মহারাষ্ট্রে যানজটের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ! ‘নিষ্কৃতিমৃত্যু’র আবেদন প্রধানমন্ত্রীর কাছে

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

রোজকার জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য যন্ত্রণার নাম হয়ে উঠেছে যানজট। দীর্ঘদিন ধরে প্রতিদিনের এই দুর্ভোগে অতিষ্ঠ মহারাষ্ট্রের বসইয়ের পূর্বাঞ্চলের বাসিন্দারা এবার এক চরম সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। অসহায়ের মতো ‘নিষ্কৃতিমৃত্যু’র অনুমতি চেয়ে তাঁরা চিঠি পাঠালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে।

বসইয়ের বাসিন্দাদের অভিযোগ, মুম্বই-আহমেদাবাদ জাতীয় সড়কে এমন কোনও দিন নেই, যেদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ির চাকা স্থির হয়ে থাকে না। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লম্বা যানজটের জেরে কাজকর্মে বিপর্যয় নেমে আসে। কেউ সময়মতো অফিসে পৌঁছতে পারেন না, কেউ বা অসুস্থ পরিজনকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে গিয়ে আটকে পড়েন গাড়িতে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে কয়েকশো বাসিন্দা একযোগে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠান। সেই চিঠিতে তাঁরা লিখেছেন, ‘আমরা প্রতিদিন মরছি, একটু একটু করে। এই যানজটের মধ্যে শ্বাসরোধ হয়ে যাচ্ছে আমাদের জীবন।’ তাঁদের আবেদন, যদি সরকার এই সমস্যার কোনও সমাধান না করতে পারে, তবে অন্তত তাঁদের ‘নিষ্কৃতিমৃত্যুর’ অনুমতি দেওয়া হোক।


বাসিন্দাদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারকে বারবার জানিয়েছেন সড়কের বেহাল অবস্থা ও যানজটের ভয়াবহতা নিয়ে। তবু কোনও স্থায়ী সমাধান হয়নি। তাঁদের কথায়, সড়কের খানাখন্দে ভরা অংশে ট্রাক, বাস, মোটরগাড়ি একসঙ্গে আটকে যায়, ফলে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে সারি সারি গাড়ি। অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতেই আটকে থাকেন। অনেকে জলের অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন।

এক স্থানীয় বাসিন্দার ক্ষোভ, ‘আমাদের জীবন কি এভাবেই শেষ হবে? এতদিন প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও ফল হয়নি। তাই শেষবার প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছি।’ তাঁর কথায়, ‘সরকার যদি আমাদের বাঁচাতে না পারে, তবে মৃত্যুর অনুমতি দিক।’

মুম্বই-আহমেদাবাদ জাতীয় সড়কের সাসুনঘর, সাসুপাড়া, বোবাতপাড়া এবং পাথরপাড়া এলাকায় এই যানজট ভয়াবহ আকার নিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সার্ভিস রোড না থাকায় সব যান একসঙ্গে মূল সড়কেই চলে, যার ফলে সামান্য দুর্ঘটনাই ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানচলাচল বন্ধ করে দেয়।

একই সঙ্গে বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এই যানজটে আটকে পড়ে রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। গত বুধবার পালঘরের প্রায় ৫০০ ছাত্রছাত্রী স্কুল বাসে বাড়ি ফিরছিলেন। সে সময় তাঁরা ১২ ঘণ্টা ধরে জাতীয় সড়কে আটকে ছিলেন। থানে ও মুম্বইয়ের কলেজপড়ুয়ারাও সেই যানজটে আটকে পড়েন।

সরকারি সূত্রে এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, সমস্যার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাসিন্দাদের আশা, তাঁদের আবেদন হয়তো এবার শোনা হবে, নইলে প্রতিদিনের যানজটই যেন হয়ে উঠছে মৃত্যুর আরেক নাম।