সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায় (রায়)
মিলান্তি বড় রাস্তায় গাড়িটা ঘোরাতেই একটা ছোটখাটো ভিড় দেখতে পেল। গাড়িটা পার্ক করে ভিড় ঠেলে উঁকি দিতেই দেখতে পেল এক বয়স্কা মহিলা, একটা সুতির নাইটি পরে বসে আছেন আর সবাই ওর বাড়ির ঠিকানা জিজ্ঞেস করছে। মহিলা নিজের ঠিকানা বলতে পারছেন না। মহিলাকে একটু স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টা কেউই করছে না। মিলান্তি মহিলাকে ধীরে ধীরে উঠিয়ে মমতাভরে জিজ্ঞেস করল— ‘আন্টি, আপনি কোথায় যাবেন?’
Advertisement
একটু ভরসা পেয়ে ধাতস্থ হয়ে মহিলা ঠিকানাটা বলতে মিলান্তি আস্তে আস্তে মহিলাকে ওর গাড়িতে বসিয়ে ওই ভিড়ের উদ্দেশে বলল— ‘আপনারা কেউ যেতে চান?’
Advertisement
এ প্রশ্নে ভিড় ফাঁকা হয়ে গেল। গন্তব্যে পৌঁছে একটা পুকুর দেখিয়ে মহিলা বললেন— ‘থাম, থাম, এখানে আমার বাড়ি।’
ওই এলাকার কেউই মহিলাকে চিনতে পারল না। মিলান্তি যখন হাল প্রায় ছেড়ে দিয়েছে তখন ওই পাড়ার এক পুরোনো বাসিন্দা জানালো— ‘ওই মহিলার পরিবার প্রায় বিশ বছর আগে এখান থেকে চলে গেছেন।’
অবশেষে থানায় যেতে হল, ওখানে ইনস্পেক্টর সোম বললেন— ‘সব শুনলাম, যে ক’দিন আমরা ওরঁ বাড়ি খুঁজে না পাচ্ছি আপনি পারলে আপনার বাড়িতেই রাখুন।’
মিলান্তি একা থাকে, একটু সমস্যা হলেও অফিসে ক’দিনের ছুটির দরখাস্ত করে ওই মহিলাকে বাড়িতে নিয়ে এল। ওর যত্নে, সুন্দর ব্যবহারে যেন বরফ গলল। ওই মহিলা আন্তরিক গলায় বললেন— ‘হ্যাঁ রে, তুই আমায় আন্টি আন্টি করিস কেন? আমি তো তোর মা।’
মিলান্তি বুঝল উনি এসব ভুল করে বলছেন। ওর মা-হারা মন যেন কেমন আঁকড়ে ধরতে চাইল। দিন দশেক পর থানা থেকে ফোন এল— ‘হ্যালো, থানা থেকে বলছি, আমরা ওই মহিলার ঠিকানা খুঁজে পেয়েছি। ওঁর বাড়ির লোকজনকে নিয়ে আসছি।’
মিলান্তির পায়ের তলার মাটি সরে গেল। এ ক’দিনে মিলান্তিই তো ওর নতুন মায়ের স্নেহাশ্রয়ে আছে। ঘন্টা দুয়েক পরে দু’জন বিবাহিতা মেয়ের সঙ্গে ইনস্পেক্টর সোম মিলান্তির বাড়িতে এল। বন্দনা, চন্দনার মা মেয়েদের চিনতেই পারলেন না। যাওয়ার পথে শোরগোল করতে লাগলেন— ‘মিলুকে ছেড়ে আমি কোথাও যাব না।’
মহিলার ডিমনেশিয়ায় (স্মৃতিভ্রংশে) নিজের মেয়েরা আজ অপরিচিতা। কিন্তু এই দশদিনের স্মৃতি ওঁর অত্যন্ত আপন। উনি নিজের বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন। পেছনে এই দশদিনের স্মৃতিবিজড়িত মিলান্তি।
Advertisement



