নতুন শ্রমবিধি কার্যকর হওয়ার পর বেসরকারি ক্ষেত্রে কর্মরত অসংখ্য মানুষের মধ্যে ‘হাতে পাওয়া বেতন’ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে সবচেয়ে বড় উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল। বিশেষত মূল বেতন বা ‘বেসিক পে’ বাড়লে প্রভিডেন্ট ফান্ডে বেশি ছাড় হবে কি না, এই প্রশ্ন অনেকের মনেই ঘুরপাক খাচ্ছিল। সেই জল্পনার মাঝেই কেন্দ্রীয় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রক শুক্রবার স্পষ্ট জানিয়ে দিল, নতুন নিয়মে কর্মচারীর ‘টেক-হোম স্যালারি’ কমার কোনও সম্ভাবনাই নেই।
মন্ত্রকের বক্তব্য, সংশোধিত বেতন কাঠামোর লক্ষ্য হল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতনে অভিন্নতা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখা। বেতন কমানো নয়। প্রভিডেন্ট ফান্ডের ছাড় যদি ১৫ হাজার টাকার বিধিবদ্ধ সীমার মধ্যে বিদ্যমান থাকে, তবে কর্মীরা হাতে যে বেতন পান, তাতে কোনও পরিবর্তন হবে না।
Advertisement
উদাহরণ অনুযায়ী, যাঁদের বেসিক বেতন মাসে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে, তাঁদের ইপিএফও-র স্কিমে অন্তর্ভুক্ত থাকা বাধ্যতামূলক। আর যাঁদের বেসিক বেতন এই সীমার উপরে, সেখানে নিয়োগকর্তার অংশগ্রহণ ‘ঐচ্ছিক’। এই ব্যবস্থার ফলে বেসরকারি ক্ষেত্রের বহু কর্মী মহার্ঘভাতা বা প্রভিডেন্ট ফান্ডের আওতার বাইরে ছিলেন। তবে শ্রম মন্ত্রক জানিয়েছে, ১৫ হাজার টাকার বিধিবদ্ধ সীমা বহাল থাকায় নতুন শ্রমবিধিতে ‘টেক-হোম স্যালারি’ কমার কারণ নেই।
Advertisement
বেসরকারি কর্মীদের বেতন কাঠামোয় ‘সিটিসি’ বা ‘কস্ট টু কোম্পানি’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যে কোনও কর্মীর জন্য সংস্থা বছরে যে মোট অর্থ ব্যয় করে, সেটাই সিটিসি। এর মধ্যে থাকে মূল বেতন, ভাতা, গ্র্যাচুইটি এবং ইপিএফ। নতুন শ্রমবিধিতে সিটিসি হিসাবের বড় পরিবর্তন হল, মোট সিটিসি’র বাধ্যতামূলক ৫০ শতাংশই মূল বেতন হিসেবে ধরা হবে। অনেক সংস্থা এত দিন মোট সিটিসি’র প্রায় ২৫ শতাংশ মূল বেতন হিসেবে দিত। ফলে বাকি অংশ ভাতা, ইপিএফ এবং গ্র্যাচুইটি হিসাবে দেখানো সম্ভব হতো।
নতুন নিয়মে উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোনও কর্মীর বার্ষিক সিটিসি যদি ১২ লক্ষ টাকা হয়, তবে তাঁর মাসিক আয় ১ লক্ষ টাকার মধ্যে ‘বেসিক পে’ ২৫ হাজার। তিনি ইপিএফ ও গ্র্যাচুইটি বাবদ তিন হাজার এবং বিভিন্ন ভাতা বাবদ ৭২ হাজার টাকা পেতেন। কিন্তু এখন ‘বেসিক পে’ বাধ্যতামূলকভাবে ৫০ শতাংশ হওয়ায় মূল বেতন দাঁড়াবে ৫০ হাজারে। আর ভাতা কমে দাঁড়াবে ৪৪ হাজারে এবং পিএফ-গ্র্যাচুইটির অঙ্ক হবে ৬ হাজার। ফলে মূল বেতন বাড়ায় আয়করের আওতায় পড়ার সম্ভাবনা বাড়লেও, ‘টেক-হোম স্যালারি’ কমবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় তৈরি হয়েছিল। এ বিষয়ে মন্ত্রক জানিয়েছে, পিএফ-এর বাধ্যতামূলক ছাড় যেহেতু ১৫ হাজার টাকার সীমাতেই আটকে, তাই কর্মী ও নিয়োগকর্তার পিএফ-ছাড় একই থাকবে। ফলে হাতে পাওয়া বেতনে কোনও কাটছাঁট হবে না।
শ্রম মন্ত্রক আরও জানিয়েছে, পাঁচ বছর আগে সংসদে পাশ হওয়া চারটি শ্রমবিধি— বেতন সংক্রান্ত বিধি, শিল্পের সম্পর্ক সংক্রান্ত বিধি, সামাজিক সুরক্ষা সংক্রান্ত বিধি, পেশাগত নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য ও কর্মপরিবেশ সংক্রান্ত বিধি চলতি সপ্তাহে কার্যকরের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। নতুন শ্রমবিধি যে কর্মস্থলের বেতন কাঠামোতে বড় পরিবর্তন আনবে, তা স্পষ্ট। তবে ‘টেক-হোম স্যালারি’ কমে যাওয়ার আশঙ্কাকে সরকার পুরোপুরি নস্যাৎ করে দিয়েছে।
Advertisement



