নিজের কাজের ইস্তেহার প্রকাশ কাকলির

Written by SNS April 15, 2024 12:35 pm

টানা পনেরো বছর বারাসতের ‘ঘরের মেয়ে’-র তকমা

নিজস্ব প্রতিনিধি— আর দিন চারেকের অপেক্ষা মাত্র, তারপরই শুরু হচ্ছে লোকসভা নির্বাচন৷ রাজনৈতিক দলগুলির শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি তুঙ্গে৷ এর মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তথা তিনবারের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার ইস্তেহার প্রকাশ করলেন মধ্যমগ্রাম তৃণমূল কার্যালয়ে৷ ইস্তেহারে বর্ণিত হলো তাঁর যাবতীয় উন্নয়নমূলক কাজের খতিয়ান৷ বারাসত জেলা হাসপাতালকে মেডিকেল কলেজে রূপান্তর থেকে মেট্রো লাইন স্থাপন কোনো দিকই বাদ যায়নি ইস্তেহারে৷ বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের মানুষের কোনো সমস্যাই উপেক্ষিত হয়নি কাকলি ঘোষ দস্তিদারের নজরে৷
বারাসত লোকসভা কেন্দ্র সুবিস্তৃত, রাজারহাট – নিউটাউন থেকে সুদূর দেগঙ্গা পর্যন্ত ৭টি বিধানসভা রয়েছে এর অন্তর্গত৷ এই সুবিশাল কেন্দ্রের প্রত্যেক কোনায় কোনায় পৌঁছে মানুষের সমস্যা শুনে তার সমাধান করে দিয়েছেন কাকলি৷ তাঁর সংসদীয় এলাকায় কোনো কাজই অসম্পূর্ণ থেকে যায়নি৷

ইস্তেহার প্রকাশ করে তারই প্রমান দিয়ে দিলেন কাকলি৷ স্বল্প শব্দের মধ্যে তাঁর উন্নয়নমূলক কাজের ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব নয়৷ গোটা সংসদীয় এলাকার কাঁচা রাস্তা থেকে ঢালাই রাস্তা এবং ঢালাই রাস্তা থেকে পিচ রাস্তায় উত্তরণের পেছনে কাকলির অবদান অনস্বীকার্য৷ খেলার মাঠ থেকে গ্যালারি, শিশু উদ্যান থেকে বিদ্যালয় সবেরই সংস্কার করেছেন তিনি৷ একদিকে যেমন গোটা বারাসত শহরে সিসিটিভি বসিয়ে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলেছেন শহরকে তেমনি হাই মাস্ট লাইট বসিয়ে আলোকিত করে তুলেছেন নিজ সংসদীয় এলাকাকে৷ কখনও প্রাপ্ত টাকার খরচে আবার কখনও বা নিজের ব্যক্তিগত খরচে প্রত্যেক বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন পানীয় জল৷ ডাম্পিং মেশিন বসিয়ে, নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়ন করে, পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে শৌচালয় স্থাপন করে সংসদীয় এলাকাকে করেছেন দূষণমুক্ত৷ নিজে একজন চিকিৎসক হওয়ায় চিকিৎসা ক্ষেত্রকে অবহেলিত হতে দেখতে পারেননি কাকলি৷ শুধু মাত্র বারাসত সদর হাসপাতালকে মেডিকেল কলেজে রূপান্তরিত করেই দায় সারেন নি, চিকিৎসা কাঠামোয় এনেছেন আপাদমস্তক বদল৷ চব্বিশ ঘন্টাই চিকিৎসা পরিষেবাকে সুনিশ্চিত করেছেন৷ বালিকা বিদ্যালয়গুলিতে স্যানিটারি ন্যাপকিন দিয়ে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করেছেন তিনি৷ একজন চিকিৎসকের চোখে শিক্ষাক্ষেত্র কখনই উপেক্ষিত হতে পারে না৷ এমপি স্কলারশিপ শুরু করা থেকে ছাত্রছাত্রীদের কাছে ব্যক্তিগত উদ্যোগে পড়াশোনার প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া সবই করেছেন তিনি৷

কাকলি ঘোষ দস্তিদারের উন্নয়নমূলক কার্যাবলীকে কটাক্ষ করে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য আহমেদ আলী খান বলেন, বারাসত শহরের বাইরে কাকলি ঘোষ দস্তিদারের হাত ধরে কোনো উন্নয়নই হয়নি৷ তহবিলের টাকা নষ্ট হয়েছে৷ যদিও এর পাল্টা জবাব দিয়েছেন কাকলিও৷ তিনি বলেছেন, আহমেদ আলী খানের চোখের ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজনীয়তা আছে৷ এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, কাকলি ঘোষ দস্তিদার একজন সাংসদ হিসেবে পরিচিত হলেও তাঁর প্রথম পরিচয়, তিনি একজন চিকিৎসক৷ তিনি চাইলেই চিকিৎসক হয়ে জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পারতেন৷ কিন্ত্ত তৎকালীন সময়ে বামেদের অনৈতিক কার্যকলাপ, জনবিরোধী নীতি, শোষণমূলক রাজনীতি, মহিলাদের ওপর চলতে থাকা বামেদের নির্যাতন তাঁকে প্রতিবাদী করে তোলে৷ ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকেন এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সান্নিধ্যে এসে তিনি অনুপ্রাণিত হন৷ আপামর মানুষের সেবায় নিজেকে নিযুক্ত করার জন্য মমতা বন্দোপাধ্যায়ের হাত ধরে রাজনৈতিক ময়দানে পদার্পন করেন আর সেখান থেকেই শুরু হয় কাকলির লড়াই৷ ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বারাসত লোকসভা কেন্দ্র থেকে তিনি প্রার্থী হন এবং বিপুল ভোটে জয়যুক্তও হন৷ এরপর থেকে টানা ১৫টি বছর একনাগাড়ে মানুষের ভরসার কাঁধ হিসেবেই তিনি রয়েছেন৷ পেছনে ফিরে দেখলে বোঝা যাবে এই পনেরো বছরের লড়াই সহজ ছিলোনা৷ কখনও লোকসভার অভ্যন্তরে অথবা বাইরে যেকোনো জনবিরোধী বিলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন৷ মহিলাদের সম্মান রক্ষার্থে, মহিলাদের হয়ে প্রতিবাদ জানাতে কখনও ছুটে গেছেন উত্তরপ্রদেশ আবার কখনও ছুটে গেছেন মনিপুর৷ লোকসভায় তাঁর কড়া ভাষার বক্তব্য বিরোধীদের বিদ্ধ করেছে৷ নিজ সংসদীয় কেন্দ্র তো বটেই পাশাপাশি রাজ্যের যেকোনো সমস্যায় ঢাল হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়েছেন কাকলি৷ কেন্দ্রের বকেয়া আবাস ও একশো দিনের কাজের টাকা আনতে অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দিল্লি থেকে কলকাতার রাজপথে বসে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন৷ মানবিকতার খাতিরে এবং তাঁর নিজস্ব শিক্ষার দমে বাংলার চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতিনিধিত্ব করেছেন বিশ্বের দরবারে৷ চিকিৎসক হওয়ার সুবাদে নিরলস চেষ্টা ও গবেষণা চালিয়ে সন্তানহীন মহিলাদের মাতৃত্বের সুখ দিয়েছেন৷ কেবল সামাজিক সমস্যা নয়, মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়ে শুনেছেন তাদের ব্যক্তিগত সমস্যাও৷ সাধ্য মতো সমাধানও করেছেন৷ এক কথায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার কেবল একজন প্রতিবাদী সাংসদ কিংবা চিকিৎসক নন৷ তাঁর মানবিকতা তাঁকে বারাসতের ‘ঘরের মেয়ে’ এর পরিচয় দিয়েছে৷

এদিনের ইস্তেহার প্রকাশ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ, বারাসত পৌরসভার পৌরপ্রধান অশনি মুখোপাধ্যায়, বারাসত শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অরুন ভৌমিক, দেগঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি আনিসুর রহমান, কর্মাধ্যক্ষ মফিদুল হক সাহাজি, সুনিল মুখার্জি এছাড়াও ছিলেন ছাত্র পরিষদের নেতৃত্বরা৷