রামলীলা ময়দানে কেজরিওয়ালের গ্রেফতারের প্রতিবাদে একজোট ‘ইন্ডিয়া’

Written by SNS March 31, 2024 6:08 pm

দিল্লি, ৩১ মার্চ – অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মুক্তির দাবিতে ইন্ডিয়া জোটের মহা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হল দিল্লির রামলীলা ময়দানে। বহুদিন পর ঐক্যবদ্ধ ইন্ডিয়া জোটের ছবি ধরা পরে রবিবারের রামলীলা ময়দানে।  সেই মঞ্চে রবিবার উপস্থিত ছিলেন রাহুল গান্ধি , মল্লিকার্জুন খাড়্গে, সীতারাম ইয়েচুরি প্রমুখ। সেই মঞ্চ থেকেই দেশবাসীর উদ্দেশে কেজরিওয়ালের ছ’টি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি শোনালেন সুনীতা কেজরিওয়াল। তিনি বলেন, ”দেশের মানুষ কেজরিওয়ালের পাশে আছেন। তাঁকে আজীবন জেলে রাখা যাবে না।” এদিকে তৃণমূলের দূত হিসেবে এই সভায় উপস্থিত ছিলেন রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। দিল্লি না গিয়েও রবিবার তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত ছিলেন রামলীলা ময়দানে।  মঞ্চে দুটি এলইডি স্ক্রিনে ফুটে উঠছিল বিরোধী দলের নেতানেত্রীদের মুখ।  ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিও।    

আবগারি দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এর পর থেকেই প্রকাশ্যে বারবার বার্তা  কেজরিওয়ালের স্ত্রী সুনীতা। রবিবার প্রথম রাজনৈতিক মঞ্চে দেখা গেল সুনিতা কেজরিওয়ালকে। জেলবন্দি স্বামী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের  হেফাজত থেকে পাঠানো বার্তা পড়ে শোনান সুনীতা। রামলীলা ময়দানে বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র ডাকা ‘মহা সমাবেশ’-এর অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন সুনিতা ছাড়াও ওপর এক মহিলা কল্পনা সোরেন। ‘লোকতন্ত্র বাঁচাও’ বলে যে সুর রামলীলা ময়দান থেকে বিরোধীরা বেঁধে দিতে উদ্যোগী হয়েছিলেন, সেই সুর আরও জোরালো করলেন সুনীতা এবং কল্পনা।

জেলে থাকাকালীন ইতিমধ্যেই একাধিক সরকারি নির্দেশ দিয়েছেন কেজরিওয়াল। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা, তাঁর পদত্যাগও দাবি করেছে। তবে রবিবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রশ্ন তোলেন। দিল্লির ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, বিজেপির দাবি অনুযায়ী কেজরিওয়াল পদত্যাগ করবেন না। এরপরই তিনি কেজরিওয়ালের পাঠানো বার্তা পড়ে শোনান ।

দেশবাসীর কথা ভেবে যে ছটি প্রতিশ্রুতির দেওয়া হয়েছে সেগুলি হল, দেশে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পরিষেবা, গরিব মানুষদের বিনামূল্যে বিদ্যুৎ পরিষেবা ,  দেশের প্রতিটি গ্রামে সরকারি স্কুল স্থাপন করে শিশুদের পড়াশুনার ব্যবস্থা করা,  প্রতিটি গ্রামে বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য মহল্লা ক্লিনিক স্থাপন করা, প্রতি জেলায় সরকারি মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতাল, স্বামীনাথন কমিশনের প্রস্তাব অনুসারে কৃষকদের ফসলের ন্যায্য মূল্য দেওয়া, এবং ক্ষমতায় এলে দিল্লিকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া। 

ঘটনাচক্রে, দু’জনের স্বামীই ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং  হেমন্ত সোরেন। প্রথম জন ইডি হেফাজতে আর দ্বিতীয় জন জেলবন্দি। জমি দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হওয়ার আগে অবশ্য হেমন্ত সোরেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। কিন্তু কেজরিওয়াল এখনও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী পদে রয়েছেন। সেই দিল্লিতেই ঐক্যবদ্ধ হলেন বিরোধীরা ।

লোকসভা ভোটে কেজরীওয়ালের ছয়টি প্রতিশ্রুতির কথা শোনানোর পর উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আমার স্বামীকে জেলে বন্দি করে রেখেছেন। আপনারা বলুন  এটা ঠিক?  আপনারা বিশ্বাস করেন তো কেজরিওয়াল দেশপ্রেমিক এবং সৎ ?  বিজেপি সমর্থকরা বলছেন কেজরিওয়ালের পদত্যাগ করা উচিত। কিন্তু আপনারাই বলুন, তাঁর কী করা উচিত?” এর পরই সুনীতা গলা চড়িয়ে বলেন, ‘‘আপনাদের কেজরিওয়াল সিংহ। তাঁকে বেশি দিন জেলে বন্দি করে রাখা যাবে না।’’

সভায় বক্তব্য রাখার সময় পুলওয়ামা হামলা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ডেরেক। ডেরেক বলেন, ‘আমরা চাই সত্যিটা সামনে আসুক। আমরা শ্বেতপত্র চাই।’ মঞ্চে রাখা দুটি ফাঁকা চেয়ার দেখিয়ে তিনি বলেন , আমরা দুটো আসন ফাঁকা রেখেছি কেজরিওয়াল এবং সোরেনের জন্য। তাঁরা আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন।   

 ইন্ডিয়া জোটের ভবিষ্যৎ যে সম্পূর্ণ অন্ধকারে নয়, রবিবার দিল্লির রামলীলা ময়দানে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারির প্রতিবাদে বিরোধীদের সভায় আরও একবার স্পষ্ট করল তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন, সাগরিকা ঘোষরা সাফ জানিয়ে দিলেন,ইন্ডিয়া  জোটে তৃণমূল ছিল, আছে এবং থাকবে। মনে করা হচ্ছে, ভোট পরবর্তী জোটের রাস্তা খোলা রাখলেন তাঁরা।