ভারতীয় রাজনীতি এখনও নারীদের সম্মান রক্ষার ক্ষেত্রে উদাসীন৷ অথচ ভারতীয় রাজনীতিতে প্রায় সব দলেরই নেতানেত্রীরা অবিরত নারীশক্তির আবহন করে থাকেন৷ প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলই নারীদের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের ভোটের ঝুলি ভরতে বদ্ধপরিকর৷ অথচ যখন বাস্তবে ন্যায়বিচারের প্রশ্নটি নিয়ে সোচ্চার হতে বাধ্য হয় নারীসমাজ, তখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন দল তাদের দাবি উপেক্ষা করাটাই শ্রেয় মনে করে এবং এটাকেই রাজনৈতিকভাবে লাভজনক বলে মনে করে৷ এরই সব থেকে প্রত্যক্ষ এবং সাম্প্রতিক প্রমাণ ভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের প্রাক্তন প্রধান এবং বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার একাধিক অভিযোগ এবং তৎপরবর্তী ঘটনাবলি৷
ভারতের সেরা এবং বিশ্বখ্যাত কুস্তিগিররা রাজপথে নামার পরও কেন্দ্রীয় সরকার ও শাসকদলের টনক নড়েনি৷ প্রথমে তাদের শীর্ষ নেতৃত্বের মৌনব্রত পালন এবং অতঃপর বহু টালবাহানার পর অবশেষে কিঞ্চিৎ আশার আলো দেখা যায়৷ দায়রা আদালত আদেশ দিয়েছে যে ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩৫৪ এবং ৩৫৪-এ ধারা মোতাবেক ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করতে হবে৷ ন্যায় বিচারের দৃষ্টিতে যা স্বাভাবিক, সেই পথটুকু পর্যন্ত পেঁৗছতে প্রতিবাদকারীদের যে পরিমাণ বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে, তার থেকেই এটা সম্পষ্ট হয়ে ওঠে যে ভারতীয় রাজনীতি এখন নারীদের সম্মান রক্ষায় যথাযোগ্য মর্যাদা দেয় না৷
Advertisement
আদালতে উল্লেখিত নির্দেশটি স্রেফ প্রাথমিক পদক্ষেপ৷ কারণ ভারতীয় রাজনীতিতে ক্ষমতাতন্ত্র স্রেফ ব্যক্তি নয়, তার পরিবার মারফৎ বিস্তৃত হতে থাকে৷ এর জাল ছিঁড়ে ফেলা খুবই কঠিন ব্যাপার৷ পরিবারবাদের বিরুদ্ধে যে দলটি সবচেয়ে বেশি সমালোচনা মুখর, সেই বিজেপি ব্রিজভূষণের লোকসভা কেন্দ্র কাইসারগঞ্জে টিকিট দিয়েছে তাঁরই পুত্র করণভূষণ সিংকে৷ এর থেকেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, আগামী দিনে আইনি লড়াইয়ের পথটি খুব একটা কুসুমাস্তীর্ণ হবে না৷
Advertisement
আন্তর্জাতিক স্তরেও, নারীদের যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে সরব হতে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছিল যে #মিটু আন্দোলন, সেটিও কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে নিউ ইয়র্ক কোর্ট অফ অ্যাপিলস-এর একটি আদেশে৷ ‘মিটু’ আন্দোলনে অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত হার্ভে উইনস্টাইনের বিরুদ্ধে যে রায়, তা খারিজ করে দিয়েছে নিউইয়র্কের এই আদালত৷
তবে আশার কথা, শত বাধা-বিপত্তি এবং পুরুষতান্ত্রিক রাজনীতির রক্তচক্ষু সত্ত্বেও বহু নারী লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ বিশ্বের নানা প্রান্তে তো বটেই, ভারতে, এমনকী এই রাজ্যেও৷ রাজনীতি যদি নারীদের কণ্ঠস্বর না শোনে, তাকে শুনতে বাধ্য করার জন্য নিরবচ্ছিন্ন লড়াই চালিয়ে যেতে হবে নারীদেরই৷
আইনসভার ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণের ইতিবৃত্ত সকলেরই মনে আছে৷ বিস্তর জলঘোলা করার পর পার্লামেন্টে বিল পাস হলেও সংরক্ষণের সুবিধা ভারতীয় নারীরা বাস্তবে কবে পাবেন? সংশয় এখনও কাটেনি৷ অন্যদিকে গৃহকোণ থেকে কর্মক্ষেত্র, রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব পর্যন্ত প্রায় সর্বত্র জারি রয়েছে বৈষম্যের ‘ঐতিহ্য’৷ মেয়েদের প্রতি বঞ্চনা, বৈষম্য দূর করার কথা আন্তরিকতার সঙ্গেই ভেবে চলেছেন একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বাংলায় একে একে চালু হয়েছে কন্যাশ্রী থেকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পর্যন্ত অনেক প্রকল্প৷ বাংলায় নারীর সশক্তিকরণের সদিচ্ছা ধরা পড়েছে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত গঠনেও৷ বিধায়ক ও সাংসদ সংখ্যার বিচারেও বাংলার শাসক দল রেখেছে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত৷ তৃণমূলের লোকসভার প্রার্থী তালিকা বলে দিচ্ছে মমতার দলই আসলে নারী শক্তির প্রকৃত মূল্যায়ন করছে৷ তারই ইতিবাচক প্রভাব এবার বাংলাজুড়ে বুথে বুথে ভোটদান চিত্রে৷ ভোটদানে পুরুষদের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে এখানে নারীরা৷ সব দলেই উচিত, বড় বড় ভাষণ ছেড়ে নারীশক্তির বিকাশে যথার্থ আন্তরিক হওয়া৷
Advertisement



