মেদিনীপুরে অন্তর্ঘাতের আশঙ্কায় ভুগছে তৃণমূল, বিজেপি দু’দলই

Written by SNS May 24, 2024 12:49 pm

অভিষেক রায়, খড়গপুর, ২৩ মে— মেদিনীপুর লোকসভা আসনে এবার নির্বাচনী লড়াইয়ে মুখ্য দুই প্রার্থী বিজেপির অগ্নিমিত্রা পাল এবং তৃণমূলের জুন মালিয়া৷ এই দুই প্রার্থী নাম ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারে নেমে পডে়ন৷

প্রায় দুমাস নির্বাচনী প্রচার চালাবার পরেও জয়ের প্রশ্নে কেউই নিশ্চিত নন৷ ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে নিশ্চিন্ত থাকার কথা বিজেপির অগ্নিমিত্রা পালের৷ খড়গপুর বিধানসভা এলাকা ছাড়া বাকি ৬টি বিধানসভাতেই এগিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ৷ এর মধ্যে খড়গপুর সদর বিধানসভা তৈরি করে দিয়েছিল ৪৫ হাজার ভোটের ব্যবধান৷ এই হিসেব মাথায় রাখলে নিশ্চিন্ত থাকার কথা অগ্নিমিত্রা পালের৷ মেদিনীপুরে পৌঁছে অগ্নিমিত্রা জানিয়ে দিয়েছিলেন, দিলীপদার আশীর্বাদ আমার সঙ্গে রয়েছে৷ তিনি সাংসদ হিসেবে প্রচুর কাজ করেছেন৷ যে কাজ বাকি রয়ে গিয়েছে সেই কাজ আমি শেষ করব৷ ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল মাথায় রাখলে অগ্নিমিত্রার পক্ষে জয় অনেকটাই দুরুহ বলে মনে হতে পারে৷ একমাত্র খড়গপুর সদর বিধানসভা ছাড়া বাকি ছ’টি বিধানসভা এলাকাতেই জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থীরা৷ এই হিসেব মাথায় রাখলে জুন মালিয়া সামনে অগ্নিমিত্রা পাল কোন প্রতিরোধ তৈরি করতে পারবেন বলে মনে হয় না৷

কিন্ত্ত রাজনীতি অতি বিচিত্র বস্তু৷ তাই ২০২১ সালের নির্বাচনে মেদিনীপুর শহরে যে জুন মালিয়া ভালো ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন৷ সেই মেদিনীপুরে জয় আসবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব৷ দল অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা করছে৷ এই আশঙ্কা যে অমূলক নয় তা পরিষ্কার হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের মেদিনীপুর শহরে রোড শো এ৷ রাস্তার দু’পাশে লোকজনের অপ্রতুলতা দেখে মাঝ রাস্তায় দাঁডি়য়ে পডে়ন মমতা৷ মিছিলের পিছনেও লোকজন ছিলেন সামান্য৷ পরিস্থিতি সামলাতে পিছনের লোকজনকে রাস্তার দুপাশে দাঁড় করিয়ে কোনো রকমে রোড শো শেষ করতে হয়৷ মেদিনীপুর শহরে কেন এই দশা তৃণমূল কংগ্রেসের, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতা বলেন, শহর তৃণমূল সভাপতির সঙ্গে বিধায়কের বনিবনা নেই৷ বিধায়কের অনুগামী পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়ে পৌরসভায় ধরনাতে বসেছিলেন তৃণমূলের কাউন্সিলরদের একাংশ৷ সেই চিড় রয়ে গিয়েছে৷ এই কাউন্সিলররা কতটা জুন মালিয়ার হয়ে ভোট করাবেন তা নিয়ে তীব্র সংশয় রয়েছে৷

উলটো দিকে বিজেপি প্রার্থীর মাথাব্যথা দিলীপ ঘোষের ছায়া৷ দিলীপ ঘোষকে মেদিনীপুর থেকে বর্ধমান দুর্গাপুরে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত অনেক দিলীপ অনুগামী মেনে নিতে পারেননি৷ তারা অগ্নিমিত্রা পালকে হৃদয় থেকে গ্রহণ করতে পারেননি৷ দিলীপবাবুকে ঘিরে যে উচ্ছ্বাস কর্মীদের একাংশের মধ্যে দেখা যেত সেই উচ্ছ্বাস অগ্নিমিত্রাকে ঘিরে এবার চোখে পডে় পডে়নি, এ কথা অনস্বীকার্য৷ কর্মীরা যেখানে বলেছেন অগ্নিমিত্রা সেখানেই ছুটে গিয়েছেন৷ তাদের আবদার শুনে প্রচার চালিয়েছেন৷ কিন্ত্ত আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন কিনা সেটা বোঝা যাবে ৪ জুন৷ দিলীপবাবু নিজের নির্বাচন পর্ব শেষে খড়্গপুরে এসেছেন৷ প্রধানমন্ত্রীর মঞ্চেও ছিলেন৷ কিন্ত্ত অগ্নিমিত্রার সঙ্গে যৌথ প্রচারে দিলীপবাবুকে দেখা যায়নি৷ তিনি নিজের মত করে বিভিন্ন এলাকায় প্রচার চালিয়েছেন৷ এর ফলে ভোটের কাজে দিলীপ অনুগামীরা কতটা মন দেবেন, অন্তর্ঘাত করবেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে৷

ফলে খড়গপুর সদর বিধানসভায় ৪৫ হাজারের লিড ধরে রাখা যাবে না বলেই মনে হয়৷ গত লোকসভায় তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন মানস ভূঁইয়া৷ মানসের ব্যবহারে তৃণমূল কর্মীদের একাংশ ক্ষুব্ধ ছিলেন৷ অন্যদিকে জুন মালিয়ার ব্যবহার নিয়ে তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে কোন মাথাব্যথা নেই৷ তিনি সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য, সেইসঙ্গে রয়েছে লক্ষীর ভান্ডার নিয়ে লাগাতার প্রচার৷ ফলে খড়গপুর সদরে ভালো ফল করার জন্য আশাবাদী তৃণমূল কংগ্রেস৷ এখানেও বাদ সাধছে তাদের দলের অন্তর্ঘাত৷ সেই ধাক্কা সামলে তৃণমূল কংগ্রেস খড়গপুর সদর বিধানসভায় ভালো ফল করতে পারে কিনা তার দিকে তাকিয়ে থাকবে গোটা মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্র৷

নারায়ণগড় বিধানসভায় বিধায়কের ব্যবহার নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে সাধারণ মানুষদের মধ্যে৷ ফলে এই আসনে ভালো ফল করার ব্যাপারে বিজেপি আশাবাদী৷ তৃণমূলের অনেক পুরনো নেতা দল বদল করেছেন, যাদের ছোট ছোট এলাকায় প্রভাব রয়েছে৷ এরাই তৃণমূলের মাথাব্যথা৷

আরেকটা ফ্যাক্টর হচ্ছে শুভেন্দু অধিকারী৷ তিনি যে মরুভূমিতেও ফুল ফোটাতে পারেন তা নিয়ে মেদিনীপুরের তৃণমূল নেতাদের মধ্যে কোন সংশয় নেই৷ তাই অনেক হিসেব তাদের নতুন করে কষতে হচ্ছে৷ নিঃসন্দেহে শুভেন্দু প্রচারের আলোর বাইরে দাঁডি়য়ে কি পদক্ষেপ নেন সেটাও মেদিনীপুর লোকসভার ফলাফলকে অনেকাংশে প্রভাবিত করবে৷

দলীয় অন্তর্ঘাত কোন দলের কতটা তীব্র হয় তার উপরেই দাঁডি়য়ে রয়েছে মেদিনীপুর লোকসভা আসনের ফলাফল৷