• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

গরজ বড়ো বালাই

সন্ধ্যাবেলা কলোনির ছোটবড় সবাই লোচনবুড়োকে ঘিরে বসেছে, ‘জ্যাঠা, কলোনি পত্তনের সময়কার গল্পের বাকিটুকু এবার বলো!’

কাল্পনিক চিত্র

পূর্বা ঘোষ

এত্তদিন অপেক্ষার পর নয়নের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আবাস যোজনার প্রথম কিস্তির টাকাটা ঢুকল সোমবারে।

Advertisement

তা অপেক্ষাটা একদিনের নয় এক বছরেরও নয়, প্রায় দশ বছর ও মেম্বারের পিছেপিছে ঘুরেছে একটা ঘর পাবার আশায়। আগের দুটো টার্মে দুই আলাদা দলের মেম্বার ছিল, এখন আবার এলাকায় ওই দুই দল বাদ দিয়ে তিন নম্বর দলের মেম্বার। আগের দুই মেম্বারের সঙ্গে আজকাল দেখা হলে দু’জনে একই কথা বলে, ‘আমি সেইসময় আবাস যোজনার লিস্টে তোমার নাম ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম বলেই তুমি আজ ঘরটা পেলে, আর নাম কিনছে এখনকার মেম্বার’।

Advertisement

আজ বুধবার, খনার বচনে আছে— ‘মঙ্গলে ঊষা বুধে পা’। কাজ শুরুর পক্ষে দিনটা ভালো, তাই নয়ন মিস্ত্রি-জোগাড়ে ডেকে এনে ঘরের মাপামাপি শুরু করে দিল। আশেপাশের পাঁচদশজন লোককেও ডাকলো পরামর্শের জন্য, যদিও এখানে ডাকার তেমন দরকার পড়ে না। এই কলোনিতে একজনের ঘর থেকে অন্যজনের ঘরের তফাৎ এক থেকে দেড় হাত, এর বাড়ির রান্নার ফোড়নে ওর বাড়ির লোকজন হাঁচতে থাকে, ওর বাড়ির গোপন ফিসফাস এর ঘরে আর গোপন থাকে না। কলোনির আর একটা ব্যপার হল, একটু নতুন কিছু ঘটলেই ছোটবড় সব হাজির হয়ে যাবে অকুস্থলে, আর মতামত দেওয়াটা তো তাদের অবশ্যকর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। যাই হোক, সবার মতামত নেবার পর একটা দিন ঠিক করে ভিত খোঁড়া শুরু হয়ে গেল।

নয়নের পুরানো ঘরের এক পাশের মাটি পুরোপুরি ধসে পড়েছে, ঘর সারানোর মতো টাকা নয়নের কোনোদিনও ছিল না, এখনও নেই। ওর বাবা ঘরটা করে রেখে গিয়েছিল তাই, তারপর আর ওই ঘরে হাত দেওয়ার ক্ষমতা হয়নি ওর। এবার বৈশাখের ঝড়বৃষ্টির আগেই এই নতুন ঘরটা শেষ করে নিতে পারলে কষ্টের হাত থেকে বাঁচা যাবে।

মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে বেশ গভীর হয়ে গেছে ভিতের গর্ত, এমন সময় কী যেন একটা শক্ত মতোতে কোদাল ঠেকল। কোদাল দিয়ে টেনে তুলতেই দেখা গেল ওটা একটা মড়ার খুলি।

নয়ন নির্বিরোধী মানুষ, তা দেখে সে তো হতভম্ব। তারপর ভয়ে শঙ্কায় টলতে টলতে কোনোমতে গিয়ে পুরোনো ঘরের দাওয়ার বাঁশে ঠেস দিয়ে বসে পড়ল। এদিকে নিমেষে ঝড়ের বেগে খবরটা ছড়িয়ে পড়তেই কলোনির ছেলেমেয়ে বুড়োছোঁড়া সবাই যে অবস্থায় ছিল সেইভাবেই নয়নের বাড়িতে এসে জমল। একটু পরে পৌঁছে গেল এলাকার মেম্বার, প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পুরোনো মেম্বার, আরও একটু পরে অঞ্চল প্রধান। ভিতের মাটি খোঁড়া মাথায় উঠল, আজকের মজুরি মনে হয় এমনি এমনিই দিতে হবে ভেবে ভয়ের সঙ্গে রাগও হতে লাগলো নয়নের। কিন্তু রাগটা কার উপরে করবে ঠিক বুঝতে পারলো না।

ইতিমধ্যে সাংবাদিক চলে এসেছে, কলোনির আশেপাশের পাড়ার লোকজনও উপস্থিত। ইতিহাস নিয়ে পড়া এক আঁতেল উঠতি ছোঁড়া সাংবাদিকদের বাইট দিতে লাগলো ‘এই মড়ার খুলি প্রত্নতাত্ত্বিক দপ্তরের ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো দরকার, এখানকার মাটি খুঁড়লে হয়তো কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনও পাওয়া যেতে পারে।’

সাংবাদিক নয়নের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো, ‘আচ্ছা নয়নবাবু কাছাকাছি সময়ের মধ্যে আপনার বাড়িতে কেউ মারা গেছে?’
নয়ন উত্তর দেবার আগেই নয়নকে ঘিরে থাকা ভিড় বলে উঠল, ‘না’।
আপনার বাবা-মা কবে গত হয়েছেন?
ভিড় বলে উঠল, ‘অনেক বছর আগে।’
তাঁদের মৃতদেহ কী করেছিলেন? এখানেই মাটিতে পুঁতে দিয়েছিলেন?
ভিড় একেবারে হাঁ-হাঁ করে উঠল, ‘না, না, বাবা-মা
দু-জনকেই আমরা শ্মশানে পুড়িয়ে দিয়ে এসেছিলাম।’
এই বাড়িতে এসে কি কেউ হারিয়ে গিয়েছিল বা মারা গিয়েছিল?

একটু চুপচাপ হয়ে ভিড়টা ভাবতে থাকলে নয়নের পাশের বাড়ির কালোরানি বলে উঠল, ‘কলোনি হওয়া ইস্তক আমি এখানে, নয়নের বাড়ি এসে কেউ তো হারিয়েও যায়নি, মরেও যায়নি, যত্ত অলুক্ষণে কথা।’

নয়নকে কোনও উত্তর দিতে হচ্ছে না ঠিকই তবে ভয়ে উত্তেজনায় বুকের ভিতরটা কাঁপছে, মনে হচ্ছে এক্ষুনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবে।

এইসব কিছুর মধ্যে প্রধান মেম্বারের বেশ কিছু সাগরেদ এসে জুটে গেছে।

এরকম একটা সাংঘাতিক ঘটনায় একটা মিছিল-টিছিল তো বের করা খুব দরকার, সেই নিয়েই জটলা চলছে এখানে-ওখানে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে প্রধান আর মেম্বার আলাদা আলাদা দলের, সেইজন্য কিছুতেই স্থির হতে পারছে না যে, কীসের দাবিতে, কার কাছে বা কার বিরুদ্ধে ধিক্কার মিছিলটা বেরোবে।

ইতিমধ্যে সাংবাদিকমশাই নয়নের চৌদ্দগুষ্টি কে কবে মরেছে, কোথায় মরেছে, কোন শ্মশানে পোড়ানো হয়েছে সেইসব ইতিহাস নিয়ে ফেলেছে। নেহাত কলোনির লোকজন নয়নের সঙ্গে আছে বলেই নয়ন এখনও দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে, না হলে ওরও হয়তো এতক্ষণে শ্মশানযাত্রা হয়ে যেত।

ঠিক এই সময়ে ভারি বুটের শব্দ করে খাঁকি পোশাকে হাতে রুল আর কোমরে পিস্তল নিয়ে পুলিশ এসে দাঁড়ালো নয়নের আধ-খোঁড়া ভিতের সামনে। তারপর মড়ার খুলিটা হাতে তুলে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে বলল, ‘এটা একটা বাচ্চার মাথার খুলি।’

নয়নকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করতে যাবে, এমন সময় সেই সাংবাদিক তাঁর কথা রেকর্ডিং করার জন্য পুলিশ অফিসারের সামনে ধরাতে নয়ন এ যাত্রায় বেঁচে গেল।

তবে এবার আবার নতুন করে শুরু হল প্রশ্ন, কোনো বাড়ির বাচ্চা এর মধ্যে বা আগে পরে মারা গেছে কি না?
ভিড় ভাবতে থাকে, এতদিনে অনেকের বাড়ির বাচ্চাই নানা কারণে যেমন অসুখ-বিসুখে, ইলেকট্রিকে শক লেগে, জলে ডুবে, একদম ছোট্ট বাচ্চা গলায় দুধ আটকে মারা গেছে। একদম ছোট্ট শিশুগুলোকে তো পোড়ানো হয়নি।

ওই যে খানিক দূরে রেললাইন চলে গেছে, তার ওপারে কিছুটা ধূ-ধূ মাঠ তারপর ঘন জঙ্গল, সন্ধ্যা হলেই যে জঙ্গল থেকে শেয়াল বেরিয়ে আসে, চৈত্রশেষের চড়কের সময় গাজন সন্ন্যাসীরা যে মাঠের ধার থেকেই মড়ার খুলি নিয়ে আসে পুজো করার জন্য, সেই মাঠে গিয়েই ছোট্ট শিশুগুলোকে পুঁতে দিয়ে আসা হয়, তবে একটু বড় বাচ্চাদের শ্মশানেই নিয়ে যাওয়া হয়।

ভিড়ের মানুষজন এ-ওর দিকে তাকায় চোখে-চোখে, কী যেন কথা হয়, তারপর সবাই সমস্বরে বলে ওঠে, এই কলোনি হওয়া ইস্তক মরে যাওয়া সব শিশুদেরই শ্মশানে গিয়ে পুড়িয়ে আসা হয়েছে।

সাংবাদিক, পুলিশ, প্রধান, মেম্বার, বাইরের লোকজন ভাবতে থাকে, চারিদিক একটু সময়ের জন্য চুপচাপ, ঠিক এই সময় কালোরানি বলে উঠল, ‘হ্যাঁরে নয়ন, কেউ আবার তোর ঘর পাবার হিংসায় মড়ার মাথা তোর বাড়ির ভিতরে পুঁতে তুক করেনি তো?’
ব্যস, আমনি ভিড়ের মধ্যে ফিসফাস, তারপর কলোনির প্রত্যেকের দৃষ্টিতে অন্যদের প্রতি সন্দেহের ছায়া।

এখানে অনেকেরই ঘর নেই, কোনোমতে ভাঙা ঘরে বাস করে, বৃষ্টির সময় বাইরে বৃষ্টি থেমে গেলেও ঘরের মধ্যে জল পড়তেই থাকে। ঝড় হলে চাল উড়ে যায়। ত্রিপলের জন্য মেম্বারের বাড়িতে ধর্না দিতে হয়, তার পায়ে পড়তে হয় আর এইসব ছোট-বড় চাওয়া-পাওয়ার জন্য সারা বছর মেম্বারের ডাকে মিটিঙে মিছিলে যেতে হয়। তাই নয়ন ঘর পেয়ে যাওয়াতে অনেকেরই মনে মনে একটু হিংসা, একটু রাগ হয়েছে ঠিকই, তাই বলে এই কাজ কেউ করবে সেটা ভাবা ঠিক নয়, একদমই ঠিক নয়।

কলোনির হোমরাচোমরা সদানন্দ হেঁড়ে গলায় এক ধমক দিল কালোরানিকে, ‘কী উল্টোপাল্টা কথা বলছ খুড়ি? তোমার মাথাটা গেছে বুঝতে পারছি, চুপ করে থাকো।’

সাংবাদিকমশাই একটু আমিষ গন্ধ পেয়ে ছুটে চলে এল কালোরানির কাছে। ‘কী হয়েছে বলে মনে হয় মাসি একটু বলো, কলোনির মধ্যে কে এই ঘটনাটা ঘটাতে পারে? এখানকার কোনো বাচ্চা কি হারিয়ে গেছে? তাকে কি বলি দেওয়া হয়েছিল এখানে?’
কিন্তু তার আসতে একটু দেরি হয়ে গেছে, কালোরানি সদানন্দর ধমক খেয়ে বুঝে গেছে একটু বেশিই বলা হয়ে গেছে, বাইরের লোকের সামনে এসব বলা ঠিক না।

সে পরিষ্কার সাংবাদিককে বলে দিল, ‘আমার মাথায় একটু পোকা আছে বাপু, মাঝে-মাঝে একটু উল্টো বকি, তাই কী বলেছি, ভুলে গেছি।’

সবাই কালোরানির কথায় ঘাড় নেড়ে সায় দিল, অর্থাৎ কালোরানির মাথায় পোকা আছে আর সে মাঝে-মধ্যে উল্টোপাল্টা কথা বলে।

সাংবাদিকমশাই একটু মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে অন্যদিকে মনোযোগ দিতে গেল যদি নতুন গল্প পাওয়া যায়। এর মধ্যে পুলিশ খুলিটি নিয়ে জিপে উঠে থানায় ফিরে গেছে।

এতক্ষণ পরে টুকটুক করে লাঠিতে ভর দিয়ে হেঁটে উপস্থিত হল লোচন সরকার। আশির উপরে বয়স হয়ে গেছে, এই কলোনি বসার সময়কালের মানুষ। বয়স হয়ে গেছে বলে বাইরে বেশি বের হয় না। তবে সবাই যে কোনো সমস্যায় তার কাছেই যায় পরামর্শ নিতে।

এই দিনে ঘটনার আকস্মিকতায় এবং ঘনঘটায় সকলে ভুলেই গিয়েছিল লোচন সরকারের কথা। বৌমা বাড়িতে দুপুরের ভাত চড়াতে গেলে তার মুখে সব শুনে আর বাড়িতে থাকতে না পেরে সে এসে উপস্থিত হল নয়নের বাড়িতে। নয়নের বৌ তাড়াতাড়ি একটা জলচৌকি এনে বসতে দিল জ্যাঠাকে।

সাংবাদিক চলে এল লোচনবুড়োর সামনে, ‘দাদু, নয়ন দাসের বাড়িতে এই যে ভিত খোঁড়ার সময় মড়ার খুলি পাওয়া গেল, এই নিয়ে কী বলবে তুমি?’

‘এ আর এমনকি ব্যপার, হতেই পারে, এই কলোনিটাই তো গড়ে উঠেছে অনেকদিনের পুরোনো একটা সমাধিক্ষেত্রের উপরে। আমরা যখন এখানে বসতি গড়লাম তারও প্রায় একশ বছর আগে এটা ব্যবহার হত। তারপরের একশ বছর জমিটা পতিত হয়ে পড়েছিল। আর পতিত হয়ে পড়েছিল বলেই তখনকার নেতারা আমাদের এখানে কলোনি গড়তে দিয়েছিল। সেই সময় এই জমি পরিষ্কার করতে গিয়ে কত যে মড়ার খুলি পেয়েছিলাম তার ইয়ত্তা নেই। সেই থেকেই কলোনির নাম হয়ে গেল খুলির মাঠের কলোনি। তার থেকে খোলার মাঠ।’

সব কিছু শোনার পর এতক্ষণে প্রধানের দলের লোক আর মেম্বারের দলের লোকজন একটা দিশা পেল মিছিল বের করার। দুই দল মিলেমিশে একাকার হয়ে ঠিক করল একসঙ্গে মিছিল বের করা হবে, কেন সমাধিক্ষেত্রের উপর কলোনি বসানো হল তার জবাব চাইতে হবে সেই সময়কার রাজনৈতিক দলের কাছে।

সেইমতো কলোনির লোকজনকে তৈরি হতে বলল মেম্বার প্রধান। লোচনবুড়ো অশক্ত শরীর নিয়ে জলচৌকির উপর উঠে দাঁড়ালো, হাতের লাঠিটা উঁচিয়ে বলে উঠল, ‘কলোনি থেকে কেউ মিছিলে যাবে না। আমরা যখন ওদেশ থেকে পালিয়ে এদেশে চলে এলাম, তখন আমাদের পায়ের তলায় মাটি ছিল না, মাথার উপর ছাদ ছিল না, খাবারের ব্যবস্থা ছিল না। এই মাটিতে আমরা আশ্রয় পেয়েছিলাম, মাথা গোঁজার ঠাঁই তৈরি করেছিলাম। সেদিন এখানে জায়গা না পেলে আজ হয়ত আমাদের শহরের ফুটপাতে যাযাবরের মতো ঠাঁই বদলে বদলে ভিক্ষা করে বেড়াতে হতো। কোনোদিন থিতু হতে পারতাম না। উঠোনের কোণে একটা লাউগাছ পোঁতার ক্ষমতাও থাকতো না আমাদের।’

প্রধানের সাগরেদ বলে উঠলো, ‘তোমরা যদি মিছিলে না যাও, কোনোরকম সুযোগ-সুবিধা আর কলোনির কেউ পাবে না। ত্রিপল বলো, ঘর বলো, ভাতা বলো কিচ্ছু না, কথাটা খুব ভালো করে মনে রেখো।’

এই কথা শুনে লোচনবুড়োর গায়ের রক্ত গরম হয়ে উঠল, সে যেন ফিরে গেল তার যৌবনকালে। গমগমে গলায় বলে উঠল, ‘আমরা কলোনির লোকজন একটা ভোটও তবে কাউকে দেব না। আমরা এই খোলার মাঠ কলোনির বাসিন্দারা সমস্ত রকম ভোট আজ থেকেই বয়কট করলাম।’

চমকে গেল প্রধান থেকে মেম্বার, আর মেম্বার থেকে আগাছার মতো গজিয়ে ওঠা শাগরেদরাও।

লোচনবুড়ো ততক্ষণে কলোনির সবাইকে শোনাচ্ছে কলোনির পত্তনের কাহিনী। অনেকেই সেদিনের কথা জানে না। তারা শুনছে আর ভাবছে, আবার ভাবতে ভাবতে শুনছে।

সাংবাদিক লোচনবুড়োর ছবি তুলছে, তার কথা রেকর্ডিং হচ্ছে।

একটু দূরে প্রধান, মেম্বার পরস্পর-বিরোধী সব দল এক হয়ে ফিসফিস করে আলোচনা করছে। সব্বার মুখ শুকিয়ে আমসি। এখানকার ভোট মেম্বার প্রধানদের জেতা-হারা আর পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখলের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। খানিক বাদে প্রধান এসে ভিতের কেটে রাখা মাটির ঢিবির উপর উঠে দাঁড়ালো, ‘এই খুলির মাঠ কলোনির সকলে যাতে আবাস যোজনার ঘর পায়, সেটা আমি নিজে দেখব। সব বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের ভাতার ব্যবস্থাও করে দিচ্ছি। বিপদে-আপদে সবসময় আমরা তোমাদের পাশে আছি। কালকেই সবাই ভোটার কার্ড আর আধার কার্ড নিয়ে পঞ্চায়েতে চলে আসবে।’ বলেই সাগরেদের উদ্দেশে জানালো, পঞ্চায়েতে যাতায়াতের ভ্যানরিক্সা ভাড়া এদের দিয়ে দিবি। আর শোন, পুজোর সময় সরকার থেকে অনেক নতুন জামাকাপড় দিয়েছিল, সেগুলো পঞ্চায়েতের ঘরে পড়ে আছে, সব এখানে নিয়ে আয়। এরা পছন্দমতো বেছে নিক।’
তারপর হাতজোড় করে বলে, ‘আমরা তা হলে এখন আসি।’ বলেই লোচনবুড়োর পায়ে মাথা ঠুকে মেম্বার তার সাগরেদের নিয়ে বিদায় নিল।

সন্ধ্যাবেলা কলোনির ছোটবড় সবাই লোচনবুড়োকে ঘিরে বসেছে, ‘জ্যাঠা, কলোনি পত্তনের সময়কার গল্পের বাকিটুকু এবার বলো!’

Advertisement