দেশকে পিছিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন মোদি : চিদম্বরম

আইএনএক্স মিডিয়া দুনীতি মামলায় বুধবারই ‘সুপ্রিম’ রায়ে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। ১০৬ দিন পর বেরিয়েছেন তিহার সংশােধনাগার থেকে।

Written by SNS New Delhi | December 6, 2019 2:53 pm

প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম (File Photo: IANS)

বুধবার তিহার জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরই বৃহস্পতিবারই তিনি সংসদে আসছেন তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে তিনি কী বলেন সেদিকেই নজর ছিল সংবাদমাধ্যমের। প্রত্যাশামতােই দলের সদর দফতরে সাংবাদিক বৈঠকও করলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম ।

কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন ইস্যুভিত্তিক বিষয় নিয়ে। কর্মসংস্থান, অর্থনীতি থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন গলদই এদিন সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন চিদম্বরম ।

এদিন শুরুতেই তিনি বলেন, ১০৬ দিন পর সাংবাদিক বৈঠক করতে পেরে ভালােই লাগছে। এই কদিনে আমি আরও শক্তিশালী হয়েছি। আমি এতটুকু ভেঙে পড়িনি। কেন্দ্রের মােদি সরকারকে অদক্ষ বলে কটাক্ষ করেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী। সকার নিজেদের অদক্ষতাকে ঢাকতেই বিভিন্ন চক্রান্ত করে চলেছে। একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত এই সরকারের কার্যকারিতার ওপর প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে বলে অভিযােগ করেন তিনি। নােটবন্দি, জিএসটি শিল্পমহলের অসন্তোষ তাে বাড়িয়েছেই, আরও পিছিয়ে দিয়েছে দেশকে, বলেন চিদম্বরম ।

দেশের অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সরকারের সমালােচনা করেন তিনি। তিনি বলেন, দেশের জিডিপি ৭ শতাংশ থেকে কমে ৪.৫ শতাংশে এসে ঠেকেছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, যদি এই ফিসকাল বছরটা বিজেপি সরকার ৪ শতাংশ জিডিপিতেও শেষ করতে পারে, তাহলে কিছুটা আর্থিক অবস্থা ঠিক থাকবে। দেশের কর্মসংস্থানের অবস্থা তথৈবচ। প্রতিদিনই বিভিন্ন সংস্থায় কর্মী সংকোচন হচ্ছে, সে বিষয়ে উদ্বেগ জানান তিনি। বাজারে চাহিদা না বাড়াতে পারলে উৎপাদন বাড়বে কীভাবে, সেই প্রশ্নই এদিন ছুঁড়ে দেন তিনি। সেই উৎপাদন কিভাবে বাড়ানাে যায়, তার বেসিক ধারণাটাই এই সরকারের নেই বলে কটাক্ষ করেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী।

সাংবাদিক বৈঠকের শুরুতেই তিনি কাশ্মীরের মানুষের স্বাধীনতার পক্ষে সওয়াল করে তিনি বলেন, কাশ্মীরের মানুষের পাশে আমাদের থাকা উচিত। যেরকম আমাদের স্বাধীনতার কথা ভাবি, সেরকম তাদের স্বাধীনতার কথাও ভাবা উচিত। সেই স্বাধীনতা যা গত ৫ আগস্টই শেষ হয়ে গিয়েছিল। সেখানকার মানুষের ন্যূনতম অধিকার খর্ব হচ্ছে। অর্থাৎ ৩৭০ ধারা বিলােপের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান তিনি।

যদিও তাঁর বিরুদ্ধে চলা দুর্নীতি মামলার বিষয়ে কিছুই বলতে চাননি তিনি। শুধু বলেন, বিচারাধীন বিষয় নিয়ে কথা বলব না। এদিন তিনি সংসদেও যান, সাংবাদিকদের বলেন সরকার সংসদে আমার স্বর দাবিয়ে রাখতে পারবে না। পেঁয়াজের অগ্নিমূল্য দর নিয়ে কংগ্রেস সাংসদরা প্রতিবাদ জানায় সেখানেও স্বমেজাজে দেখা যায়নি চিদম্বরমকে।

আইএনএক্স মিডিয়া দুনীতি মামলায় বুধবারই ‘সুপ্রিম’ রায়ে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। ১০৬ দিন পর বেরিয়েছেন তিহার সংশােধনাগার থেকে। এরপর বৃহস্পতিবারই সংসদে হাজির হলেন কংগ্রেসের শীর্ষনেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। শুধু অধিবেশনে উপস্থিত হওয়াই নয়, তিনি যােগ দিলেন কংগ্রেসের বিক্ষোভেও। আর সেই পুরনাে ঝাঁঝ স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘সরকার সংসদে আমার কণ্ঠ রােধ করতে পারবে না’।

১০৫ দিন হেফাজতে থাকার পর বুধবার জামিনে মুক্তি পান পি চিদম্বরম। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আইএনএস মিডিয়া মামলায় তাঁর জামিনের আবেদনে সম্মতি দেয় সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের বিচারপতি আর ভানুমতী, এ এস বােপান্না ও হৃষীকেশ রায়ের বেঞ্চ চিদম্বরমের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে। ২ লক্ষ টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন দেওয়া হয়েছে তাঁকে। তবে আদালত জানিয়েছে, সাক্ষীদের প্রভাবিত করা বা প্রমাণ যেন নষ্ট করার চেষ্টা না করেন কংগ্রেস নেতা। এই মামলা সম্পর্কে তিনি সাংবাদিকদের সামনে বা জনসমক্ষে কোনও বিবৃতি দিতে পারবেন না বলেও নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। বিচারপতিরা বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ না নিয়ে আপাতত দেশ ঘড়তে পারবেন না চিদম্বরম।

জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরদিনই সকাল সকাল সংসদে হাজির হন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা। গান্ধি মুর্তির পাদদেশে দ্রব্যমূল্য বিশেষত পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন বিরােধীরা সেই বিক্ষোভেও শামিল হতে দেখা যায় চিদম্বরমকে। বুধবার তিহার থেকে বেরিয়েই সােনিয়া গান্ধির বাসভবনে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান কংগ্রেস নেতা। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তিনি নির্দোষ, তাঁর বিরুদ্ধে একটিও চার্জ গঠিত হয়নি। যদিও মামলা সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করেননি চিদম্বরম। তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করতে পারেন বলে জানা গিয়েছে।