• facebook
  • twitter
Friday, 19 December, 2025

‘মিনি পাকিস্তান’ বিতর্ক পুরসভায়, প্রমাণ হলে ইস্তফা দেব: মেয়র

অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানান, এই ধরনের ব্যক্তিগত আক্রমণ তাঁকে গভীরভাবে কষ্ট দেয়।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

বৃহস্পতিবারের কলকাতা পুরসভার মাসিক অধিবেশন কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। অধিবেশন শেষের দিকে আসতেই শাসক ও বিরোধী শিবিরের মধ্যে তীব্র বাকবিতণ্ডা শুরু হয়, যা ক্রমে চরম উত্তেজনার রূপ নেয়। ‘মিনি পাকিস্তান’ মন্তব্য ঘিরে ওঠা অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ ও মেয়র ফিরহাদ হাকিমের মধ্যে সরাসরি বাকযুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। একপর্যায়ে সভাকক্ষে এমন পরিবেশ তৈরি হয় যে হাতাহাতির আশঙ্কাও দেখা দেয়।

এদিন পুরসভার অধিবেশনে একটি নিন্দা প্রস্তাব পেশ করে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। ওই প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে ‘বঙ্কিমদা’ সম্বোধন এবং ‘বন্দে মাতরম’ স্লোগান ঘিরে বিতর্কের বিরোধিতা করা হয়। একই সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপর ‘সাংস্কৃতিক আক্রমণ’-এর অভিযোগ তুলে তার প্রতিবাদে সবাইকে শামিল হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক চলাকালীনই উত্তেজনার সূত্রপাত।

Advertisement

বিজেপির তরফে ওই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কাউন্সিলর সজল ঘোষ শাসকদলকে নিশানা করেন। তাঁর বক্তব্যে ‘কাটমানি’ প্রসঙ্গ উঠে আসে। পাশাপাশি তিনি অতীতের একটি বিতর্কিত মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে ‘মিনি পাকিস্তান’ শব্দ ব্যবহারের অভিযোগে আক্রমণ করেন। সজলের এই মন্তব্যের পরই সভাকক্ষে হইচই শুরু হয়ে যায়। বিরোধী ও শাসক বেঞ্চ থেকে একসঙ্গে প্রতিবাদের আওয়াজ উঠতে থাকে।

Advertisement

এর পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বিজেপিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিজেপির কোনও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল না। একই সঙ্গে তিনি বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে দুর্নীতির একাধিক উদাহরণ তুলে ধরেন। মধ্যপ্রদেশের ব্যাপম কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বিজেপির নৈতিকতা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন। মেয়রের অভিযোগ, বিজেপি বিভাজনের রাজনীতি করছে এবং দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধ্বংস করার পথে এগোচ্ছে।
এই বক্তব্যের পরেই পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিরোধী বেঞ্চ থেকে সজল ঘোষ ফের মেয়রের দিকে আঙুল তুলে বলেন, ‘আপনিও তো কলকাতার একটি অংশকে ‘মিনি পাকিস্তান’ বলেছিলেন।’ এই মন্তব্যে কার্যত মেজাজ হারান মেয়র। সভায় দাঁড়িয়ে তর্জনি উঁচিয়ে তিনি চিৎকার করে বলেন, কোথাও যদি প্রমাণ করা যায় যে তিনি ‘মিনি পাকিস্তান’ শব্দটি উচ্চারণ করেছেন, তবে তিনি অবিলম্বে মেয়র পদ থেকে ইস্তফা দেবেন। শুধু তাই নয়, তিনি জানান, অভিযোগ প্রমাণিত হলে রাজনীতিও ছেড়ে দেবেন তিনি।

মেয়রের কথায়, তিনি একজন মুসলমান হলেও তাঁর দেশ ভারতবর্ষ, আর পাকিস্তান তাঁর শত্রু দেশ। এই মন্তব্যের পর সভাকক্ষে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। একে অপরের দিকে আঙুল তুলে কাউন্সিলরদের চিৎকার-চেঁচামেচি চলতে থাকে। কয়েকজন কাউন্সিলর চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালে হাতাহাতির আশঙ্কা তৈরি হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে তৃণমূলের একাধিক কাউন্সিলর দ্রুত মেয়রকে ঘিরে ধরেন এবং তাঁকে শান্ত করার চেষ্টা করেন।

অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানান, এই ধরনের ব্যক্তিগত আক্রমণ তাঁকে গভীরভাবে কষ্ট দেয়। তিনি অভিযোগ করেন, সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কারণেই এ ধরনের বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে। তাঁর বক্তব্য, বাংলায় আগে এই ধরনের রাজনীতি ছিল না এবং এই রাজনীতি দীর্ঘদিন টিকবে না। তিনি আরও বলেন, কেউ সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু এই পরিচয় বড় নয়। সবার পরিচয় একজন ভারতীয় হিসেবে।

‘মিনি পাকিস্তান’ মন্তব্য ঘিরে বিতর্কের সূত্রপাত নিয়েও মুখ খুলেছেন মেয়র। পাকিস্তানের কোনও সংবাদপত্রে তাঁর সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে এই জল্পনা উড়িয়ে দিয়ে তিনি জানান, ওই পত্রিকায় কী লেখা হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি অবহিত নন। তাঁর দাবি, তিনি উর্দু পড়তে পারেন না, শুধু বলতে পারেন। পাশাপাশি বিজেপিকে কটাক্ষ করে মেয়র বলেন, বাংলায় ওই পত্রিকা আসে না, তবে বিজেপির অফিসে নাকি পাকিস্তানের পত্রিকা আসে। তাঁর অভিযোগ, ইচ্ছাকৃতভাবেই বিষয়টিকে ঘিরে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।

অন্যদিকে, বিজেপির অভিযোগ, গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুললেই তাঁদের কাউন্সিলরদের উপর আক্রমণ নামিয়ে আনা হচ্ছে। তৃণমূলের পাল্টা দাবি, বিজেপি ইচ্ছাকৃতভাবে উসকানিমূলক মন্তব্য করে পুরসভার অধিবেশনের পরিবেশ নষ্ট করছে। এই উত্তেজনা ও বিতর্কের মধ্যেই ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অসীম বসু ‘আমি বাংলায় গান গাই’ গান গেয়ে এদিনের অধিবেশনের সকল বিতর্কের ইতি টানেন।

Advertisement