• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

জেল থেকে ‘শান্তি এবং ঐক্য’-এর বার্তা সোনম ওয়াংচুকের, সোমবার সুপ্রিম কোর্টে শুনানি

বিক্ষোভের জেরে মৃত চার জনের বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানালেন

লাদাখে ‘গণবিক্ষোভ’-এ উসকানির অভিযোগে গ্রেপ্তার হন গবেষক, পরিবেশবিদ তথা সমাজকর্মী সোনম ওয়াংচুক। বর্তমানে তিনি রাজস্থানের যোধপুর জেলে বন্দি রয়েছেন। এবার জেল থেকে লেহতে ‘শান্তি এবং ঐক্য’ বজায় রাখার বার্তা দিলেন তিনি। সেই সঙ্গে বিক্ষোভের জেরে মৃত চার জনের বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানালেন।

সোনমের বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয়শাসিত অঞ্চলের প্রশাসন। সোনমের গ্রেপ্তারি ‘বেআইনি’ দাবি তুলে নতুন করে আন্দোলন শুরু হয়েছে সেখানে। সেই আবহে এ বার জেলে বসেই ‘বার্তা’ দিলেন সোনম। শনিবার সোনমের সঙ্গে জেলে দেখা করতে যান তাঁর আইনজীবী এবং ভাই। তাঁদের মাধ্যমে সোনম লাদাখবাসীকে শান্তি এবং ঐক্য বজায় রাখার বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ ভাবে সংগ্রাম চালিয়ে যান।’ সহিংসতার পথ ছেড়ে গান্ধীবাদী অহিংসার পথে আন্দোলন চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন সোনম।

Advertisement

লাদাখবাসীর উদ্দেশে লেখা এক চিঠিতে সোনম বলেছেন, ‘আমি শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো আছি। সকলেই উদ্বিগ্ন ছিলেন। তাঁরা প্রার্থনা করছিলেন। তার জন্য ধন্যবাদ। এই আন্দোলনে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রইল। পাশাপাশি, যাঁরা আহত এবং গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাঁদের জন্য আমি প্রার্থনা করছি। যে চার আন্দোলনকরীর মৃত্যু হয়েছে, তার একটি স্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া উচিত। যদি তা না হয়, তাহলে আমি জেলে থাকতে প্রস্তুত।’  তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘লাদাখকে রাজ্যের মর্যাদার দাবি-সহ একাধিক ইস্যুতে আমি লাদাখের জনগণের পাশে আছি। আমি জনগণকে শান্তি ও ঐক্য বজায় রাখার এবং শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য আবেদন করছি। এই আন্দোলন যেন সত্যিকারের গান্ধীবাদী অহিংসার পথে হয়।’

Advertisement

লাদাখকে পূর্ণ রাজ্য এবং  সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাজধানী শহর লেহতে  বিক্ষোভ দেখায় সাধারণ মানুষ। বিজেপির পার্টি অফিসে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। সেই সঙ্গে পার্টি অফিসের সামনে থাকা একটি পুলিশের গাড়িতেও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সংঘর্ষে মৃত্যু হয় চারজনের।

লাদাখে গণবিক্ষোভের ২ দিন পর অর্থাৎ ২৬ সেপ্টেম্বর সোনমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শুক্রবার এক সাংবাদিক সম্মেলন করার কথা ছিল সোনমের। সেই সাংবাদিক সম্মেলনের ঠিক পাঁচ মিনিট আগে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। সূত্রের খবর,  গ্রেপ্তারির পরই সোনমকে লাদাখ থেকে সরিয়ে রাজস্থানের যোধপুর জেলে নিয়ে যাওয়া হয়।

সোনমের গ্রেপ্তারির পর অশান্তি আটকাতে শহরের ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বর্তমানে গোটা লাদাখ কড়া পুলিশি প্রহরায় রয়েছে। জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এদিকে ওয়াংচুকের বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই আইনে সরকার শুধুমাত্র সন্দেহের বশে যে কাউকে দিনের পর দিন আটকে রাখতে পারে। জামিনও পাওয়া যায় না।

সোনমের মুক্তির দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে হেবিয়াস কর্পাসে আবেদন করেছেন তাঁর স্ত্রী গীতাঞ্জলি আংমো। সোনমের গ্রেপ্তারিকে বেআইনি বলে দাবি করেছেন তিনি। গীতাঞ্জলির আর্জি অনুযায়ী, আগামী ৬ অক্টোবর অর্থাৎ সোমবার শীর্ষ আদালতে বিচারপতি অরবিন্দ কুমার এবং বিচারপতি এনভি আঞ্জারিয়ার বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হবে।

সোনমের গ্রেপ্তারের পরে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল এবং লাদাখের লেফটেন্যান্ট গভর্নর কবীন্দ্র গুপ্তকেও চিঠি লেখেন তাঁর স্ত্রী গীতাঞ্জলি। স্বামীর অবিলম্বে মুক্তির আর্জি জানান তিনি। চিঠিতে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘জনগণের স্বার্থকে সমর্থন করা কি পাপ?’ সমাজমাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘সোনম ওয়াংচুকের মুক্তি চেয়ে আমি সুপ্রিম কোর্টে হেবিয়াস কর্পাস আবেদন করেছি। আজ এক সপ্তাহ হয়ে গিয়েছে। তবুও আমার কাছে ওয়াংচুকের স্বাস্থ্য, তাঁর অবস্থা বা আটকে রাখার কারণ সম্পর্কে কোনও তথ্য নেই।’

 

Advertisement