কারও কোনও ভুলের জন্য একটি গোটা সম্প্রদায়কে দোষারোপ করা বা বিচ্ছিন্ন চোখে দেখা উচিত নয়। এই বিষয়টি কেন্দ্র করে কেউ যেন অসাধু উদ্দেশ্য পূরণ না করে, সেদিকেও নজর রাখতে হবে। সম্প্রতি তবলিঘি জামাতের জমায়েত নিয়ে দেশের করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, সে প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এমনই মন্তব্য করলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের প্রধান মোহন ভাগবত ।
রবিবার নাগপুরে সঙেঘর সদর দফতর থেকে স্বয়ং সেবকদের উদ্দেশে অনলাইনে একটি বার্তা দেন মোহন ভাগবত । সেখানেই এ কথা স্পষ্ট করার পাশাপাশি তিনি বলেন, নিয়ম ও অনুশাসন রক্ষা করাটা প্রশাসনের দায়িত্ব। কেউ কোনও ভুল করলে তার সেই শাস্তি হওয়া উচিত। এ জন্য গোটা সম্প্রদায়কে চিহ্নিত করা ঠিক নয়। এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষদের বোঝানোর জন্য নেতাদেরও দায়িত্ব নিতে হবে।
এর পাশাপাশিই তিনি বলেন, কেউ কেউ ভারতবিরোধী মনোভাব থেকে এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে। তারা যেন অপেক্ষা করছিলেন দেশে কখন ছড়িয়ে পড়বে এই মহামারী।
মার্চ মাসের মাঝামাঝি দিল্লির নিজামুদ্দিন মার্কেজে মুসলিম সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার মানুষের জমায়েত হয় তবলিঘি জামাতের সমাবেশ উপলক্ষে। দেশ-বিদেশ থেকে বহু মানুষ আসেন সেখানে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে সেই সমাবেশে। যদিও দেশে তখনও লকডাউন শুরু হয়নি বা করোনা পরিস্থিতিকে জরুরি বলে ঘোষণা করা হয়নি, তবু অভিযোগ উঠেছিল, ওই জমায়েতে সতর্কতার অভাব ছিল আয়োজকদের মধ্যে। পরে দেশের নানা প্রান্তে জমায়েত-ফেরত মানুষের মধ্যে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে।
অভিযোগ ওঠে, দেশের করোনা পরিস্থিতি এতটা খারাপ হওয়ার পেছনে দায়ী এই জমায়েত। পরিসংখ্যান বলছে, দেশে যত করোনা আক্রান্ত ধরা পড়েছে, তার পাঁচ ভাগের এক ভাগই জামাত-ফেরত। এর পরেই দেশের নানা প্রান্তে হিংসার মুখে পড়েন মুসলিমরা। কোথাও বয়কট করা হয় তাদের, কোথাও সমস্যা হয় ব্যবসায়।
এমনকি দেশের শাসক গোষ্ঠীর বহু নেতা-মন্ত্রীরা জামাতের ঘটনাকে ‘করোনা টেররিজম’ বলেও বর্ণনা করেন। প্রচুর ফেক নিউজও ছড়ায় এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে। তার জেরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং হয়ে যায় ‘করোনাজিহাদ’ হ্যাশট্যাগ।
কিন্তু এইসব প্রচারে ও প্ররোচনায় কেবল বিচ্ছিন্নতাই বাড়বে বলে জানান মোহন ভাগবত। যা কখনওই কাম্য নয়। বিশেষ করে দেশের এই কঠিন পরিস্থিতিতে যখন ঐক্যবদ্ধ লড়াই করার দরকার, তখন কোনও সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীকে খাটো করলে, দাগিয়ে দিলে, বিচ্ছিন্ন করলে তা গোটা দেশের লড়াইকেই প্রভাবিত করবে। গোটা মুসলিম সম্প্রদায়কে বাদ দিয়ে কখনওই এই লড়াইয়ে জেতা যাবে না।
দেশের প্রধানমন্ত্রীও যেখানে বারবার ঐক্যের কথা বলছেন, সেখানে কোনও সম্প্রদায়কে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার এ অপচেষ্টা নিন্দনীয়। সম্প্রতি সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি-ও দাবি করেন, কোনও একদল মানুষের অপরাধ কখনও গোটা সম্প্রদায়কে দায়ী করতে পারে না। যে সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদেরই অনেকেই ইতিমধ্যেই একদল মানুষের ওই জমায়েতের নিন্দা করেছে। ফলে এভাবে কাউকে দাগিয়ে দেওয়া যায় না। সেই একইকথার সুর শোনা গেল আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের বক্তৃতাতেও।