উত্তর প্রদেশের সীতাপুরে ফের বাঘের হামলায় প্রাণ হারালেন এক কৃষক। শুক্রবার সকালে মাহোলি এলাকার বাসেরা গ্রামে এই ভয়াবহ ঘটনাটি ঘটে। নিহত রাজেশ কুমার সকালবেলায় গ্রামের পাশের মাঠে গবাদি পশুর জন্য ঘাস কাটতে গিয়েছিলেন। সেই সময় হঠাৎই একটি বাঘ তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাঘের আক্রমণে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয় বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।
এই ঘটনা সামনে আসতেই এলাকায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা দ্রুত জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁদের অভিযোগ, তরাইয়ের জঙ্গল থেকে একটি মানুষখেকো বাঘ সম্প্রতি এই অঞ্চলে ঢুকে পড়েছে এবং একের পর এক হামলা চালাচ্ছে। রাজেশ কুমারের মৃত্যু এই সপ্তাহে বাঘের আক্রমণে দ্বিতীয় প্রাণহানির ঘটনা। এর আগে পাশের নারনহি গ্রামে ২২ বছর বয়সি যুবক শুভম দীক্ষিত বাঘের শিকার হয়েছিলেন।
Advertisement
বন দপ্তর অবশ্য এখনও নিশ্চিত নয় যে এই দু’জনের মৃত্যু বাঘের হামলাতেই হয়েছে কিনা। সীতাপুরের বিভাগীয় বনাধিকারিক নবীন খান্ডেলওয়াল জানিয়েছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে, এখনও নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে গ্রামবাসীরা এই বক্তব্যে আশ্বস্ত নন। তাঁরা প্রশাসনের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন এবং অবিলম্বে কার্যকরী পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।
Advertisement
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক শশাঙ্ক ত্রিবেদী নিজে রাইফেল হাতে এলাকায় টহল শুরু করেন। তাঁকে সশস্ত্র রক্ষীদের সঙ্গে নিয়ে গ্রামে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। সমাজমাধ্যমে সেই ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছেন, কোনও সরকারি অনুমতি ছাড়াই কীভাবে একজন জনপ্রতিনিধি রাইফেল হাতে বনাঞ্চল সংলগ্ন গ্রামে টহল দিতে পারেন। পরিবেশকর্মীরাও মনে করছেন, এই আচরণ বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইনের পরিপন্থী হতে পারে।
প্রসঙ্গত, ১৯৭২ সালের ভারতীয় বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী বাঘ ১ নম্বর তফসিলভুক্ত প্রাণী। জাতীয় পশু হিসেবে তার সুরক্ষার বিধানে রয়েছে কঠোর নিয়ম। বাঘের কোনও ক্ষতি বা ক্ষতির চেষ্টা করা দণ্ডনীয় অপরাধ। বিধায়ক শশাঙ্ক ত্রিবেদীর এই টহলদারি সেই আইনের লঙ্ঘন কিনা, তা নিয়ে এখন শুরু হয়েছে আইনি বিতর্কও।
এদিকে এই ঘটনার পর গোটা অঞ্চলে তীব্র ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। বহু কৃষক মাঠে যেতে ভয় পাচ্ছেন। এলাকায় কার্যত থমথমে পরিবেশ। স্থানীয় বাসিন্দারা অবিলম্বে বাঘ ধরার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবিও জানিয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বন দপ্তরের পাশাপাশি পুলিশের ভূমিকাও এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
Advertisement



