নলিনাক্ষ ভট্টাচার্য
মাত্র পাঁচ হাজার টাকায় এই সুন্দর ছবিটা কিনেছিল সুবিমল। শ্রীরাম সেন্টারে একটা কমেডি নাটক দেখে ফিরবার সময় ওর নজরে পড়ল ত্রিবেণী কলাসঙ্গমে একটা আর্ট এক্সিবিশন চলছে একজন নতুন শিল্পীর যার নাম এর আগে ও কোনদিন শোনেনি। শিল্পীর নাম গীতা সুধাকরন। কেরালার বা তামিলনাড়ুর শিল্পী হবেন, আন্দাজ করল সুবিমল। নিয়মিত আর্ট গ্যালারিতে গিয়ে যারা ছবি দেখেন সুবিমল সেই বোদ্ধা দর্শক গোষ্ঠীর মধ্যে পড়ে না, বরঞ্চ নাটকের দিকেই ওর ঝোঁকটা বেশি, তাই সময় পেলে শনি রোববার মান্ডি হাউসের আশেপাশে যেসব থিয়েটার আছে যেমন কামানী, এলটিজি, শ্রীরাম কিংবা ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামার কোনও নাটকের টিকিট কেটে দু’ঘন্টা সময় কাটিয়ে যায় ও। কল্যাণীর সঙ্গে ওর সম্পর্কটা খারাপের দিকে চলে যাওয়ার পরই বাইরের টানটা যেন বেড়ে গেছে। যতদিন ওদের মেয়ে দিতি ঘরে ছিল স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মধুর না হলেও একটা দায়সারা সম্পর্ক রেখেছিল ওরা দু’জন। গত বছর দিতির বিয়েটা হয়ে যাওয়ার পরই সম্পর্কের ফাটলগুলো দাঁত বের করে সামনে এসে গেল। আলাদা ঘরে আলাদা বিছানায় তো অনেক আগেই শুতে আরম্ভ করেছিল ওরা, কিন্তু ওদের মধ্যে কথাবার্তাও একরকম বন্ধ হয়ে গেল দিতির বিয়ের পর।
Advertisement
দিতি এখন ওর বর নীলেশের সঙ্গে মুম্বইতে থাকে, সপ্তাহে অন্তত বার তিনেক ফোন করে মাকে, কিন্তু বাবার সঙ্গে ভুলেও কখনো কথা বলে না। কেননা ও বিশ্বাস করে, সুবিমল সত্যিই ওর পিএ কেরালার মেয়ে ললিতা নায়ারের সঙ্গে গভীর প্রেমে লিপ্ত ছিল। শুধু তাই নয় দিতি ওর মায়ের মতই এটাও বিশ্বাস করে যে, ললিতার দ্বিতীয় সন্তানের পিতাও সুবিমল। সুবিমল অনেকবার বোঝাতে চেষ্টা করেছিল ওদের দু’জনকে যে ললিতার স্বামী অশোকন ব্যবসার কারণে কোচিতে থাকলেও মাঝে মাঝেই দিল্লি এসে ললিতার সঙ্গে দু’চারদিন থাকে, কাজেই ললিতার সন্তানলাভের জন্য পরকীয়া প্রেমের কোনও প্রয়োজন পড়েনি। কিন্তু মা ও মেয়ে তার কথা বিশ্বাস করতে রাজি হয়নি। কেননা পাড়াপড়শির কাছ থেকে কানাঘুষোয় ওরা শুনেছে যে, অনেকেই ওদের দু’জনকে রাজীব চকের সেন্ট্রাল পার্কে, মান্ডি হাউস এলাকার থিয়েটারে এবং বেঙ্গলি মার্কেটের কোনও রেস্তরাঁয় যেতে দেখেছে। প্রথমে দাম্পত্য কলহ, তারপর ছাড়াছাড়ির হুমকি। শুধু দিতির ভবিষ্যতের কথা ভেবেই ডিভোর্সটা করতে কোর্টে যায়নি ওরা, কিন্তু আলাদা ঘরে আলাদা বিছানায় সেই থেকেই জায়গা করে নিয়েছে ওরা দু’জন।
Advertisement
ত্রিবেণী কলাসঙ্গমের হলে চিত্র প্রদর্শনী দেখতে গিয়ে সুবিমল দেখল এক মহিলা ওখানকার একজন কর্মচারীকে দিয়ে দেয়াল থেকে সাবধানে ছবিগুলো নামিয়ে হলের এক কোণে জড়ো করছেন। অল্পবয়স্ক মহিলাটিকে জিজ্ঞেস করে সুবিমল জানতে পারল প্রদর্শনীর ওটাই ছিল শেষ দিন আর ওই মহিলাই শিল্পী গীতা সুধাকরন।
‘সরি, আমি বাইরের নোটিশটা ভাল করে দেখিনি,’ সুবিমল বলল একটু অপ্রস্তুত হয়ে। ‘তা আপনার ছবি কেমন বিক্রি হল?’
‘খুব বেশি নয়, মোট এগারোটা ছবি বিক্রি হয়েছে,’ একটু হেসে বললেন গীতা। ‘আপনি কি ছবি কিনতে এসেছিলেন?’
‘সে রকম কিছু না, আমি তো থিয়েটার দেখতে এসেছিলাম শ্রীরাম সেন্টারে। বেরিয়ে বাস স্ট্যান্ডের দিকে যাবার পথে এক্সিবিশান চলছে দেখে ঢুকে গেলাম।’
‘খুব ভাল। ছবি দেখার লোক আগের থেকে অনেক কমে গেছে। তা আসুন না যে-কয়টা ছবি বেঁচে গেছে আপনাকে আমি দেখিয়ে দিচ্ছি। ভালো লাগলে কিনতেও পারেন দু-একটা।’ গীতা সুধাকরণের চোখদুটো হঠাৎই যেন খুব উজ্জ্বল হয়ে উঠল, মনে হল সুবিমলের।
‘আপনার যদি কোনও অসুবিধা না হয়…’
‘কোনও অসুবিধা নেই।’
পরিষ্কার হিন্দি বলেন গীতা, নিশ্চয়ই দিল্লিতে আছেন অনেকদিন, যেমন ছিল ললিতা। সুবিমল আর ললিতাকে নিয়ে অফিসে কথা শুরু হলে ললিতা ট্রান্সফার নিয়ে তিরুবনন্তপুরমে চলে গেছে বছর তিনেক হল। গীতার সঙ্গে ললিতার কোনও মিল নেই মুখের কিংবা হাবভাবের তবু ললিতার কথা মনে পড়ে গেল সুবিমলের। হয়ত ওরা দু’জনেই কেরলের বাসিন্দা সে কারণেই ললিতার কথা মনে পড়ে গেল সুবিমলের।
গীতার বেশির ভাগ ছবিই এ্যাবস্ট্রাক্ট ধরনের যাতে রঙের আর তুলির কাজ দুটোই চোখে পড়ার মত। লাল, নীল, সবুজ আর হলুদ রঙে বড় বড় ক্যানভাস জুড়ে খুব উজ্জ্বল ছবি এঁকেছেন গীতা যার অর্থ সাধারণ লোকের বোধগম্য হবার কথা নয়। ছবি দেখার অভিজ্ঞতা থেকে সুবিমল এটুকু বুঝতে পারল যে, মানুষ এবং প্রকৃতির মধ্যে যে অবিরত সংঘর্ষ চলছে সেই আদিম কাল থেকে তারই বর্হিপ্রকাশ হয়েছে গীতার ছবিতে। কিন্তু সুবিমলের যে ছবিটি শেষ পর্যন্ত ভাল লেগে গেল সেটি এ্যাবস্ট্রাক্ট আর্ট নয়, ওতে ছিল দুটি কুঁড়ে ঘর, ঘরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া একটি শীর্ণকায়া পাহাড়ি নদী, কিছু সবুজ গাছপালা আর দূরে একটি পাহাড়ের আভাস। সুবিমলের মনে হল, এটি ওর ঘরের দেয়ালে টাঙিয়ে দিলে ওকে আর রাত্রে ফাঁকা দেয়ালের দিকে তাকিয়ে হুইস্কির গ্লাসে চুমুক দিতে হবে না।
‘এ ছবিটাও কি আপনি বিক্রির জন্য এক্সিবিশানে রেখেছিলেন?’ সুবিমল জিজ্ঞেস করল শিল্পীকে।
গীতা একটু হেসে বললেন, ‘সত্যি বলতে কী, এটা কেউ কিনবে সেরকম আশা আমি করিনি। দিল্লি আর্টস কলেজে পড়ার সময় সেকেন্ড ইয়ারে কলেজের এক্সিবিশানে দেবার জন্য এটা এঁকেছিলাম। না, কোনও প্রাইজ-ট্রাইজ পায়নি এ ছবিটা, তবু পুরনো দিনের স্মৃতি হিসেবে প্রত্যেক প্রদর্শনীতেই এটা নিয়ে টাঙিয়ে দিই, ফিলার হিসাবে কিছুটা জায়গা আটকে রাখার জন্য।’
‘আপনি এ ছবিটা বিক্রি করবেন আমাকে?’
গীতা সুধাকরন একটু অবাক হলেন মনে হল সুবিমলের। উনি হেসে বললেন, ‘কিন্তু এটা তো আমার খুব কাঁচা কাজ। রঙ আর লাইনের অনেক গোলমাল আছে এটাতে। খুবই অর্ডিনারি কাজ এটা।’
‘তা হোক, আমার শোবার ঘরের দেয়ালে এটা খারাপ লাগবে না। ছবির নীচে কিন্তু কোনও দাম লেখেননি আপনি।’
‘যাঁরা আমার ছবি দেখতে আসেন তাঁরা এটা এড়িয়ে যান, অনেকে জিজ্ঞেস করেন এ ছবিটা কি সত্যিই আমার আঁকা। আমি প্রথম দিকের কয়েকটা এক্সিবিশানে এটার দাম রেখেছিলাম দশ হাজার টাকা, কিন্তু কেউ কেনেননি, তাই এখন আর ওটার কোনও দাম লিখি না।’
‘আমি আপনাকে এই ছবিটার জন্য পাঁচ হাজার টাকা দিতে পারি যদি আপনি রাজি থাকেন এটা বিক্রি করতে। ক্যাশ দিতে পারব না, পেটিএম করে দিতে পারি যদি আপনার পেটিএম এ্যাকাউন্ট থাকে।’
গীতা সুধাকরন কী যেন একটু ভাবলেন, তারপর বললেন, ‘ঠিক আছে। আপনার যখন পছন্দ হয়েছে ছবিটা আমি আর বেশি দরদামের মধ্যে যাবো না।’
উপস্থিত গ্যালারির কর্মচারিটির সাহায্যে গীতা দু’ফুট বাই দেড় ফুটের ছবিটাকে ভালভাবে থার্মোকল আর ব্রাউন পেপারে মুড়ে সুবিমলকে দিলেন। সুবিমলও মহিলার মোবাইল নাম্বার জেনে নিয়ে চটপট পেমেন্ট করে দিল। গীতা এবার ওকে ভিজিটর্স বুক আর একটা পেন ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘পুরো না হলেও আপনি আমার কিছু ছবি তো দেখে নিয়েছেন, তাই যদি আপনার কমেন্টস এতে লিখে দেন তবে উপকৃত হব।’
সুবিমল তখন ছবিটা কীভাবে বাসে বা অটোতে নিয়ে যাবে তাই চিন্তা করছিল, তবু পেন খুলে লিখল, ‘ভেরি ব্রাইট অ্যান্ড ভাইব্রান্ট ওয়র্ক, মেকস ওয়ান পন্ডার ওভার আওয়ার এক্সপ্লয়টেটিভ রিলেশানশিপ উইথ নেচার।’
‘থ্যাংকস আ লট, স্যার,’ গীতা বললেন সুবিমলের মন্তব্য পড়ে নিয়ে। ‘আশা করি ছবিটা আপনার ঘরের শোভা বাড়িয়ে দেবে। আপনাকে একটা কথা বলা হয়নি, এ ছবিটার মধ্যে একটা ইলেকট্রিকাল সার্কিট আছে। ছবির পেছনে কতগুলো পয়েন্ট আছে যেখানে আপনি ইচ্ছে করলে খুব ছোট বাল্ব জ্বালিয়ে দিয়ে ছবির ভেতরের কিছু দৃশ্য দেখতে পারবেন। সবগুলোই পারিবারিক দৃশ্য।’
ছবিটা ওর শোবার ঘরে টাঙিয়ে দেবার পর সুবিমলের মনে হল এই রকম একটা ছবির খুব দরকার ছিল তার জীবনে। ঘরের দাওয়ায় একপাশে কাঠের তোলা উনুনে রান্না করছে এক গ্রাম্য মহিলা, আর দাওয়ার অন্য দিকে জাল বুনছে একজন পুরুষ, সম্ভবত কোনও জেলে। কেরালা তো বাংলাদেশের মতই নদীমাতৃক দেশ, কাজেই গীতা এক জেলে দম্পতির দৈনন্দিন জীবনেরই ছবি এঁকেছেন। ঘরের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে যে নদীটি তাতে দু’-একটি কচুরিপানা আর শাপলা ফুল দেখা যাচ্ছে। নদীর ওপারে ঘন বন, দূরে পাহাড়। গ্লাসে হুইস্কি ঢেলে সুবিমল ধীরে ধীরে চুমুক দেয় আর খুব মনোযোগ দিয়ে দেখে ছবিটাকে। ওর মনে হয়, ওর সঙ্গে ওই জেলের মুখের কিছু মিল আছে আর জেলেনির সঙ্গে ললিতার। যে যাই বলুক ললিতাকে ও সত্যিই খুব ভালবাসত। ওর স্বামী অশোকন কাঠের ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকত, ওর দিকে নজর দেবার সময় পেত না আর সে কারণেই সুবিমলের সঙ্গে কাজ করার সময় ওর দিকে আকৃষ্ট হয়েছিল ললিতা। সিনেমা থিয়েটার, রেস্তরাঁ, সপ্তাহে অন্তত একদিন পাহাড়গঞ্জের কোনও ছোট হোটেলে লাঞ্চের সময় একে অপরের শরীরে ডুবে যাওয়া…। কিন্তু চারপাশের কুৎসা, নিন্দা আর ঘরে কল্যাণী আর দিতির সঙ্গে রোজকার ঝগড়া সব কিছু ঘেঁটে দিল। ললিতা সুবিমলের ঘর বাঁচাতেই ট্রান্সফার নিয়ে চলে গেল তিরুবনন্তপুরম। দেয়ালের ছবিটার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে মদের গ্লাসে আরেকটি ছোট্ট চুমুক দিল সুবিমল।
মাসখানেক পরে সুবিমলের মনে হল ছবিটা খুব ম্যাড়মেড়ে লাগছে। জেলে বৌয়ের মুখে হাসি নেই কেন? জেলেও খুব খুশি নয়। তবে কি নদীতে মাছ কমে গেছে? জেলের সংসারে কি দুঃখের দিন চলে এসেছে? ছবির দিকে তাকিয়ে এসব কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ সুবিমলের মনে পড়ে গেল গীতা সুধাকরন ওকে জানিয়েছিলেন ছবিতে ইলেকট্রিক সার্কিট আছে, আলো জ্বাললে ছবির ভেতরেও কিছু ছবি দেখা যেতে পারে। পরের দিন সুবিমল একজন ইলেকট্রিশিয়ানকে ডেকে ছবির পেছনের প্লাইউডের ঢাকনা খুলে দশটা ছোট বাল্ব লাগিয়ে দিল। ইলেকট্রিশিয়ান শম্ভু জানালো এরকম ছবি সে এর আগে কখনো দেখেনি। সার্কিটের আলোগুলো জ্বালাবার জন্য শম্ভু একটা আলাদা সুইচের ব্যবস্থা করে দিল যেটা টিপে ছবির আলোগুলো জ্বালানো নেভানো যাবে।
সেদিন সন্ধ্যার দিকে অনেককাল পরে কল্যাণীর সঙ্গে সুবিমলের বাক্য বিনিময় হল। ঝগড়া নয়, সাধারণ ঘর গেরস্থালির কথা। জলের ফিল্টার খারাপ হয়েছে, সারাতে হবে; পুরনো গ্যাসের চুল্লিতে কার্বন জমে যাওয়ায় ঠিকভাবে কাজ করছে না, কাজেই নতুন চুল্লি কিনতে হবে। দিতির মেয়ের জন্মদিনে উপহার পাঠাতে হবে। সুবিমল সবগুলোতেই হাঁ করে গেল, জানালো সামনের সপ্তাহের মধ্যেই সবগুলো কাজ ও করে নেবে। কল্যাণী সাধারণত ডাইনিং টেবিলে চা দেয় সুবিমলকে, আজ ওর ঘরে এসে টেবিলে চা রেখে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলল ওর সঙ্গে। আর কথা বলার ফাঁকে অন্তত বার দুয়েক ও দেয়ালের দিকে তাকাল ছবিটা দেখতে। চায়ের কাপ নিয়ে বেরিয়ে যাবার সময় কল্যাণী বলল, ‘সুন্দর ছবি এটা।’
সুবিমল শুধু মৃদু হেসে মাথা নাড়ল, কেননা ও এখনও কল্যাণীর সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে প্রস্তুত নয়। কল্যাণী চলে গেলে গ্লাসে মদ ঢেলে দুটো চুমুক দিল সুবিমল, তারপর সুইচ টিপে ছবিটা আলোকিত করল ও। প্রথমে নতুন কিছু নজরে এল না ওর, কিন্তু কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরে ওর মনে হল জেলের ঘরের জানলার মধ্য দিয়ে ও একটা ছোট খাট দেখতে পাচ্ছে যাতে শায়িত আছে একটি শিশু, সম্ভবত মেয়ে। জেলে-জেলেনির সন্তান হবে ও। ঘরের দেয়ালে কয়েকটি তাকে রাখা আছে ঘরগেরস্থালির নানা জিনিস যার মধ্যে আছে আয়না, চিরুনি, কিছু বাসনপত্র, পয়সা জমাবার ঘট আর কোনও দেবীর ছবি। কুঁড়েঘরের কড়ি বরগা থেকে ঝুলছে কয়েকটি শিকে যাতে রাখা আছে কিছু খাদ্যদ্রব্য। সুইচ টিপে আলো নিভিয়ে দিলে আবার সেই বারান্দায় জেলে জেলেনির চেহারাই ভেসে আসে।
কয়েকদিন পরে এক সন্ধ্যায় কল্যাণী আবার এল সুবিমলের ঘরে। সংসারের প্রয়োজনে নয়, ছবিটা দেখতে। সুবিমল এবার ওকে বিছানায় বসতে অনুরোধ করল, কেননা ছবিটা ভালভাবে দেখতে হলে বিছনায় বসা জরুরী হয়ে পড়ে। এবার সুবিমল সুইচ টিপে আলো জ্বেলে দিল। কল্যাণী অনেক সময় ধরে ছবিটা দেখল, তারপর বলল, ‘পুরো সংসারটা কী সুন্দরভাবে ধরে রেখেছে ছবিটাতে! কোথায় কিনলে এটা?’
‘এক্সিবিশানে। পাঁচ হাজার টাকা দাম নিয়েছে এটার।’
‘তা তো নেবেই, ভাল ছবির ভাল দাম। তোমার মদের বোতল কোথায়?’
‘আলমারিতে।’
‘বের করবে না?’
সুবিমল একটু অবাক হল। কল্যাণী মদের বোতলের কথা তুলেছে, নিশ্চয়ই আবার ঝগড়া বাধাতে এসেছে। ছবি দেখাটা শুধু ওর ঘরে ঢোকার বাহানা মাত্র। সুবিমলের মনটা খিঁচড়ে গেল। তা যদি ঝগড়া করতেই এসে থাকে কল্যাণী তবে ওর সাধ পুরো করবে সুবিমল। বলল, ‘ তুমিও কি খাবে আমার সঙ্গে?’
সুবিমলকে চমকে দিয়ে কল্যাণী বলল, ‘হ্যাঁ, ওটার জন্যই তো এলাম তোমার ঘরে। হাতে মদের গ্লাস নিয়ে সুখী পরিবার দেখতে কার না ভাল লাগে বলো?’
Advertisement



