হুমকি দিয়েছিলেন সাংসদও, চিকিৎসকের সুইসাইড নোটে বিস্ফোরক সব অভিযোগ

প্রতীকী চিত্র

বার-বার পুলিশ আধিকারিকের ধর্ষণের শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন এক মহিলা চিকিৎসক। কিন্তু মৃত্যুর আগে নিজের সঙ্গে হওয়া সমস্ত নির্যাতন-অত্যাচারের বিবরণ লিখে রেখে গেছেন হাতের তালুতে। পাশাপাশি মৃতার লেখা একটি চার পাতার চিঠিও উদ্ধার হয়েছে। যেখানে তিন পুলিশ কর্মীর সঙ্গে নাম রয়েছে এক রাজনৈতিক নেতা তথা সাংসদের।  এমনকি নিরাপত্তার অভাব বোধ করার কথা জানিয়ে এসপিকে ফোন করেও কোনও লাভ হয়নি, সে কথাও লেখা আছে ওই চার পাতার সুইসাইড নোটে। ঘটনার পর অভিযুক্ত এসআইকে ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীশের নির্দেশে সাসপেন্ড করা হয়েছে।  বাকি দুই পলাতক অভিযুক্তের খোঁজে শুরু হয়েছে তল্লাশি।

অন্যদিকে, এক সংবাদপত্রের খবর অনুসারে, আত্মঘাতী তরুণী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ তুলেছে পুলিশ। স্থানীয় থানার পুলিশ মৃতা চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ‘দুর্ব্যবহার’ এবং কাজে অসহযোগিতার অভিযোগ দায়ের করেছে আগেই।  খবর অনুসারে, ফলটন গ্রামীণ থানার ইনস্পেক্টর সুনীল মহাধিক তাঁর চিঠিতে দাবি করেছেন, ওই তরুণী চিকিৎসক পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করতেন না। আধিকারিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন প্রায়ই।

গত ২২ সেপ্টেম্বর ফলটন জেলার স্বাস্থ্যকর্তার কাছে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ জমা পড়েছিল পুলিশের তরফে, সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ওই চিকিৎসক এক অপরাধীর মেডিক্যাল পরীক্ষা করতে অস্বীকার করেন। পুলিশের আশঙ্কা ছিল, এই পরীক্ষা না করালে অপরাধী আইনের হাত থেকে ছাড় পেয়ে যাবে। সেই কথা জানিয়েও চিকিৎসক রাজি হননি তাঁর কাজে। তারপর পুলিশেরই বিরুদ্ধে পাল্টা তাঁকে হেনস্থা করার অভিযোগ তোলেন চিকিৎসক।

ফলটন থানার ইনস্পেক্টর তাঁর চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, চিকিৎসককে বার বার বলা হয়, মেডিক্যাল পরীক্ষা করানো না গেলে দুই দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তার করা যাবে না, তাই মেডিক্যাল পরীক্ষা দ্রুত করানো প্রয়োজন। কিন্তু তা করানো হয়নি। এরপরই পুলিশের তরফে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ করা  এবং অপরাধীদের মেডিক্যাল পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে তাঁকে সরানো হোক। তার পরই জেলা স্বাস্থ্যকর্তার দপ্তর থেকে এই অভিযোগের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে এক প্রতিবেদনে।

মহারাষ্ট্রের সাতারার এই ঘটনায় রাজনীতিতে শুরু হয়েছে তীব্র চাপান-উতোর। তাঁর লেখা চার পাতার সুইসাইড নোটের উঠে এসেছে বিস্ফোরক সব অভিযোগ। চারবার তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ওই চিকিৎসক। ধর্ষণকারী হিসেবে পুলিশ আধিকারিকের নাম রয়েছে সেই নোটে। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক নেতা তথা সাংসদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ সামনে আসছে।


সুইসাইড নোটে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, ওই পুলিশ আধিকারিক তাঁকে একটি ভুয়ো ফিটনেস সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। একজন নয়, একাধিক পুলিশ অফিসার শারীরিক পরীক্ষা না দিয়েই ফিটনেস সার্টিফিকেট নেওয়ার চেষ্টা করতেন। তিনি না মানতে চাইলে, তাঁকে দিনের পর দিন চাপ দেওয়া হচ্ছিল। শুধুমাত্র পুলিশ নয়, এক সাংসদ ও তাঁর দুই পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্টও তাঁকে চাপ দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ।

সুইসাইড নোটে উল্লেখ করা হয়েছে, সাংসদের ওই দুই সহকারীকে সার্টিফিকেট দিতে  অস্বীকার করেছিলেন তিনি। এরপর হাসপাতালে গিয়ে হাজির হন ওই দু’জন। সেখান থেকেই তাঁরা সাংসদকে ফোন করে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন। ফোনেই সাংসদ তাঁকে হুমকি দেন বলে অভিযোগ।

চিকিৎসকের অভিযোগকে সমর্থন করে তাঁর ভাই জানিয়েছেন, তাঁর বোন বেশ কয়েকবার এমন অভিযোগের কথা জানিয়েছিলেন। এমনকী পুলিশ সুপার ও ডেপুটি পুলিশ সুপারকে এই বিষয়টি জানিয়ে চিঠিও লিখেছিলেন। তারপরও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।