আবাসন শিল্পের সংকট কাটাতে ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন আবাসন শিল্পের উন্নতির জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের ঘােষণা করলেন।

Written by SNS New Delhi | September 15, 2019 12:28 pm

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ (File Photo: Twitter/@BJP4India)

নােটবন্দির পর থেকেই আবাসন শিল্পে ঘনিয়ে আসে মন্দার কালাে ছায়া। আবাসন ক্ষেত্রে ফ্ল্যাট বিক্রি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে, সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আইনি জটিলতা ও কড়া ঋণনীতি। সব মিলিয়ে পথে বসতে হচ্ছে আবাসন নির্মাতাদের। রুগ্ন শিল্প হিসাবে আবাসন শিল্পকে চাঙ্গা করতে এগিয়ে এল কেন্দ্র সরকার। আজ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন আবাসন শিল্পের উন্নতির জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের ঘােষণা করলেন। এতে দেশে সাড়ে তিন লক্ষ অসমাপ্ত আবাসন প্রকল্প উপকৃত হবে বলে তিনি দাবি করেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, নতুন আবাসন কেনা আরও সহজলভ্য এবং সাধ্যের মধ্যে হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদির সরকার বিশেষ অর্থ তহবিল গঠন করেছে যাতে অসমাপ্ত আবাসনগুলির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। সরকারি কর্মচারিরা ফ্ল্যাট কেনায় উৎসাহ পান সেদিকটায় জোর দিচ্ছে সরকার। এতে আবাসন কেনায় উৎসাহ পাবেন সরকারি কর্মচারিরা। চালু আবাসন প্রকল্পের ক্ষেত্রে যাদের কার্যকরী মূলধন নেই এবং যাঁরা বকেয়া কিস্তি প্রদানে কোনও গাফিলতি করেননি তাদের এনসিএলটি-র অধীনে দেউলিয়া প্রক্রিয়া শুরু হবে, এবং মধ্য আয়ের ক্যাটাগরির মানুষ এই প্রকল্পের অধীনে থাকবেন বলে জানান নির্মলা সীতারমন।

সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত ঘােষণা করে অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকারি উদ্যোগে এই ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল এবং বেসরকারিভাবেও একই পরিমাণ অর্থ এই তহবিলে জমা হবে। অসমাপ্ত নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করার জন্যেই এই সিদ্ধান্ত ঘােষণা করা হয়েছে। ন্যায্য মূল্যে এবং মধ্য আয়ের আবাসন প্রকল্প সম্পাদনের জন্যেই এই ব্যবস্থা। তবে এই তহবিল বন্টনের ক্ষেত্রে পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন পেশাদারগণ। গৃহঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার আরও কম করা যায় কি না, সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে, এবং তা ১০ বছরের জি-সেক, ক্ষেত্ৰভুক্ত করার চিন্তাভাবনা হচ্ছে। এতে প্রাথমিকভাবে সরকারি কর্মচারীরাই সুবিধা পাবেন। কারণ সরকারি কর্মীরাই আবাসনের ক্ষেত্রে মূল চাহিদা সৃষ্টি করে থাকেন। আবাসন নির্মাণের ক্ষেত্রে অগ্রিমের পরিমাণ হ্রাস করার সরকারি সিদ্ধান্তের ফলে কর্মীরা আরও বেশি সংখ্যায় নতুন গৃহক্রয়ের জন্য উৎসাহিত হবে।

তৃতীয় শর্ত হিসাবে নির্মলা সীতারমন ঘােষণা করেছে বাইরে থেকে বাণিজ্যিক ঋণনীতি। তিনি বলেন ইসিবি নীতি শিথিল করা হবে গৃহ ক্রয়কারীদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে যাঁরা প্রধানমন্ত্রী আবাস যােজনায় গৃহ কেনার উপযুক্ত বিবেচিত হবে। গৃহঋণের ক্ষেত্রে সুদ হ্রাস করার সরকারি ঘােষণায় অর্থমন্ত্রককে বিভিন্ন বেসরকারি আবাসন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলির পক্ষ থেকে স্বাগত জানান হয়েছে। দশ যােগ দশ সমান ২০ হাজার কোটি টাকার অর্থ তহবিল গঠনের ফলে অসমাপ্ত আবাসন প্রকল্পগুলি সহজেই তাদের কাজ সমাপ্ত করতে পারবে। এর ফলে প্রকল্পের অগ্রগতিতে ক্রেতারা উৎসাহিত হয়ে অগ্রিম অর্থ বিনিয়ােগ করতে উজ্জীবিত হবেন। আবাসন শিল্পে বিপুল পরিমাণ আর্থিক লেনদেনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ইসিবির নীতি আরও শিথিলের ঘােষণার ফলে একদিকে নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলি, অন্যদিকে গৃহের ক্রেতারাও সহজ শর্তে মুলধন সংগ্রহে সুযােগ পাবেন বলে মন্তব্য করেছেন মার্লিন গ্রুপের চেয়ারম্যান সুশীল মােহতা।

আজ সাংবাদিক সম্মেলনে শিল্পোৎপাদনে জোর দেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। মুল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে শিল্পোৎপাদনকেই একমাত্র দাওয়াই বলে মনে করছেন নির্মলা সীতারমন । মােদি সরকারের আমলে আর্থিক মন্দা গত ৭০ বছরে দেশ দেখেনি বলে বিরােধীরা যে প্রচার চালাচ্ছেন তার উত্তরে আজ অর্থমন্ত্রী জানান, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এখনও ৪ শতাংশের নীচে রয়েছে। এটাই অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ার লক্ষ্যণ। শীঘ্রই উৎপাদন শিল্প বৃদ্ধি পাবে, দেশে বিপুল বিদেশি বিনিয়ােগের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে রফতানি এবং গৃহনির্মাণকেই যে কেন্দ্র পাখির চোখ করছে তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ২০২০ সালে ‘মেগা শপিং ফেস্টিভ্যাল’-এর আয়ােজন করতে চলেছে সরকার। তার আগে আগামী বছর মার্চ মাসে হবে ৪টি মেগা শপিং ফেস্টিভ্যাল। মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পের উন্নতির জন্যই এমনই পরিকল্পনা বলে জানিয়েছেন তিনি।

কর ফাঁকি একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। তবে ছােটখাটো আয়করদাতাদের জন্য সুখবর দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন । আয়কর সংক্রান্ত ছােটখাটো কর ফাঁকি অপরাধের ক্ষেত্রে মামলা করা হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি। নির্মলা সীতারমন বলেন, যে সব ক্ষেত্রে বড়সড় গলদ ধরা পড়বে সেক্ষেত্রেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ছােট অপরাধের ক্ষেত্রে কোনও মামলা করা হবে না। ২৫ লাখ টাকার কম আয়কর বকেয়ার ক্ষেত্রে ২ উচ্চপদস্থ আধিকারিকের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।