• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

চৈত্রমাস

কাকে রাখবে, আর কাকে ফেরাবে, বুঝতে পারছে না শিখা। নিজেকে এই মুহূর্তে রাজকন্যা মনে হচ্ছে। স্বয়ম্বর যেন। আজ বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।

কাল্পনিক চিত্র

কেয়া রায়

‘আবার সে এসেছে ফিরিয়া।’ শিখা চোখ ফিরিয়ে নিতে চাইছে, কিন্তু পারছে কৈ! কী আছে ওই উদাসীন চেহারার লোকটার মধ্যে? মধ্য তিরিশের শিখা সুদর্শন পুরুষ তো কম দেখেনি। ওর স্বামী আলোকও যথেষ্ট সুপুরুষ। তবু কেন ওই প্রায় অপরিচিত যুবক মাধ্যাকর্ষণের সমস্ত শক্তি দিয়ে ওকে আকর্ষণ করছে!
আদ্দির পাঞ্জাবী আর দুধশাদা পাজামা পরনে তাঁর। কাঁধে ঝোলা। কালো মোটা ফ্রেমের চশমার নীচের মায়াবী চোখজোড়ার দুর্নিবার টান। উল্টোদিকের ব্যালকনি থেকে ওকে দেখে রোমাঞ্চিত হচ্ছিল শিখা। চোখে চোখ পড়ল। বিহ্বল হয়ে পড়ল শিখা। ও শিখাকে নিয়ে যেতে এসেছে চিরবসন্তের দেশে।

Advertisement

আচ্ছা, ওর ভাবুক চেহারার কারণেই কি শিখার এই ভাবান্তর নাকি ও শিখাকে নিয়ে যেতে এসেছে বলে? বসন্তের দূত ও। গত বছরও এমন বসন্তের দিনে ঘুরছিল আগুন ঝরানো কৃষ্ণচূড়াটার নীচে। শিখা ওর যাদবপুরের কেতাদুরস্ত ফ্ল্যাটের ব্যালকনি থেকে লক্ষ্য করছিল, একজন আগন্তুক সামনের পার্কে ঘুরে বেড়াচ্ছে অনেকক্ষণ ধরে। আলোক তখন অফিসে বেরিয়ে গিয়েছে। সকাল এগারোটায় কে আবার পার্কে বেড়ায়?

Advertisement

ওয়াচম্যানকে ডেকে জিজ্ঞেস করল শিখা, ‘কানাই, ওই ভদ্রলোক কে, বল তো? পার্কে ঘুরছে দেখছি অনেকক্ষণ ধরে।’

কানাই উত্তর দিল, ‘ও এক অদ্ভুত লোক, ম্যাডাম। পলাশ ফুটলে ও আসে।’
পলাশ ফুল ফুটলে আসে! সে আবার কী রকম? ক্যালেন্ডার বলছে আজ পনেরই চৈত্র। ভরা বসন্ত। কৌতূহল চেপে রাখতে না পেরে ম্যাক্সির ওপর হাউসকোট চাপিয়ে লোকটার মুখোমুখি হয়েছিল শিখা।
‘এক্সকিউজ মি, আপনি কি কাউকে খুঁজছেন?’
অপরিচিতের গভীর দৃষ্টি ছুঁয়ে গেল প্রশ্নকর্ত্রীকে।
‘না তো। কাউকে খুঁজছি না।’
‘তাহলে এ পাড়ায় এভাবে…?’

সকৌতুকে জবাব, ‘কেন এটা কি নো ম্যানস ল্যান্ড? নাকি এখানে ১৪৪ ধারা জারি আছে?’
টেঁটিয়া লোক তো! শিখা বিরক্ত গলায় বলেছিল, ‘কোনোটাই না। তবে এমন অসময়ে পাড়ায় অকারণে কাউকে পায়চারি করতে দেখলে অবাক তো লাগেই।’

‘পাসপোর্ট ভিসা ছাড়াই তো ঢুকে পড়লাম আপনার তল্লাটে। ভয় নেই। আমি চোর-ছ্যাঁচড় নই। আর ‘অসময়ে’! এখন অসময় হলে সময় আর কবে হবে? দেখছেন না, চারদিকটা কেমন ফুলে ফুলে সেজে উঠেছে। দখিনা বাতাসে বাঁশির নষ্টালজিয়া শোনা যাচ্ছে। কোকিল কেমন কুহু সুরে বৃন্দাবনী সারং সাধছে! বসন্ত তার প্রবল নার্সিজম নিয়ে জেগে উঠছে। ওরাই তো আমায় ডাক পাঠাল। আমায় ঘরের বাইরে বের করে আনল।’

এসব বলে কী! এসব কী ধরনের কাব্যি! শিখা এবার নজর ফিরিয়ে প্রকৃতির দিকে তাকাল। সত্যি বসন্ত তার রং-রূপ-রস নিয়ে এই ইঁট কাঠ পাথরের শহরেও ফুল ফুটিয়েছে। মাথার ওপর কমলা আর সবুজ চাঁদোয়ার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে নীল আকাশ। নিজের অজান্তেই শিখা জুতো খুলে নরম ঘাসের গালিচায় পা রাখল। শিউরে উঠল। নাকে এসে লাগল আমের বোলের মদির সুগন্ধ। মনটা কেমন হু-হু করে উঠল শিখার। ওর কর্পোরেট চাকুরে স্বামী আলোক বিয়ের দশ বছরের মধ্যেই বড্ড বেশি কেজো আর আন-রোমান্টিক হয়ে পড়েছে। কতদিন ওরা দোল খেলেনি। লং ড্রাইভে চেনা রুট ছাড়িয়ে ঘরছাড়া বাউল হয়নি। বৃষ্টিতে ভেজেনি। কতদিন কানের কাছে ফিসফিসিয়ে ‘ভালোবাসি’ বলেনি।

শিখা হঠাৎই ওর মুক্তো ঝরানো পেটেন্ট হাসিটা হেসে বলে বসল, ‘রাস্তায় দাঁড়িয়ে কী যে বাজে তর্ক করছি! আপনাকে আমার খুব ইন্টারেস্টিং লেগেছে। আমি শিখা। চলুন না, সামনেই আমার বাড়ি। চা খেতে খেতে বেশ গল্প করা যাবে।’

হাসিতে ঘায়েল হল বসন্ত-অনুরাগী। চোখে মুগ্ধতার আবেশ ছড়িয়ে বলল, ‘হতেই পারে গল্প। তবে কেবল চায়ে হবে না ম্যাডাম, টাও লাগবে। মানে ফুল ব্রেকফাস্ট। বেজায় খিদে পেয়েছে।’

হেসে ফেলেছিল শিখা। সে মানুষকে খাওয়াতে ভালোবাসে। ‘বেশ, তাও হবে। অতিথি দেব ভব।’
কীকরে অপরিচিত ব্যক্তিকে ফাঁকা ফ্ল্যাটে ডাকল, নিজেই ভেবে পায় না শিখা। তবে সেদিন ডাইনিং টেবিলে এই আধপাগল বাউন্ডুলে লোকটার সঙ্গে আড্ডা জমে উঠতে সময় লাগেনি। ওর নিবাস বৌবাজার। পারিবারিক ব্যবসা ছাপাখানার। ভালোই সচ্ছল। কেবল বসন্ত এলে উনি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পথে পথে ঘোরেন। কথাচ্ছলে জানালেন গোটা কলকাতা শহরে প্রায় দুশো কৃষ্ণচূড়ার ফুলেল গাছ আছে। সমসংখ্যক হলুদ রাধাচূড়াও। উনি কাল চলে যাবেন দেওঘর। সেখানে নাকি এখন ঊনত্রিশ হেক্টর জমিতে চার হাজার পলাশের বন কমলা রোদ্দুরে আলো হয়ে ঝলসাচ্ছে। আর তার মাঝে আছে কিছু দুষ্প্রাপ্য হলুদ পলাশ।

বিস্ময়াবিষ্ট শিখা প্রশ্ন করে, ‘কিছু মনে করবেন না, আপনি কি বোটানিক্যাল এজেন্সি বা বনদপ্তরের সঙ্গে যুক্ত?’
‘না তো! রঙের বাহার দেখতে দেখতে বুঁদ হয়ে পথে পথে ঘুরি। আবীর মাখি। দেওঘর থেকে চলে যাব ছোট্ট জনপদ মধুপুরে। সেখান থেকে গিরিডি হয়ে ঘাটশিলা। মাইলের পর মাইল হেঁটে বেড়াই। কেমন ঘোরের মধ্যে থাকি জানেন। রসদ জোগাড় করি আগামী দাবদাহের দিনে যুঝবার। তীব্র লাল রং দেহে-মনে মাদকতা ছড়ায়। পদাতিকের নেশা ছড়িয়ে পড়ে শিরায় শিরায়, রগে রগে।

‘ও বুঝেছি। আপনি আরণ্যকের বনোয়ারী পাটোয়ারীর মতো চরিত্র। প্রকৃতিপ্রেমিক। এই স্বার্থপর দুনিয়াদারির মেকি জীবন আপনাকে স্পর্শ করে না। আপনি সবার থেকে স্বতন্ত্র। পথভোলা পথিক।’

‘উঁহু। একটু ভুল হল যে। বনোয়ারী না, বিভূতিবাবুর প্রকৃতিপ্রেমিক চরিত্রটির নাম ছিল যুগলপ্রসাদ। আর আমি তো কেবল দর্শক ম্যাডাম। সৃষ্টি করতে পারি না কিছুই, কেবল সৃষ্টিশীলতার কদর করি। বিনে পয়সায় যেটুকু সৌন্দর্য পাই চেটেপুটে খাই। বসন্তের রঙবাহার সারা শরীরে মনে মেখে আমি মাতাল হই, পাগল হই। বাড়ির লোক বলে, এ নাকি আমার গভীর এক অসুখ। ফাগুন এলে ঘরের বাঁধন আর আমায় বেঁধে রাখতে পারে না। পথে পথে ঘুরি তখন। শুষে নিই বসন্তের রূপ-রঙ-রস। তারপর যখন গ্রীষ্ম তার দাবদাহ দিয়ে দগ্ধ করে সমস্ত সৌন্দর্য আর সজীবতা, তখন আবার পথ চিনে ফিরে আসি বাড়ি। ছাপাখানার কালিতে কলঙ্কিত হতে হতে স্বপ্ন দেখি আগামী বসন্তদিনের।’

শিখা অবাক হয়ে শুনছিল। মুগ্ধ হচ্ছিল। কল্পনায় শিখাও যেন পথ হাঁটছিল পলাশ আর দেবদারুর নির্জন রঙিন প্রান্তরে। আবেশে ওর গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল। যেভাবে কপিলা কুবেরকে বলেছিল, ‘মাঝি, আমারে লগে নিবা?’ ঠিক সেভাবে আবিষ্ট শিখা বলল, ‘আমাকে নিয়ে যাবেন? দেখাবেন হলুদ পলাশ আর দেবদারু বন?’
‘যাবেন আপনি? বেশ তো। তবে কালই চলুন বেড়িয়ে পড়ি।’

শিখা ফিসফিস করে বলল, ‘কাল না। এভাবে হয় না। সময় লাগবে। আগামী চৈত্রদিনে আবার দেখা হবে। তখন যেন তোমার ডাকে ঘরের বাঁধন আর না থাকে।’

আগন্তুককে যাওয়ার আগে শিখা নাম শুধাল। সে বলল, ‘আমার নাম শুনলে যে তুমি লজ্জা পাবে। আমি সৌরভ। তুমি শিখা। প্রিয় কবি লিখে গেছেন…
‘বসন্তে সৌরভের শিখা জাগল।
নীল দিগন্তে ওই ফুলের আগুন লাগল।’


এক বছর পরে আজ ‘সে এসেছে ফিরিয়া।’ গত এক বছরে বারবার তার কথা মনে পড়েছে শিখার। কখনো দিবাস্বপ্ন ভেবে উড়িয়ে দিয়েছে। একঘেয়ে হলেও নিশ্চিন্ত আরামের জীবন ছেড়ে কেন পা বাড়াবে অনিশ্চয়তার পথে! আবার কখনো এই প্রেডিক্টেবল ধরাবাঁধা চর্চিত জীবন থেকে অবসন্ন মনটা চলে যেতে চায় বহুদূরের কোন অচিনপুরে। যেখানে সৌরভ তাকে অশোক ফুল চেনাবে। নদীর পাড় ধরে বালিপথে দু’জনে একসঙ্গে হেঁটে যাবে শিমুল বনের বুক চিরে বহুদূরের তিরতিরে ঝরনার কাছে। সাঁওতালদের বনকুটিরে বিশ্রাম নেবে। জোৎস্না রাতে মহুয়ায় চুমুক দিয়ে লক্ষ্মীপেঁচার উড়ে যাওয়া দেখবে।

আলোকের কোনো পরিবর্তন নেই। আজকাল কেমন খেঁকিয়ে কথা বলে। হয়তো অফিসের চাপ। তবু শিখাও তো একটা মানুষ। তারও তো একটা মন আছে, চাওয়া-পাওয়া আছে। আলোক সেটা বুঝতেই চায় না। ভীষণ একা নিস্তরঙ্গ খাঁচায়পোরা জীবন। বিয়ের পরপর তো কত ভালবাসত আলোক! গভীর রাতে ওরা থিয়েটার দেখে ফেরার পথে হাতে হাত জড়িয়ে কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছে। একটা এগরোল দু’জনে ভাগ করে খেয়েছে। কত আনন্দ ছিল জীবনে! চিরবসন্তের দিন ছিল সেসব। কাল রাতে সে কথা আলোককে বলতে গেছিল শিখা, ‘আমাদের গেছে যে দিন একেবারেই কি গেছে/ কিছুই কি নেই বাকি?’

আলোক চরম বিতৃষ্ণভাবে বলেছিল, ‘তোমার কেবল অভিযোগ, আর অভিযোগ। কোনও অবস্থাতেই সুখী হতে পারো না। অনেক পরিশ্রম করতে হয় অফিসে। রাতেও শান্তি নেই। বাড়িতে বসে বসে তোমার কেবল দুঃখবিলাস। দেখ, যদি তোমার পোষায় থাকো, না পোষালে বেরিয়ে যাও। কথা বাড়িও না। এত রোমান্টিকতা আমার আসে না।’

স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল শিখা। কথা বাড়ায়নি। রাত কেটেছে চোখের জলে ভেসে।
আর আজ সকালেই সৌরভ এসেছে! ওকে কথা দেওয়া আছে এবার বেরিয়ে পড়ার। কথা রাখবে শিখা। রাঙা ধুলোয় ধূসর হবার পালা এবার। কাল দোল। আজই বেরিয়ে পড়বে। সৌরভ নীচে অপেক্ষা করছে। ভীষণ উত্তেজনা অনুভব করছে শিখা। যে সংসারে ওর কণামাত্র দাম নেই, কেন পাপোশের মতো পড়ে থাকবে সেখানে? নিত্য যাপনের কিছু জামাকাপড় নেবে কি ব্যাগে? না থাক, পথেই হবে এ পথ চেনা। পাথেয় সঙ্গে নিয়ে কি আর প্রকৃত পথিক হওয়া যায়!

মনস্থির করে ফেলেছে শিখা। কোনও টান অনুভব করছে না এই ঘরদোরের প্রতি। নীচে অপেক্ষা করছে বসন্তদূত। ধুলোমাখা চরিত্রটি কথা দিয়েছে, কমলা শামিয়ানার নীচে নির্জন প্রান্তরে শিমুলের বনে বসাবে ওকে। পরম মমতায় জানবে ওর মনোবেদনা। তারপর কোনও অচেনা পাখিওয়ালার কাছ থেকে কিনে আনা টিয়া-মুনিয়া-চন্দনার মতো উড়িয়ে দেবে বিগত দিনের জমানো দুঃখ, ব্যথা, বেদনাগুলো। তখন ওরা খুশি মনে রঙ খেলবে একদল অচেনা দেহাতি নারী-পুরুষের সঙ্গে। ঝিমধরানো পিতলরঙা রোদে তৃষ্ণা মেটাবে সবুজ ধানের দুধ খেয়ে। বেঁচে নেবে এক অযুত বসন্তজীবন।

শিখা সাধারণ শাড়িতেই পা বাড়াল বাইরের দিকে, মুক্তির দিকে, অপার আনন্দের দিকে। ওর মন বলছে, ‘সেথা নাইকো মৃত্যু, নাইকো জরা। সেথা আকাশ মধুগন্ধে ভরা, চির জোৎস্না নীল আকাশে।’

আগন্তুকের চোখে চোখ রেখে এগিয়ে যাচ্ছে শিখা। ভবিষ্যতের সাচ্ছন্দ্যচিন্তা ওকে ছুঁতে পারছে না।
‘কোথাও বেরোচ্ছ শিখা?’
চমকে ফিরে তাকাল শিখা। দরজার চৌকাঠে আলোক। উদ্‌ভ্রান্ত, ক্লান্ত।
‘তুমি এ সময়ে?’ শিখা প্রশ্ন করে।
‘মনটা ভীষণ খারাপ লাগছিল। তোমাকে কাল রাতে ওভাবে বলতে চাইনি, বিশ্বাস করো। আমি খুব অনুতপ্ত। অফিসেও কাজে মন বসাতে পারছিলাম না। তোমাকে এইভাবে বললাম আমি! তোমাকে! আমাকে মাফ করো, বউ। দেখ, আমি হাওড়া থেকে বোলপুরের টিকিট কেটে এনেছি। ছুটি নিয়েছি। চলো বসন্তোৎসবে দুটো দিন ঘুরে আসি শান্তিনিকেতন থেকে। কোপাইয়ের তীরে বসে তোমার মনের কথা শুনব। আমারও অনেক কথা জমে আছে। তোমাকে বলব। যাবে তো?’

কাকে রাখবে, আর কাকে ফেরাবে, বুঝতে পারছে না শিখা। নিজেকে এই মুহূর্তে রাজকন্যা মনে হচ্ছে। স্বয়ম্বর যেন। আজ বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।
‘এসো হে, এসো হে, এসো হে,
আমার বসন্ত এসো।
আজি দখিন দুয়ার খোলা।’

আকশের দিকে মুখ ফেরায় শিখা। রঙ লেগেছে দিগন্ত জুড়ে। আলোকের চোখদুটোয় চোখ ফেরায় তারপর। অস্ফুটে বলে ওঠে, ‘চলে যাও সৌরভ। এখনও সময় হয়নি। এ পথ আমার নয়।’

আলোককে আবার সেই পুরনো দিনের মতো লাগে। দু’হাতে তাকে জড়িয়ে শিখা বলে, ‘বোলপুর গিয়ে কিন্তু হোটেলে আটকা পড়ে থাকবো না। রঙবাহারী রাস্তা ধরে ঘুরে বেড়াবো যতদূর যাওয়া যায়।’

আলোকের ঠোঁটদুটো নেমে আসে শিখার ঠোঁটে। প্রবল আশ্লেষে বুঁজে আসে শিখার চোখ। সেই বন্ধ চোখের ভিতর দিয়ে সে দেখে, সাঁওতাল পরগণার আবিরঝরা রাস্তায় দিগন্ত ছুঁয়ে একা হেঁটে চলেছে সৌরভ। আহা, এবারেও যাওয়া হল না।

Advertisement