আরএসএস-এর মন্তব্যকে সমর্থন করে ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ও ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দ দু’টি বাদ দেওয়া নিয়ে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিলেন মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান। তিনি দাবি করেছেন, ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনার এই দুটি বিষয় নিয়ে অবশ্যই আলোচনা হওয়া উচিত। শিবরাজের মন্তব্য, ভারতে সমাজবাদের কোনও প্রয়োজন নেই। ধর্মনিরপেক্ষতাও ভারতীয় সংস্কৃতির মূল নয়।
সম্প্রতি আরএসএস-এর সাধারণ সম্পাদক দত্তাত্রেয় হোসাবলে দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে বলেন, জরুরি অবস্থার সময় ‘সমাজতান্ত্রিক’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দ দু’টি ভারতীয় সংবিধানে যোগ করা হয়। সংবিধানের মূল প্রস্তাবনায় এগুলি ছিল না। পরে এই শব্দগুলি আর সরানো হয়নি। এগুলিকে সরানো হবে কিনা তা নিয়ে অবশ্যই বিতর্ক হওয়া দরকার। জরুরি অবস্থার সময় মানুষের অধিকার ছিল না, ন্যায়বিচারও ছিল না। সেই সময়ই এই শব্দগুলি যোগ করা হয়।
এরপরই এই আরএসএস-এর কার্যকর্তা নাম না করে গান্ধী পরিবারকে আক্রমণ করেন। তাঁর আক্রমণের মূল লক্ষ্য যে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, সে বিষয়টিরও স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এদিন রাহুলের নাম না করে তাঁকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘সেদিন যাঁরা এটা করেছিলেন (এমার্জেন্সি), তাঁরাই আজ সংবিধানের কপি নিয়ে ঘুরে বেড়ান। ওঁরা কিন্তু আজ পর্যন্ত ভারতীয় জনতার কাছে কৃতকর্মের জন্য কোনও ক্ষমা চাননি।’
এই প্রসঙ্গে শনিবার জরুরি অবস্থার ৫০ বছর পূর্তিতে বারাণসীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শিবরাজ সিং চৌহান বলেন, ‘ভারতে সমাজতন্ত্রের কোনও প্রয়োজন নেই। ধর্মনিরপেক্ষতা আমাদের সংস্কৃতির মূলও নয়। তাই এই বিষয়ে অবশ্যই আলোচনা হওয়া দরকার।’ তিনি প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তথা তৎকালীন কংগ্রেস সরকারকে নিশানা করে বলেন, ‘বাহ্যিক নিরাপত্তার জন্য কোনও ভয় ছিল না। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্যও কোনও বিপদ ছিল না। একমাত্র ভয় ছিল প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার নিয়ে। তাই ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন রাতে, মন্ত্রিসভার কোনও বৈঠক না করেই দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল।’
এদিকে শিবরাজ সিংয়ের এই বিষয়টিকে সমর্থন করেছেন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকরও। তিনি জরুরি অবস্থার সময় সংবিধানের এই পরিবর্তনের বিরোধিতা করে বলেছেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা বদলানো যায় না। তিনি বলেছেন, ‘ভারতের সংবিধান ছাড়া অন্য কোনও সংবিধানের প্রস্তাবনা কখনও পরিবর্তিত হয়নি। কারণ সংবিধানের প্রস্তাবনা অপরিবর্তনযোগ্য।’
উপরাষ্ট্রপতির মন্তব্য, কিন্তু আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনা জরুরি অবস্থার সময়, ১৯৭৬ সালের ৪২তম সংবিধান (সংশোধনী) আইন দ্বারা পরিবর্তিত হয়েছিল। ‘সমাজতান্ত্রিক’, ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ এবং ‘অখণ্ডতা’ শব্দগুলি যুক্ত করা হয়েছিল। এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের অবশ্যই চিন্তা করতে হবে।