• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

রাষ্ট্রসঙ্ঘের সম্মেলনে যাচ্ছেন না মোদী, প্রতিনিধিত্ব করবেন জয়শঙ্কর

সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যোগ দিচ্ছেন না।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত হতে চলা রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যোগ দিচ্ছেন না। তাঁর পরিবর্তে ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে ওই সম্মেলনে অংশ নেবেন বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর। সূত্রের খবর, সম্মেলনে ভারতের পক্ষ থেকে ভাষণও দেবেন তিনি।

রাষ্ট্রসঙ্ঘের বার্ষিক সাধারণ অধিবেশনটি শুরু হবে ২৩ সেপ্টেম্বর এবং তা চলবে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ২৭ তারিখ সকালে ভারতের ভাষণের সময় দেওয়া হয়েছে। পূর্বনির্ধারিত তালিকায় প্রধানমন্ত্রী মোদীর নাম থাকলেও শেষ মুহূর্তে সাউথ ব্লক সিদ্ধান্ত বদলে বিদেশমন্ত্রীকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

Advertisement

এই সম্মেলনে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পেরও। মোদী গেলে রাষ্ট্রসঙ্ঘের মঞ্চে তাঁকে ও ট্রাম্পকে একসঙ্গে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। এমনকি দু’জনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও হতে পারত বলে ধারণা করা হচ্ছিল। তবে প্রধানমন্ত্রীর সফর বাতিলের ফলে সেই সম্ভাবনা এখন কার্যত শেষ।

Advertisement

বিশ্লেষকদের মতে, মোদীর এই সিদ্ধান্তের পেছনে সাম্প্রতিক ভূরাজনৈতিক ও কূটনৈতিক টানাপোড়েন একটি বড় কারণ। রাশিয়া থেকে খনিজ তেল আমদানির কারণে সম্প্রতি আমেরিকা ভারতের কিছু পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে। এর ফলে দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক কিছুটা খারাপ হয়েছে।

পাশাপাশি, চিন এবং রাশিয়ার সঙ্গে মোদীর সাম্প্রতিক ঘনিষ্ঠতা ও বৈঠকগুলিকে ভালো চোখে দেখেননি ট্রাম্প। এসসিও সম্মেলনে মোদীর পুতিন ও শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকও ওয়াশিংটনের অস্বস্তির কারণ হয়েছে বলে ধারণা।

এছাড়াও, জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামে জঙ্গি হামলা এবং পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত উত্তেজনা নিয়েও ট্রাম্পের মন্তব্য ভারতকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনিই ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা প্রশমনে ভূমিকা রেখেছেন, যদিও দিল্লি সরকার সে দাবি খারিজ করেছে।

এই পরিস্থিতিতে আমেরিকায় মোদীর উপস্থিতি রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে জটিলতা তৈরি করতে পারত বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, মুখোমুখি সাক্ষাতে ট্রাম্পের সঙ্গে হাত মেলানো বা আলোচনায় বসা জনমানসে ভুল বার্তা দিতে পারত, তা এড়াতেই মোদীর এই কৌশলগত সিদ্ধান্ত।

তবে এই সিদ্ধান্তে কিছুটা সুযোগও হাতছাড়া হচ্ছে। ট্রাম্পের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে বর্তমানে সৃষ্টি হওয়া বাণিজ্য সংকট সমাধানের পথ খুলতে পারতেন মোদী। বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর সেই জাতীয় প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়ে গিয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে, শুক্রবার ট্রাম্পের একটি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা ছবি নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তিনি একটি ছবি পোস্ট করে লেখেন, ‘ভারত এবং রাশিয়াকে আমরা চিনের অন্ধকারে হারিয়ে ফেলেছি।’ যদিও পরে তিনি মত পাল্টে বলেন, মোদীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো এবং তিনি ভারতকে হারাননি। তবে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানিতে তিনি কিছুটা হতাশ, এমন মন্তব্যও করেন ট্রাম্প।

সব মিলিয়ে, রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ সম্মেলনে ভারতের প্রতিনিধিত্ব ঘিরে এই বছরের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সমীকরণ যে যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করছে, তা স্পষ্ট। মোদীর অনুপস্থিতি এবং জয়শঙ্করের উপস্থিতি এই সমীকরণে কী প্রভাব ফেলে, সেই দিকেই নজর থাকবে আন্তর্জাতিক মহলের।

Advertisement