• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

কচ্ছপ মাছ ও দুষ্টু সাপ

একদিন সব মাছেরা মিলে পাড়ের ধারে কচ্ছপ সর্দারের কাছে হাজির হল। তাদের মুখপাত্র অনুনয় করে বলল, সর্দার, তোমরা জলে ও স্থলে সব জায়গায় থাকতে পারো।

কাল্পনিক চিত্র

রবীন বসু

এক বড় জলাশয়ে অনেক মাছ আর কিছু কচ্ছপ বাস করত। তারা বেশ আনন্দ ও খুশিতে ছিল। সারাদিন মনের আনন্দে স্বচ্ছ জলে সাঁতার কেটে বেড়াত। জলাশয়ের চারপাশে প্রচুর গাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকত। তাদের ঘন পাতায় রোদের রঙ খেলা করত। আর সেই গাছের ডালে এসে বসত কত রকমের পাখি। কত তাদের রঙ। কত বিচিত্র তাদের ডাক। বক চিল পানকৌড়ি কাঠঠোকরা ফিঙে আরও কত পাখি। তাদের কাকলিতে ভরে থাকত চারপাশের পরিবেশ। গাছেদের ফাঁক দিয়ে সরু সুন্দর এক রাস্তা চলে গেছে, যা জলাশয়ের চারদিক বেষ্টন করে ছিল। অনেক বয়স্ক মানুষ সকাল বিকেল ওই পথ ধরে হাঁটতে আসত। কখনো-বা ক্লান্ত হয়ে গাছের গোড়ায় বাঁধানো চাতালে বসে পড়ত। দু’কান ভরে পাখিদের ডাক শুনত। মাছেদের জলকেলি দেখত। জলাশয়ে জলে শাপলা ও পদ্ম ফুটে থাকত। আবার ধার ধরে অনেক লতাগুল্মের ঝোপও ছিল। কলমিঝোপে বেগুনি রঙের সুন্দর ছোট্ট ফুল ফুটত। কচ্ছপেরা সারাদিন জলে সাঁতার কেটে আহার সংগ্রহ করে সন্ধ্যার পর জলাশয়ের পাড়ে উঠে গর্তের মধ্যে ঢুকে বিশ্রাম নিত।

Advertisement

কিন্তু তাদের সেই নিরবচ্ছিন্ন সুখের দিন স্থায়ী হল না। এক ভয়ানক দুষ্টু সাপ কোথা থেকে যেন এসে পড়ল সেই জলাশয়ে। যেমন লম্বা তার চেহারা, তেমন চক্রাবক্রা রঙ। চোখে জ্বলছে হিংসা। মাছেদের ধরে ধরে খেতে লাগল। কচ্ছপগুলোকে তাড়া করে জলাশয় ছাড়া করতে চাইল। গর্তে ঢুকে তাদের পাড়া ডিমগুলো খেয়ে নিতে শুরু করল। মাছ এবং কচ্ছপেরা উভয়েই ভীষণ বিপদে পড়ল। তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে শুরু করল। তারা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল।

Advertisement

একদিন সব মাছেরা মিলে পাড়ের ধারে কচ্ছপ সর্দারের কাছে হাজির হল। তাদের মুখপাত্র অনুনয় করে বলল, সর্দার, তোমরা জলে ও স্থলে সব জায়গায় থাকতে পারো। কিন্তু আমাদের তো সে উপায় নেই। দুষ্টু সাপ আমাদের সব তাড়া করে খেয়ে ফেলছে। তোমাদের ডিমও খাচ্ছে‌, এটা তো বন্ধ করতে হবে। ওর হাত থেকে আমাদের রক্ষা করার একটা উপায় বের করো।

কচ্ছপ সর্দার কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, ঠিকই তো। আমাদের সামনে ঘোর বিপদ। ওই দুষ্টু সাপকে জলাশয় থেকে চিরতরে তাড়াতে হবে। তা না হলে আমাদের রক্ষা নেই। তারপর বলল, আজ তোমরা জলে ফিরে যাও। রাতটা আমাকে ভাবতে দাও। কাল ঠিক উপায় বের করব।

মাছেরা দুশ্চিন্তা নিয়ে ফিরে গেল জলের গভীরে। আশা, কচ্ছপ সর্দার ঠিক একটা উপায় বের করবে। এরপর দু’দিন কেটে গেল। সর্দার-কচ্ছপ সব কচ্ছপকে ডেকে বলে দিল, গর্তে যেখানে ডিম আছে, তার মুখে ঘাস লতাপাতা এনে জড়ো করতে। বেশ ঘন করে জালের মতো তৈরি করতে হবে। অন্য কচ্ছপরা তাই করল। দুষ্টু সাপ যথারীতি তার প্রিয় খাবার কচ্ছপদের ডিম খেতে এল। গর্তে ঢুকতে যেতেই সেই খড়কুটো ও ঘাসের তৈরি জালে আটকে পড়ল। যত ছটফট করতে লাগল তত আরো জড়িয়ে একরকম বন্দি হয়ে পড়ল। ঠিক সেই সময় আকাশে চক্কর দিচ্ছিল কয়েকটা চিল। তারা দ্রুত নিচে নেমে এসে দুষ্টু সাপের দেহটা তাদের ধারালো ঠোঁট দিয়ে ছিন্নভিন্ন করে ফেলল। তারপর এক একটা চিল এক এক টুকরো মুখে নিয়ে গাছের ডালের দিকে উড়ে গেল। এদিকে জলের মাছ আর ডাঙার কচ্ছপ সবাই আনন্দ করতে লাগল। তারা আজ দুষ্টু সাপের কবল থেকে মুক্ত। সবাই মিলে কচ্ছপ সর্দারের বুদ্ধির তারিফ করতে লাগল।

এইভাবে দুষ্টু সাপের হাত থেকে সেদিন জলাশয়ের মাছ ও কচ্ছপেরা মুক্তি পেল।

Advertisement