এক্সিট পোল অনেকের মুখে হাসি ফুটিয়েছে, অনেকের বাড়িয়েছে উৎকন্ঠা

সপ্তম দফা নির্বাচন শেষে বিভিন্ন সংবাদ চ্যানেলে এক্সিট পােলের ফল পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে আলােড়ন ফেলে দিয়েছে।

Written by Debashis Das and Abhishek Ray Kharagpur | May 21, 2019 3:08 pm

প্রতীকী ছবি (Getty Images)

সপ্তম দফা নির্বাচন শেষে বিভিন্ন সংবাদ চ্যানেলে এক্সিট পােলের ফল পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে আলােড়ন ফেলে দিয়েছে।এক্সিট পােল বা বুথ ফেরত সমীক্ষায় সুব্রত মুখার্জি, বাবুল সুপ্রিয়, মানস ভুইয়া, অর্জুন সিংয়ের মতাে হেভিওয়েটরা ধরাশায়ী হচ্ছেন এই ইঙ্গিত দিয়েছে।

এঁরা অনেকেই চাইছেন সমীক্ষার ফল ভুল বলে প্রমাণিত হােক। আবার সমীক্ষার ফলে এগিয়ে রয়েছেন শুনে অনেকেই আনন্দিত, মিষ্টি বিতরণ করার মতাে ঘটনাও হয়েছে। রাজনীতির পােড় খাওয়া খেলােয়াড়রা সমীক্ষার ফলাফলকে মাথায় রেখে বাড়তি সতর্কতা নিচ্ছেন।

রবিবারের একাধিক বুথ ফেরত সমীক্ষায় দেখানাে হয়েছে মেদিনীপুর কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘােষের কাছে হারছেন তৃণমূল প্রার্থী মানস ভুইয়া। রাজনীতির এই দুদে খেলােয়াড়কে ২০১১ এবং ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তিনি হারছেন বলে বুথ ফেরত সমীক্ষায় দেখানাে হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তিনি জেতেন।

এদিন সাংবাদিক বৈঠক করে মানসবাবু বলেন, আমিই জিতব। বিজেপি এক শ্রেণির মিডিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়ে এজেন্সি মারফত বাস্তব ছবি থেকে বহু দূরে একটা বিভ্রান্তি তৈরি করার জন্য নিজেদের মর্জিমাফিক এই সমীক্ষা করিয়েছেন। লক্ষ্য, আমাদের কর্মীদের মনােবল ভেঙে দেওয়া। আমাদের কর্মীরা গণনাকেন্দ্রে স্ট্রং রুম পাহারা দিচ্ছেন, নজরদারি রেখেছেন।

বিজেপির চিন্তাভাবনা রয়েছে, ইভিএম বদল করার  মানসবাবুর দাবি, তিনি প্রতিদিন আসছে । কর্মী, নেতা, সমর্থকরা মন সতেজ রেখে , কোনওরকম প্ররােচনায় পা না দিয়ে গণনার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে পারে সেটা নিশ্চিত করাই তাঁদের লক্ষ্য। কমিশনের উপর চাপ যে একবিন্দু ঢিলে করতে তিনি রাজি নন তা বুঝিয়ে দিয়েছেন ৪৬ বছরের রাজনৈতিক জীবনসমৃদ্ধ ডা. মানস ভূঁইয়া।

গত বৃহস্পতিবার গণনাকেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে তৃণমূল কর্মীদের ঝামেলা হয়। বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযােগ-জানান মানসবাবু সসামবার খড়গপুরের গণনাকেন্দ্রের নিরাপত্তায় থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সরিয়ে নতুন এক কোম্পানি জওয়ান নিয়ে আসা হয়েছে। টেবিলে চাপড়ে মানসবাবুর দাবি , এক্সিট পােল ভাওতা। তিনিই জিতছেন। মানসবাবুর হিসেব, খড়গপুর সদরে ২৫ হাজার ভােটে পিছিয়ে গেলেও মেদিনীপুর থেকে দশ, খড়গপুর গ্রামীণ থেকে ১২, এগরা থেকে ১৫, দাঁতন থেকে ১৫, নারায়ণগড় থেকে ৫ এবং কেশিয়াড়ি থেকে ১০ হাজার ভােটে তিনি এগিয়ে থাকবেন।

বিভিন্ন বুথফেরত সমীক্ষায় দেখানাে হচ্ছে ঝাড়গ্রামে জয়ী হচ্ছে বিজেপি। সমীক্ষার এই ফলেই উল্লসিত বিজেপি কর্মীরা। রীতিমতাে মিষ্টি বিতরণ শুরু করে দিয়েছেন তারা। তৃণমূল কর্মীদের উদ্দীপিত। করতে মঙ্গলবার ঝাড়গ্রামের দায়িত্বে থাকা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঝাড়গ্রাম আসছেন। সমীক্ষার ফলাফলকে গুরুত্ব না দিয়ে কর্মীরা যাতে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে গণনাকেন্দ্রে ২৩ মে যান এটা নিশ্চিত করাই পার্থবাবুর লক্ষ্য।

বুথ ফেরত সমীক্ষায় শুয়ে পড়েছেন আসানসােলের বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়। ২০১৪ সালে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে পদ্ম ফুটেছিল আসানসােলে। সেই দ্বন্দ্ব এড়াতে রুপালি পর্দার মুনমুন সেনের উপর বাজি ধরেছিল। তৃণমূল। সেই লক্ষ্যে তৃণমূল সফল অন্তত বুথ ফেরত সমীক্ষা সেটাই দেখাচ্ছে। তৃণমূল অন্তত এখানে চাইছে সমীক্ষা ঠিক থাক । 

কিন্তু আসানসােলের বিজেপি কর্মীরা চাইছে ভুল প্রমাণিত হােক বুথ ফেরত সমীক্ষা। একই ছবি বারাকপুরেও। আত্মমর্যাদার লড়াইয়ে এখানে লড়াই বিজেপির অর্জুন সিংরে সঙ্গে তৃণমূলের দীনেশ ত্রিবেদীর। দীনেশকে দল এবারও প্রার্থী ঘােষণা করার পরে দল ছেড়ে বিজেপির প্রার্থী হন অর্জুন। নির্বাচনের দিন বিরােধী দলের দুষ্কীদের তাড়া করতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছিলেন অর্জুন। বুথ ফেরত সমীক্ষায় ইঙ্গিত নির্বাচনী লড়াইয়েও তিনি পর্যদস্ত হতে চলেছে । অর্জুনের আপাতত ভাটপাড়ার এই নেতার ইমেজ যেন টোল না খায় ।

বুথ ফেরত সমীক্ষায় অবশ্য অনেক হেভিওয়েট নেতারই উল্টে যাওয়ার ইঙ্গিত। সেরকমই একটি কেন্দ্র বাঁকুড়া। রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি নির্বাচনী লড়াইয়ে পর্যদস্ত হবেন বিজেপির সুভাষ সরকারের কাছে এমনটাই ইঙ্গিত। সুব্রত অনুগামীরা এই সমীক্ষা মানতে একেবারেই রাজি নন। বিষ্ণুপুর কেন্দ্রে আদালতের রায়ে প্রচারেই যেতে পারেননি বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁ। নির্বাচনের পরের দিনই সােশ্যাল মিডিয়ায় সৌমিত্র জানিয়েছিলেন, তিনিই জিতছেন। বুথ ফেরত সমীক্ষাও জানাল, সৌমিত্রই বিষ্ণুপুরে জয়ী হতে চলেছেন। নিঃসন্দেহে এই আভাস সত্য হলে নির্বাচী রাজনীতিতে বড় চমক অপেক্ষা করছে।

বিষ্ণুপুর নির্বাচনী এলাকার বাইরে বসে সৌমিত্রও সমীক্ষার এই ফলাফল সঠিক হােক, এই প্রার্থনাই করেছেন। দমদমে পা দিয়ে বিজেপির সুবক্তা প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্য বলেছিলেন, সৌগতবাবুকে হারাতে নয়, বিশ্রাম দিতে এসেছি। বুথ ফেরত সমীক্ষা বলছে, শমীক হারছেন। নির্বাচনের আগে সিপিএম নেতার সঙ্গে শমীক ও মুকুল রায়ের বৈঠক নিয়ে নাকাল হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। সিপিএমের ভােট টানার ক্ষেত্রে খামতিই কি তাকে পরাজয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, আগামী তিনদিন এই কথাটাই বােধহয় চিন্তা করবেন শমীক।

বুথ ফেরত সমীক্ষায় তিনি জয়ী, কিন্তু বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘােষ। মনে করেন, সমীক্ষা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। পশ্চিমবঙ্গের আরও বেশি সংখ্যক আসনে বিজেপি জয়লাভ করতে চলেছে। বুথ ফেরত সমীক্ষা নিয়ে এই অভিব্যক্তি ও প্রতিক্রিয়ার মহাসমুদ্রই নির্বাচনী রাজনীতির শেষ বেলায় বড় পাওনা।