• facebook
  • twitter
Thursday, 31 July, 2025

হাসনাবাদ ও টাকিতে ইছামতী দখল করে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে বিলাসবহুল হোটেল

সরব আইনজীবী থেকে আমজনতা

নিজস্ব গ্রাফিক্স

একদিকে মজে যাচ্ছে নদীগুলি। নদীর বুকে পলি জমে দিনের পর দিন স্রোতহীন হয়ে পড়ছে ইছামতী। তার উপর হোটেল ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে বসিরহাটের টাকি ও হাসনাবাদ পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে। ইছামতীর চর দখল করে নদীর বুকেই চলছে অবৈধভাবে হোটেল নির্মাণ। এলাকার প্রভাবশালী নেতাদের মদতেই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের হাসনাবাদ, টাকি পর্যটন কেন্দ্রে এভাবে রাতারাতি নদীর চর বেআইনিভাবে দখল হয়ে যাচ্ছে। এভাবে বেআইনি হোটেল নির্মাণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। নিন্দায় সরব হয়েছেন পরিবেশপ্রেমী থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন স্তরের সচেতন মানুষজন।

প্রশ্ন উঠছে, পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা না ভেবে কীভাবে ব্যাঙের ছাতার মতো রাতারাতি এইসব হোটেল গজিয়ে উঠছে? বেআইনি এই নির্মাণে অনুমোদন দেওয়ার পিছনে কাদের হাত রয়েছে? বিষয়টি নিয়ে প্রথম সোচ্চার হন জনৈক আইনজীবী তন্ময় বসু। তিনি গত জুন মাসে টাকিতে ঘুরতে গিয়ে বিষয়টি লক্ষ্য করে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। গোটা এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পর রাজ্যের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরগুলিতে অভিযোগ জানান। রাজ্যের পরিবেশ দপ্তর থেকে শুরু করে সেচ দপ্তর, এমনকি টাকি পুরসভা, বসিরহাট মহকুমা শাসকের দপ্তরেও অভিযোগ জানিয়েছেন। এমনকি বসিরহাট পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার ও হাসনাবাদ থানার কাছেও অভিযোগ গিয়েছে। এই সমস্ত নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে আইনজীবীর অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে পুলিশ প্রশাসনকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে এইভাবে ইছামতী নদীর পাড়ে বিলাসবহুল হোটেল নির্মাণ করছে।

জানা গিয়েছে, টাকি রাজবাড়ী ঘাট সংলগ্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি বেআইনি হোটেল ও রিসর্ট তৈরি হয়েছে। এইসব হোটেলের দেওয়ালে নদীর জোয়ারের জল ধাক্কা মারে। অথচ সরকারি নিয়ম রয়েছে, নদীর জোয়ারের জল যতদূর যাবে, তার থেকে অন্ততঃ ৯ ফুট দূরে নির্মাণ কাজ করা যাবে। কিন্তু সেই নিয়ম মেনে এই হোটেলগুলি নির্মাণ করা হয়নি। এই সব নির্মাণের পিছনে রয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালী তৃণমূল নেতাদের একটি অংশ। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের খাদ্য সরবরাহ দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ তথা তৃণমূলের রাজ্য সংখ্যালঘু সেলের সম্পাদক শাহানুর মণ্ডলের এরকমই একটি হোটেলের মালিকানা রয়েছে। টাকি পুরসভা সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। বাকি হোটেলগুলির মালিকও রয়েছেন স্থানীয় কোনও না কোনও প্রভাবশালী নেতা। এই সমস্ত বেআইনি নির্মাণকে হাতিয়ার করে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে পথে নামতে চলেছে বসিরহাটের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি কলকাতা হাই কোর্ট দিঘা, তাজপুরের সমুদ্র কিনারায় থাকা হোটেলগুলিকে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। পরিবেশ ও পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে আগেই জাতীয় পরিবেশ আদালত (গ্রিন ট্রাইব্যুনাল) এই নির্দেশ দিয়েছিল। এবার সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে চলেছে টাকি ও তার সংলগ্ন পর্যটন কেন্দ্রে। অভিযোগকারী আইনজীবীর দাবি, তাজপুরের ক্ষেত্রে আদালত যেমন পরিবেশ ও পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে সমুদ্র তীরবর্তী হোটেলগুলিকে ভাঙার নির্দেশ দিয়েছে, ঠিক তেমনই এই টাকি পর্যটন কেন্দ্রের ইছামতী নদীর কিনারায় তৈরি হওয়া হোটেলগুলিকেও ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হোক। এই হোটেলগুলিকে ভেঙে ফেললে শুধুমাত্র ইছামতী নদীই রক্ষা পাবে না, সেও সঙ্গে হাজার হাজার পর্যটকদের জীবনও রক্ষা করা সম্ভব হবে।