• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

ভাষার কোনও ধর্ম হয় না, ধর্মের প্রতিনিধিত্বও করে না: সুপ্রিম কোর্ট

আদালত উর্দুকে 'গঙ্গা-যমুনা তহজিব' বা 'হিন্দুস্তানি তহজিবে'র এক সুন্দর উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করে বলে যে, এটি উত্তর ও মধ্য ভারতের মিশ্র সংস্কৃতির পরিচায়ক।'

ফাইল চিত্র

‘ভাষা কোনও ধর্ম নয়, এবং এবং এটি কোনও ধর্মের প্রতিনিধিত্বও করে না। ভাষা শুধুমাত্র সম্প্রদায়, অঞ্চল, এবং মানুষের, কোনও ধর্মের নয়। ভাষা হল সংস্কৃতি এবং সভ্যতার অগ্রগতি পরিমাপের একটি মাপকাঠি।’ মহারাষ্ট্রের একটি পৌর পরিষদের সাইনবোর্ডে উর্দু ভাষার ব্যবহারের বিরুদ্ধে একটি আবেদন খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে যে, ধর্মের সঙ্গে ভাষাকে সংযুক্ত করা ভুল। এর পাশাপাশি, আদালত স্পষ্ট করেছে যে, উর্দুকে মুসলিমদের ভাষা হিসেবে বিবেচনা করার অর্থ বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের ধারণা থেকে দূরে সরে যাওয়া। বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া এবং বিচারপতি কে বিনোদ চন্দ্রনের ডিভিশন বেঞ্চ এ কথা জানায়।

মহারাষ্ট্রের আকোলা জেলার একটি পৌর পরিষদের সাইনবোর্ডে মারাঠির পাশাপাশি উর্দু ভাষার ব্যবহারের বিরোধিতা করেছিলেন পাতুরের প্রাক্তন কাউন্সিলর বর্ষাতাই সঞ্জয় বাগাড়ে। মঙ্গলবার বাগাড়ের আবেদন খারিজ করে দেয় বেঞ্চ। বেঞ্চ জানিয়েছে, ভাষা ধর্ম নয় এবং এটি ধর্মের প্রতিনিধিত্বও করে না।

Advertisement

বাগাড়ের যুক্তি ছিল, যে পৌর পরিষদের কাজ শুধুমাত্র মারাঠি ভাষায় করা উচিত। তাই এখানে উর্দুর ব্যবহার অপ্রয়োজনীয়। নামফলকেও এই ভাষার প্রয়োজন নেই। এর আগে পৌর পরিষদ এবং বম্বে হাইকোর্ট সঞ্জয় বাগাড়ের আবেদন খারিজ করে দিলে তিনি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন।

Advertisement

এই মামলারই শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্ট বলে, ‘ভাষা একটি সম্প্রদায়ের, একটি অঞ্চলের, মানুষের। ধর্মের নয়। ভাষা হল সংস্কৃতি। ভাষা হল একটি সম্প্রদায় ও তার মানুষের সভ্যতার অগ্রগতির পরিমাপের মাপকাঠি। উর্দু ভাষার ক্ষেত্রেও তাই। আদালত উর্দুকে ‘গঙ্গা-যমুনা তহজিব’ বা ‘হিন্দুস্তানি তহজিবে’র এক সুন্দর উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করে বলে যে, এটি উত্তর ও মধ্য ভারতের মিশ্র সংস্কৃতির পরিচায়ক।’

আদালত উল্লেখ করেছে, পৌর পরিষদের সাইনবোর্ডে উর্দু ভাষা রাখা হয়েছে, কারণ স্থানীয় অনেক বাসিন্দা এই ভাষা বোঝেন। পৌরসভা শুধুমাত্র যোগাযোগ স্থাপনের জন্যই এটি করেছে। আদালতের বক্তব্য, ‘যদি পৌর পরিষদ এলাকায় বসবাসকারী মানুষ উর্দু ভাষা সম্পর্কে পরিচিত হন, তাহলে মারাঠির সঙ্গে উর্দু ব্যবহারে আপত্তি থাকা উচিত নয়।’
শীর্ষ আদালত উর্দুর প্রতি বৈষম্য ভুলে অনুরোধ জানিয়েছে, উর্দু ভারতের কাছে বিদেশী, এই ধারণা ভুল। উর্দু একটি ইন্দো-আর্য ভাষা যা ভারতে বিকাশ লাভ করেছে। আদালত জানিয়েছে, ‘উর্দু ভারতে বিকশিত হয়েছে এবং উন্নতি লাভ করেছে কারণ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশের মানুষের মধ্যে ধারণা বিনিময় এবং যোগাযোগের প্রয়োজন ছিল। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, এটি আরও পরিশীলিত হয়েছে এবং অনেক বিখ্যাত কবির পছন্দের ভাষা হয়ে উঠেছে।’ আদালত বলেছে, উর্দু শব্দ ছাড়া দৈনন্দিন হিন্দিতে কথোপকথন সম্ভব নয়। এমনকি হিন্দি শব্দটিও এসেছে ফার্সি শব্দ ‘হিন্দভী’ থেকে।

আদালত আরও বলেছে, হিন্দি ও উর্দুর সংমিশ্রণ বন্ধ হয়ে যায় যখন ঔপনিবেশিক শক্তি দুটি ভাষাকে ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত করতে কাজে লাগিয়েছিল। এর ফলে হিন্দি হয়ে যায় হিন্দুদের ভাষা এবং উর্দুকে মুসলিমদের ভাষা হিসেবে বিবেচনা করা শুরু হয়। আদালত একে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য এবং সর্বজনীন ভ্রাতৃত্বের ধারণা থেকে বিচ্যুতি বলে অভিহিত করেছে।

সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ‘আমরা বম্বে হাইকোর্টের যুক্তির সঙ্গে পুরোপুরি একমত যে ২০২২ সালের আইন বা অন্য কোনও আইনের বিধানে উর্দু ব্যবহারের উপর কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। আমাদের মতে, আবেদনকারীর সম্পূর্ণ মামলা আইনের ভুল বোঝার উপর ভিত্তি করে। তাই আমরা এই মামলায় হস্তক্ষেপ করার কোনো কারণ দেখছি না।’
আদালত বলেছে, ‘ভাষার প্রতি আমাদের ভুল ধারণা এবং কুসংস্কার মুক্ত মনে পেরোতে হবে। আমাদের শক্তি আমাদের দুর্বলতা হতে পারে না। আসুন আমরা উর্দু এবং প্রতিটি ভাষাকে মিত্র হিসেবে গ্রহণ করি।’

Advertisement