বেশভুষায় বাঙালিয়ানার ছাপ, কণ্ঠে অন্নদামঙ্গলের সংলাপ, মোদির ভার্চুয়াল উদ্বোধনে একুশের নির্বাচনের ঝাঁঝ

বেশভূষায় বাঙালিয়ানার ছাপ,কণ্ঠে অন্নদামঙ্গলের সংলাপ,যষ্ঠীর দিন দুর্গাপূজা উদ্বোধনে একুশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বঙ্গ রাজনীতিতে নতুন মাত্রা প্রধানমন্ত্রীর।

Written by SNS Delhi | October 23, 2020 2:08 am

(ছবি-টুইটার/@BJP4India)

বেশভূষায় বাঙালিয়ানার ছাপ, কণ্ঠে অন্নদামঙ্গলের সংলাপ, যষ্ঠীর দিন দুর্গাপূজা উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে একুশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার আগে বঙ্গ রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যােগ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর আগে ভারতের কোন প্রধানমন্ত্রী দুর্গাপুজো উদ্ধোধন করে এভাবে ভাষণ দিয়েছে কিনা তা মনে করতে পারছেন না অনেকেই। প্রধানমন্ত্রী নিজের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এদিন অতি সন্তর্পনে একুশের নির্বাচনকে লক্ষ্য করে জোরালাে বার্তা দেন।

পূর্বপরিকল্পনা মতই বৃহস্পতিবার দিল্লি থেকে সল্টলেক পূর্বাঞ্চলীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে বিজেপি আয়োজিত পুজোর উদ্ধোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়, অরবিন্দ মেনন, শিব প্রকাশ।

সকাল ১০ টা থেকে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এদিন সংশ্লিষ্ট পুজোমণ্ডপে মহিষাসুরমর্দিনী- র উপস্থাপনা করেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী ডােনা গঙ্গোপাধ্যায় এবং তার দল। দীর্ঘদিন ধরেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে গেরুয়া শিবিরের সুসম্পর্ক নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। প্রধানমন্ত্রীর পুজো উদ্ধোধনের আগে পুজোমণ্ডপে ডােনা গঙ্গোপাধ্যায়ের বিশেষ শৈল্পিক উপস্থাপনার পর নতুন করে রাজনৈতিক সমীকরণ সাজাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

এদিন ভার্চুয়াল মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী পূজামণ্ডপে উপস্থিত হতেই উলুধ্বনি, শঙ্খ বাজিয়ে তাকে স্বাগত জানানাে হয়। বাবুল সুপ্রিয় রবীন্দ্র সংগীত গেয়ে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রীকে।

ঠিক বেলা বারােটার সময় বঙ্গবাসীর উদ্দেশ্যে বার্তা দেন নরেন্দ্র মােদি। নিজের আধঘণ্টার বক্তব্যে একাধিক বাংলা কবিতার পংক্তি শােনা যায় তার কণ্ঠে। তিনি বলেন, বাংলা ভাষা এতটাই মিষ্টি যা কল্পনা করা যায় না। তার বক্তব্যে যদি উচ্চারণগত কোনাে ত্রুটি থাকে তার জন্য আগেভাগে ক্ষমা চেয়ে নেন তিনি।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই দিন বাংলা ভাষাতেই বক্তব্য রাখতে শুরু করেন নরেন্দ্র মােদি। তিনি জানান, দূর্গাপূজা উৎসব ভারতের পরিপূর্ণতাকে এক নতুন নতুন ঔজ্জ্বল্য দেয়। পরে অবশ্য হিন্দিতেই বক্তব্য রাখেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মা দুর্গার মত সকল মা চান যেন তার সন্তান থাকে দুধে – ভাতে। আর সেটা তখনই সম্ভব যখন সকল চাষী বন্ধুরা আত্মনির্ভর হবেন। অন্নদামঙ্গল  এর এই বিখ্যাত উদ্ধৃতি সামনে রেখে আদপে রাজ্য সরকারকে সন্তর্পনে আক্রমণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাদের কথায়, কৃষক যােজনার যে অর্থ কেন্দ্রীয় সরকার দিচ্ছে তা নিতে অস্বীকার করে রাজ্য সরকার। আর সেই জন্যই নিজের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এই বিষয়টি তুলে ধরেছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মহিষাসুরকে বধ করার জন্য দেবী দুর্গার একাই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু তা সত্বেও তিনি সমস্ত দেবতা কুলকে একত্রিত করে দুর্গতি নাশ করেন।

এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদির বক্তব্য উঠে এসেছে বঙ্কিমচন্দ্র, জগদীশচন্দ্র বসু, মাতঙ্গিনী হাজরা, উত্তম-সুচিত্রা, ঋত্বিক ঘটকদের নাম। শুধু তাই নয় মতুয়া এবং রাজবংশী সম্প্রদায়ের প্রাণপুরুষ হরিচাঁদ ঠাকুর পঞ্চানন বর্মা নামও শােনা যায়া মােদির কণ্ঠে। তিনি আরও বলেন, দুর্গাপূজায় গােটা দেশটাই বাংলা হয়ে যায়।

নিজের বক্তব্যের শেষভাগে নরেন্দ্র মােদী বলেন, মা দুর্গা আর মা কালীর কাছে প্রার্থনা করি যেন প্রত্যেক বছর এই ভাবেই মায়ের পুজো এবং সেবা করে যেতে পারি। পাশাপাশি বঙ্গ বিজেপি কর্মীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের কাছে গিয়ে তাদের জাগ্রত করুন।

মােটের ওপর প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের প্রত্যেকটি প্রতি পরতে পরতে ছিল বাঙালি মন ছুঁয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা। একই সঙ্গে তার চমক ছিল তার বেশভূষাতেও। অযােধ্যার রাম মন্দিরের ভুমি পূজা অনুষ্ঠানে তিনি যে সােনালী পাঞ্জাবি এবং সাদা ধুতি পরেছিলেন, ষষ্ঠীর দিন বঙ্গবাসীর উদ্দেশ্যে বার্তা রাখার সময় একই সাজে দেখা গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে। গলার উত্তরীয় বাঙালিদের মত করে কাঁধের একদিকে ফেলে রেখেছিলেন তিনি। যষ্ঠীর দিন প্রধানমন্ত্রী ভাষণ আগামী দিনে বঙ্গ রাজনীতিতে ঠিক কি প্রভাব ফেলে এখন তাই দেখার।