প্রায় দুই দশক অতিবাহিত হলেও এখনও শেষ হয়নি সিবিআই তদন্তে থাকা কয়েকহাজার দুর্নীতি মামলা। এই সব মামলার কোনও কোনওটি পাঁচ বছর, দশ বছর, এমনকি কুড়ি বছরও পার হয়ে গিয়েছে। তবু শেষ হয়নি সিবিআই তদন্তে থাকা দুর্নীতি বিষয়ক মামলার বিচার! সম্প্রতি কেন্দ্রীয় নজরদার কমিশনের (সিভিসি) সাম্প্রতিক রিপোর্টে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
জানানো হয়েছে, সিবিআই তদন্তাধীন দুর্নীতির ৭ হাজারেরও বেশি মামলা এখনও ঝুলে রয়েছে দেশের বিভিন্ন আদালতে। এর মধ্যে প্রায় ৩৭৯টি মামলা কুড়ি বছরেরও বেশি পুরনো হয়ে গিয়েছে!
Advertisement
কেন্দ্র সরকারের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, সিবিআইয়ের তদন্তাধীন রয়েছে ৭,০৭২টি দুর্নীতি মামলা, যেগুলির বিচার চলছে দেশের বহু আদালতে। এর মধ্যে ১,৫০৬টি মামলা তিন বছরেরও বেশি পুরনো। ৩-৫ বছর ধরে ঝুলে রয়েছে আরও ৭৯১টি মামলা। সবচেয়ে উদ্বেগজনক, ৫-১০ বছরের পুরনো ২,১১৫টি মামলা এবং ১০-২০ বছর ধরে ঝুলে থাকা ২,২৮১টি মামলার এখনও নিষ্পত্তি হয়নি।
তবে শুধু নিম্ন আদালত নয়, বহু দুর্নীতি বিষয়ক মামলা আবার হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টেও বিচারাধীন রয়েছে। সেই সব মামলার মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩,১০০টি। সেগুলির মধ্যে একাধিক মামলা ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে বিচারাধীন। পশ্চিমবঙ্গের একাধিক আলোচিত মামলাও রয়েছে এই তালিকায়— যেমন, নিয়োগ দুর্নীতি এবং রেশন দুর্নীতি মামলা। এগুলি এখনও ঝুলে রয়েছে আদালতে।
Advertisement
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে মোট ৬৪৪টি দুর্নীতি বিষয়ক মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৩৯২টি মামলায় দোষীরা সাজা পেয়েছেন এবং ১৫৪টি মামলায় অভিযুক্তরা বেকসুর খালাস পেয়ে গিয়েছেন। তবে শুধু দুর্নীতি নয়, সিবিআই তদন্তাধীন অন্য ১১,৩৮৪টি মামলাও রয়েছে, যেগুলির বিচার এখনও চলছে দেশের বিভিন্ন আদালতে।
তদন্তের ক্ষেত্রেও রয়েছে ধীরগতি। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত ৫২৯টি দুর্নীতি মামলার তদন্তই শেষ করতে পারেনি সিবিআই। এর মধ্যে ৫৬টি মামলায় পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে তদন্ত। সিভিসির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, আইন অনুযায়ী সিবিআইয়ের এক বছরের মধ্যে তদন্ত শেষ করে চার্জশিট জমা দেওয়ার কথা থাকলেও, বাস্তবে অধিকাংশ মামলায় তা সম্ভব হচ্ছে না।
কেন এমন পরিস্থিতি? রিপোর্টে চারটি মূল কারণ তুলে ধরা হয়েছে। প্রথমত, সিবিআইয়ের হাতে একসঙ্গে প্রচুর মামলার চাপ; দ্বিতীয়ত, সংস্থায় লোকবলের ঘাটতি; তৃতীয়ত, বিদেশি সংস্থা বা দেশের সহযোগিতা না পাওয়া এবং চতুর্থত, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত চালাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পাওয়া।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এত দীর্ঘ সময় ধরে বিচার প্রক্রিয়া চলতে থাকায় মামলার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়ছে। একইসঙ্গে বিচারপ্রার্থীরাও পাচ্ছেন না ন্যায়বিচার। এখন দেখার বিষয়, সিবিআই এবং বিচারব্যবস্থা এই অচলাবস্থা কাটিয়ে কত দ্রুত এই মামলাগুলির নিষ্পত্তি করতে পারে।
Advertisement



