আলিঙ্গনে অজিতকে ঘড়ে ফেরার বার্তা সুপ্রিয়ার, মহারাষ্ট্রে শপথ বিধায়কদের

ঠাকরে পরিবার রিমােট কন্ট্রোল ছেড়ে সরাসরি প্রশাসনিক পদে বসে শাসন করবে মহারাষ্ট্র। এটা শুধু মহারাষ্ট্রে নয়, দেশের রাজনীতির পক্ষেই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।

Written by SNS Mumbai | November 28, 2019 12:27 pm

সুপ্রিয়া সুলে ও অজিত পাওয়ার। (Photo: IANS)

মহানাটকের অবসান হয়েছে। এবার স্বাভাবিক হওয়ার পথে এগােচ্ছে মহারাষ্ট্র। বুধবার শুরু হল চোদ্দতম বিধানসভার অধিবেশন। একে একে শপথ নেন নবনির্বাচিত বিধায়করা। শপথ নিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ, এনসিপি নেতা অজিত পাওয়ার সহ অন্যান্য বিধায়করা।

সরকার গঠন ও মুখ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার আগেই বিধানসভার অধিবশেন বসার বিরল ঘটনার সাক্ষী থাকল মহারাষ্ট্র। বুধবার সকালে বিধানভবনের প্রবেশদ্বারে দাঁড়িয়ে সব বিধায়কদের শুভেচ্ছা জানান শরদ পাওয়ারের কন্যা সুপ্রিয়া সুলে। তুতাে ভাই অজিত পাওয়ারকে আলিঙ্গন করে অভিবাদন জানান। এনসিপির মধ্যে যে আর কোনও দ্বন্দ্ব নেই, সেই বার্তাই দেন তিনি। করমর্দন করে শুভেচ্ছা জানান ফড়নবিশকেও। বিধানসভায় শপথ নেওয়ার আগে সিদ্ধি বিনায়ক মন্দিরে পুজো দেন শিবসেনা নেতা আদিত্য ঠাকরে।

দলের নেতা নীলাম গােরহে বলেছেন, অবশেষে বালাসাহেব ঠাকরের স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় আমরা খুব খুশি। উদ্ধব ঠকারের নেতৃত্বে শরদ পাওয়ার ও সােনিয়াজির সাহচর্যে খুব ভালাে কাজ হবে মহারাষ্টে। ‘গত শুক্রবারের মধ্যরাতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ এক সপ্তাহও স্থায়ী হল না। মহা বিকাশ আঘাদির (শিবসেন, এনসিপি ও কংগ্রেস জোট) পাল্টা হানায় ধস্ত হয় বিজেপির তিন দিনের সরকার। এর সঙ্গেই সৃষ্টি হয় ইতিহাস। যেখানে রাজনৈতিক ছুঁৎমার্গকে দূরে সরিয়ে রেখে একটি কট্টর হিন্দুত্ববাদী দলের সাঙ্গে হাত মেলাচ্ছে দু’টি ধর্মনিরপেক্ষ দল।

ঠাকরে পরিবার রিমােট কন্ট্রোল ছেড়ে সরাসরি প্রশাসনিক পদে বসে শাসন করবে মহারাষ্ট্র। এটা শুধু মহারাষ্ট্রে নয়, দেশের রাজনীতির পক্ষেই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এই নয়া জোট যদি সফল হয়, তাহলে ভবিষ্যতে ঘুরে যেতে পারে দেশের রাজনীতির ব্যাকরণও।

গত এক মাস ধরে চলা টানাপােড়েনের পরে, এদিন এত দ্রুততায় সব কিছু যে হয়, তার পিছনে মূল ভূমিকা সুপ্রিম কোর্টের। মঙ্গলবার সকালে সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছিল, ২৭ তারিখের মধ্যে বিধানসভায় শক্তিপরীক্ষা করতে হবে। বেলা পাঁচটার মধ্যে নতুন বিধায়কদের শপথ নেওয়া শেষ করতে হবে। একজন প্রোটেম স্পিকার নিয়ােগ করবেন রাজ্যপাল। তিনিই শপথ ও আস্থাভােট পরিচালনা করবেন। কেন্দ্রীয় সরকার তথা রাজ্যপালের তরফে সময় চাওয়া হয়। সেই আর্জি খারিজ করে বিচারপতিরা জানিয়ে দেন, তারা হর্স ট্রেডিং বা বিধায়ক কেনাবেচার সুযােগ করে দিতে চান না।

মহারাষ্ট্রের বিধানভবনের প্রবেশ পথে হাসিমুখে খুড়তুতাে ভাইকে জড়িয়ে ধরলেন সুপ্রিয়া- পাওয়ার পরিবারের সদ্য ফাটল ধরা সম্পর্কগুলাে যেন এক মুহুর্তে জোড়া লেগে গেল। ফড়নবিশকে সমর্থন করে মহারাষ্ট্রে বিজেপিকে সরকার গঠন করতে সহায়তা করায় অজিত পাওয়ারের সঙ্গে দলের তাে বটে, পরিবারের সদস্যদেরও দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। বিধায়ক হিসেবে শপথ গ্রহণ করার জন্য বিধানভবনে ঢােকার সময়ে অজিত পাওয়ার বলেন, ‘দলে ফিরে আসার কোনও প্রশ্ন ওঠে না– কারণ আমি এনসিপি’র সঙ্গে ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকব। আমার এখনই কিছু বলার নেই, তবে সঠিক সময়ে বলব। আগেও বলেছিলাম আমি দলের সঙ্গে রয়েছি, থাকব। ধন্দ তৈরি হওয়ার কোনও কারণ নেই’।

শীর্ষ আদালত মহারাষ্ট্র বিধানসভায় শক্তি পরীক্ষার নির্দেশ দেওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ফড়নবিশ ইস্তফা দেন। উপমুখ্যমন্ত্রী পদে ৮০ ঘন্টা থাকার পর ইস্তফা দিয়ে এনসিপি’তে ফিরলেন অজিত পাওয়ার। ভাই দলে ফেরার আনন্দ ধরে রাখতে না পেরে মহারাষ্ট্র বিধানসভার বাইরে তাঁকে জড়িয়ে ধরেন সুপ্রিয়া- এক বিরল ছবি ধরা পড়ল সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায়। দল ও পরিবারের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার জন্য সুপ্রিয়া সুলে হােয়াটসঅ্যাপ স্ট্যাটাসে কড়া ভাষায় খুড়তুতাে ভাইয়ের সমালােচনায় মুখর হয়েছিলেন।

সুপ্রিয়া সুলে বলেন, ‘আজ খুশির দিন, পাশাপাশি বড় দায়িত্ব গ্রহণের দিনও বটে’। শিবসেনা-কংগ্রেস-এনসিপি জোটের বৈঠকে যােগ দেওয়ার পরের দিন কাকভােরে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের উপ মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ গ্রহণ করে অজিত পাওয়ার দল ও পরিবারের সকলকে বড় রকমের ধাক্কা দিয়েছিলেন।

শুধু তাই নয়, তিনি এটাও বলেছিলেন, পুরাে দল তাঁর সঙ্গে রয়েছে। শরদ পাওয়ার সমস্ত জল্পনা খারিজ করে দিয়ে বলেছিলেন, তিনি ও দলের বিধায়করা কেউ বিজেপি’কে সমর্থন করেনি। অজিত পাওয়ার যা করেছে সেটা ওর নিজস্ব সিদ্ধান্ত। যদিও তিনি গােপনে অজিত পাওয়ারের সঙ্গে যােগাযােগ করে তাঁকে দলে ফেরানাের চেষ্টা করে গেছেন। পাশাপাশি সুপ্রিয়া সুলেও হােয়াটসঅ্যাপ স্ট্যাটাস আপডেট করাও বন্ধ করে দিয়েছিলেন। পাওয়ারের ছেলে পার্থ পাওয়ার ও সুপ্রিয়া সুলে সহ পরিবারের সদস্যদেরকে অজিত পাওয়ারকে ঘরে ফেরানাের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। দলের নেতারা তাঁকে বােঝানাের চেষ্টা করেন তিনি দলে ফিরে এলে যথাযথ সম্মান পাবেন।