বছরের শুরুতেই মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং ঘোষণা করেছিলেন নতুন বছরে অশান্তির অনেকটাই কমবে মণিপুরে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার অমিত শাহের ঘনিষ্ঠ অজয় কুমার ভাল্লাকে মণিপুরের রাজ্যপাল করে পাঠিয়েছে। কিন্তু তাতেও উত্তর পূর্বের এই রাজ্যটির অশান্তির গ্রাফ বিন্দুমাত্র কমেনি বরং বেড়েছে। এবার অসম রাইফেলসের একটি অস্থায়ী ঘাঁটিতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন লাগিয়ে দিলো উত্তেজিত জনতা। ঘটনাটি ঘটেছে কাংপোকপি জেলার গেলজাং মহকুমায়। জনতার অভিযোগ, অসম রাইফেলস তল্লাশির নামে হেনস্থা করছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। তবে স্থানীয় সূত্রের খবর, হংবেং এলাকার নাগা জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকায় বাড়ি তৈরির জন্য বেআইনিভাবে কাঠ কেটে নিয়ে যাচ্ছিলেন কয়েকজন। কাঠবোঝাই গাড়িটি অসম রাইফেলসের জওয়ানেরা আটকালে অশান্তির সূত্রপাত। উত্তেজিত জনতা অসম রাইফেলস-এর অস্থায়ী ক্যাম্পে হামলা চালায়। জিনিসপত্র ভাঙচুর করার পাশাপাশি আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। এই ঘটনায় হতাহতের কোনও খবর পাওয়া যায়নি।
অশান্তির ও হামলার কিছুক্ষণের মধ্যেই মণিপুরের কাংপোকপি জেলার গেলজাং মহকুমার বেশ কিছু অংশে শনিবার থেকে কার্ফু জারি করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন সাফ জানিয়ে দিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত কার্ফু কোনোভাবে শিথিল করা যাবে না। অসম রাইফেলসের ওপর হামলার ঘটনায় এই কার্ফু কিনা, তা খোলসা করে বলেননি জেলা প্রশাসনের কেউই। শুধুমাত্র জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তার জন্যেই তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ঘটনার পরই সিআরপিএফ আধিকারিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন রাজ্যপাল অজয় কুমার ভাল্লা। ঘটনার পুরো রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন তিনি।
মণিপুরের কাংকোপকি জেলা এর আগেও হিংসার ঘটনায় সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছিলো। বছরের শুরুতে এই জেলার পুলিশের এক ডেপুটি কমিশনারের দপ্তরে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছিলো কুকি জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। তারপর নানা বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবরও পাওয়া যাচ্ছিলো। এখানকার কুকি জনগোষ্ঠী বারবার একটাই কথা বলে আসছে, যে কোনো মূল্যে এলাকা থেকে নিরাপত্তা বাহিনীকে সরিয়ে নিতে হবে। নিরাপত্তা দেওয়ার পরিবর্তে এলাকার মানুষকে নিরাপত্তা বাহিনী হেনস্থা করছে। যদিও কুকি জনজাতির মানুষের এই দাবিকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি মণিপুর সরকার।
গত বছরের মে মাস থেকে মেইতেই এবং কুকি-জো সম্প্রদায়ের মধ্যে হিংসা ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মণিপুর। তারপর থেকে এই অশান্তি তো কমেইনি বরং উত্তরোত্তর বেড়েছে। এই সংঘর্ষে একাধিক প্রাণহানি হয়েছে। বাড়িঘর ও প্রচুর সম্পত্তির ক্ষতিও হয়েছে। এমনকি এই হামলা থেকে বাদ যাননি মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংও। তাঁর বিধায়করাও আক্রান্ত হয়েছেন। মণিপুরে এই অশান্তি নিয়ে বিরোধীরা বারবার মোদী সরকারের দিকে আঙুল তুললেও প্রধানমন্ত্রী একবারও মণিপুরে পা রাখেননি। বছরের শুরুতে মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং অশান্তির জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন। শান্তি ফিরবে এই আশ্বাসও দিয়েছিলেন। তাঁর আশ্বাসে যে কোনও কাজ হয়নি, এই ঘটনায় তা পরিষ্কার।



