উত্তরপ্রদেশে পুলিশি ‘এনকাউন্টার’ বহু দিন ধরেই রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে। হেফাজত থেকে পালাতে গিয়ে অভিযুক্ত গুলিবিদ্ধ— পুলিশের এই দায়সারা ব্যাখ্যা নিয়ে বারবার প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। এবার এক সরকারি চিকিৎসকের সরাসরি অভিযোগে সেই বিতর্ক নতুন মাত্রা পেল। তাঁর দাবি, ভুয়ো ‘এনকাউন্টার’ সাজাতে পুলিশ চিকিৎসকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বদলাতে জোরাজোরি করছে।
শামলির স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা-অধিকর্তা দীপক চৌধরি জানিয়েছেন, গুলিতে ক্ষতবিক্ষত একটি দেহ তাঁর কাছে আনা হয়েছিল। দেহে ছিল প্রায় কুড়িটি ক্ষত চিহ্ন। কিন্তু তাঁকে নাকি ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মাত্র একটি ক্ষত দেখাতে নির্দেশ দেওয়া হয়। তাঁর কথায়, ‘এই ধরনের সংঘর্ষের ঘটনায় গুলির ক্ষতের চারপাশে সাধারণত অন্য রঙের দাগ থাকে, যা দেখে বোঝা যায় গুলি কোন দিক থেকে ছোঁড়া হয়েছে। অথচ আমাকে সেই তথ্য আড়াল করতে বলা হয়।’
Advertisement
ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে চিকিৎসা মহলেও। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, গুলির ক্ষত আড়াল করা হলে তা সহজেই ধরা পড়ে। কারণ ক্ষতের চারপাশের চিহ্ন, ‘গুলি’র দূরত্ব ও দিক নির্দেশ করে।
Advertisement
অন্যদিকে, পুলিশ দাবি করেছে, চিকিৎসকের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। শামলির পুলিশ সুপার এনপি সিংহ বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ মেনে প্রতিটি ময়নাতদন্তে চিকিৎসকদের প্যানেল থাকে এবং গোটা প্রক্রিয়ার রেকর্ড থাকে। দীপক চৌধরিকে কখনও কোনও প্যানেলে রাখা হয়নি।’
ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকা মামলার বর্ণনা অনুযায়ী, পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছিল বলে দাবি করা হয়। প্রতিরোধ করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে আহত অভিযুক্তকে হাসপাতালে আনা হলে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
চিকিৎসকের আরও অভিযোগ, তাঁর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জানলা ভেঙে চুরি যাওয়া টাকা ও নথির তদন্তেও উদাসীন পুলিশ। তিনি জানান, ‘চুরি নিয়ে মাথা ঘামানোর বদলে পুলিশ বারবার জানতে চাইছিল টাকার উৎস কী। একই প্রশ্ন বারবার করা হয়েছে।’ পুলিশ জানিয়েছে, চুরির ঘটনায় একজনকে আটক করা হলেও অসুস্থতার কারণে তাঁকে ছাড়া হয়েছে। সুস্থ হলে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
পুরো ঘটনার তদন্তে শামলিতে নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। চিকিৎসকের অভিযোগ সত্যি হলে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হবে প্রশাসনিক স্বচ্ছতার উপর। এমনটাই মত স্থানীয় বাসিন্দাদের।
Advertisement



