যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ভাঙচুরের ঘটনায় বিধাননগর দক্ষিণ থানার পুলিশ আরও এক জনকে গ্রেপ্তার করল। ধৃতের নাম রূপক মণ্ডল। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে তাঁকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। জানা গিয়েছে, রূপকের বাড়ি ইএম বাইপাস সংলগ্ন চিংড়িঘাটা এলাকায়। এই গ্রেপ্তারের পর যুবভারতীতে ভাঙচুরের ঘটনায় মোট ধৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৬জন।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার ফুটবল তারকা লিয়োনেল মেসির কলকাতা সফরকে ঘিরে যুবভারতীতে উত্তেজনা ছড়ায়। চড়া দামে টিকিট কেটেও বহু দর্শক মেসিকে ঠিক ভাবে দেখতে না-পারায় ক্ষোভ তৈরি হয়। মেসি, সুয়ারেজ ও ডি’পলরা প্রায় ২০ মিনিট মাঠে ছিলেন। সেই সময় তাঁদের ঘিরে একটি বড় জটলা তৈরি হয়, যার মধ্যে রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও ছিলেন। ওই জটলার কারণে গ্যালারি থেকে দর্শকদের অনেকেই মাঠের দৃশ্য স্পষ্ট ভাবে দেখতে পাননি। ফলে দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
Advertisement
মেসিরা মাঠ ছাড়ার পরেই সেই ক্ষোভ বিস্ফোরণের আকার নেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। গ্যালারিতে হোর্ডিং ছেঁড়া শুরু হয়। একের পর এক বোতল ছোঁড়া হতে থাকে মাঠের দিকে। ভাঙচুর করা হয় গ্যালারির চেয়ার। পরে মাঠের ফেন্সিং ভেঙে উত্তেজিত জনতা মাঠে ঢুকে পড়ে। এই ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে বিধাননগর পুলিশ।
Advertisement
তদন্তে নেমে সোমবার প্রথমে পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা হলেন বাসুদেব দাস, সঞ্জয় দাস, অভিজিৎ দাস, গৌরব বসু এবং শুভ্রপ্রতিম দে। পুলিশ জানিয়েছিল, প্রত্যেককেই সিসিটিভি ফুটেজের ভিত্তিতে শনাক্ত করা হয়েছে। বুধবার রূপক মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করার পর ধৃতের সংখ্যা বেড়ে ছয় হল। এ ছাড়া শনিবারের অনুষ্ঠানের মূল আয়োজক শতদ্রু দত্তকেও আগেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
যুবভারতীকাণ্ডের তদন্তে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি তদন্ত কমিটি গড়ে দেন। সেই কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীমকুমার রায়। রাজ্যের মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবও ওই কমিটিতে ছিলেন। সোমবার রাতে কমিটি প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দেয় এবং সিট গঠনের সুপারিশ করে। সেই সুপারিশ মেনেই মঙ্গলবার চার সদস্যের সিট গঠন করে রাজ্য পুলিশ। সিটে রয়েছেন এডিজি পীযূষ পাণ্ডে, এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম, এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার এবং ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মুরলীধর।
এ দিকে বুধবার বেলা নাগাদ যুবভারতীতে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও সুজিত বসুর গ্রেপ্তারির দাবি তোলেন। শুভেন্দুর বক্তব্য, ‘রাজ্য সরকারের তদন্ত কমিটি আমরা মানি না। আমরা নিরপেক্ষ তদন্ত চাই।’
বুধবার সকালেই রাজ্য পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট যুবভারতীতে যায়। চার জন উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিক ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন। কোথায় কী ভাবে ভাঙচুর হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হয়। পরে তদন্তকারী দল স্টেডিয়াম লাগোয়া বিধাননগর কমিশনারেটের অফিসেও যায়। কিছু ক্ষণ সেখানে থাকার পর তাঁরা বেরিয়ে যান।
Advertisement



