাহজাহান, শিবু হাজরা, উৎপল সর্দারদের বাঁচানো জন্য আপনি মোদির কাছে গিয়েছিলেন৷ বেরিয়ে এসে সেদিন আপনি বললেন, আমি গল্প করতে গিয়েছিলাম, কাজের জন্য যাইনি৷ সেদিনই আমাদের বোঝা সাড়া দুইয়ে দুইয়ে চার হয়৷ আর দিদি পাল্টি মারতে ওস্তাদ৷ এটা আমরা সবাই জানি৷ অটলবিহারী বাজপেয়ীদের সঙ্গে উনি কখনও সরকার গড়েছেন৷ বিজেপিকে এই পশ্চিমবঙ্গে নিয়ে এসে একসাথে কখনও লোকসভা, কখনও বিধানসভা নির্বাচন করেছেন৷ দিদির সঙ্গে বিজেপির দোস্তি অনেক পুরনো৷ এই পুরনো দোস্তিকে দিদি একবার ঝালিয়ে নিচ্ছেন, তাই ‘ইন্ডিয়া’ জোট ছেড়ে উনি পালিয়েছেন৷’