• facebook
  • twitter
Monday, 12 May, 2025

কেন্দ্রের নতুন শিক্ষানীতি মানতে কোনও রাজ্যকে বাধ্য করা যাবে না: সুপ্রিম কোর্ট

আবেদনকারী দাবি করেন, ওডিশা ও দিল্লিতে সরকার পরিবর্তনের পর বর্তমানে শুধু তিনটি রাজ্য—তামিলনাড়ু, কেরল ও পশ্চিমবঙ্গই এই সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি।

ফাইল চিত্র

কেন্দ্রের নতুন শিক্ষানীতি মানতে কোনও রাজ্যকে বাধ্য করা যাবে না। এক মামলার পর্যবেক্ষণে এই মন্তব্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট।বিচারপতি জেবি পারদিওয়াল এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের যৌথ বেঞ্চ এদিন জানায়, কেন্দ্রের নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে কোনও রাজ্যকে বাধ্য করা যাবে না। অর্থাত নতুন শিক্ষানীতি কোনও রাজ্যের উপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। 

 এক মামলায় মামলাকারীর বক্তব্য ছিল, কেন্দ্রীয় নির্দেশ মেনে জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়িত করলে শিক্ষার্থীদের লাভ। কিন্তু এই নয়া শিক্ষানীতির বিরোধিতা করে রাজ্যগুলি ছাত্র-ছাত্রীদের ক্ষতি করছে, তাঁদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করছে। তাই সুপ্রিম কোর্টের কাছে তাঁর আর্জি ছিল, রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হোক কেন্দ্রের জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করার। তাঁর এও যুক্তি ছিল, নতুন শিক্ষানীতির বাস্তবায়ন ঘটাতে রাজ্যগুলি সাংবিধানিক ভাবে বাধ্য। 

কিন্তু দেশের শীর্ষ আদালত তা মনে করছে না। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, কেন্দ্র চাইলে নতুন শিক্ষানীতি কোনও রাজ্যের ওপর চাপিয়ে দিতে পারে না। জাতীয় শিক্ষানীতি গ্রহণ করার জন্য কোনও রাজ্যকে বাধ্য করাও যায় না। তাই এক্ষেত্রে কোনও পদক্ষেপ শীর্ষ আদালত করবে না। তবে এটাও জানানো হয়েছে, রাজ্যের পদক্ষেপ যদি নাগরিকদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে, তাহলে সেই পরিপ্রেক্ষিতে পদক্ষেপ করতে পারে আদালত। 

 কেন্দ্রের নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্য আপত্তি তোলে। সেই তালিকায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, কেরলের মতো অবিজেপি  শাসিত রাজ্যগুলি। কেন্দ্রের নির্দেশে দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে নতুন শিক্ষানীতির বাস্তবায়ন হলেও বাংলা, তামিলনাড়ু এখনও নিজেদের পুরনো অবস্থানে রয়েছে। প্রথম থেকেই তাদের বক্তব্য ছিল, ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী শিক্ষাব্যবস্থা যৌথ তালিকাভুক্ত। তবে নয়া শিক্ষানীতি নিয়ে কেন্দ্র একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা সংবিধানবিরোধী। 
 
নতুন শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে আপত্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মামলাকারী। তাঁর দাবি, সংশ্লিষ্ট কয়েকটি রাজ্যের শাসকদল অহেতুক নতুন শিক্ষানীতিতে রাজনৈতিক রং লাগাচ্ছে। নতুন শিক্ষানীতি কেবল শিক্ষার ক্ষেত্রে অভিন্নতা প্রদান করতে চায়। সমাজের সকল স্তরের স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য সব ভারতীয় ভাষা বিনামূল্যে শেখানো উচিত। 
 
আবেদনকারী দাবি করেন, ওডিশা ও দিল্লিতে সরকার পরিবর্তনের পর বর্তমানে শুধু তিনটি রাজ্য—তামিলনাড়ু, কেরল ও পশ্চিমবঙ্গই এই সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি। তাঁর মতে, এই জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের জন্য অপরিহার্য এবং এর মাধ্যমে আগামী তিন বছরে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার কেন্দ্রীয় অনুদান পাওয়া সম্ভব। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে আবেদনকারী বলেন, ‘জাতীয় শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর মতামত সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অন্য ভারতীয় ভাষাভাষী শিশুদের শিক্ষার অধিকারকে লঙ্ঘন করে।’ আবেদনে আরও বলা হয়, কেন্দ্রের জাতীয় শিক্ষানীতি কার্যকর না করা বা মৌ-তে স্বাক্ষর না করা জনস্বার্থে ক্ষতিকর এবং নাগরিকদের অধিকার লঙ্ঘন করতে পারে। উল্লেখ্য, ২০২০ সালে কেন্দ্র সরকার নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি ঘোষণা করে, যার উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার মানোন্নয়ন,  বিকাশ, সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা ও দক্ষতা উন্নয়নে জোর দেওয়া, পাশাপাশি প্রাথমিক সাক্ষরতায় গুরুত্ব প্রদান।

তবে সুপ্রিম কোর্ট ওই আইনজীবীর আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। শীর্ষ আদালত জানায়, জাতীয় শিক্ষানীতি গ্রহণ করার জন্য কোনও রাজ্যকে বাধ্য করতে পারে না তারা। তবে রাজ্যের পদক্ষেপ যদি নাগরিকদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে, তবে শুধু সে ক্ষেত্রেই আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে।