ইলেক্টোরাল বন্ড বিক্রির ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে কলকাতা, টেক্কা দিল বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইকেও 

কলকাতা, ১৭ ফেব্রুয়ারি – মোদি সরকারের ইলেক্টোরাল বন্ডকে বৃহস্পতিবার অসাংবিধানিক ও বেআইনি আখ্যা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। অবিলম্বে ইলেক্টোরাল বন্ড বিক্রি করার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট। দেশের শীর্ষ আদালতের রায়ে জোর ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি।  শীর্ষ আদালতের রায়কে উপেক্ষা করে অর্ডিন্যান্স জারি করার পরিকল্পনাও নিয়েছে মোদি সরকার।  ছ’বছর আগে চালু হওয়া এই বন্ড এক হাজার, দশ হাজার, এক লাখ এবং এক কোটি টাকা অঙ্কের ছিল, যা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের জেরে বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক। 

২০১৮ সালে চালু হওয়া এই বন্ড ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মামলাকারী একাধিক সংস্থার অন্যতম হল অ্যাসোসিয়েশন অফ ডেমোক্র্যাটিক রিফমর্স। ওই সংস্থা নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে কাজ করে। তারা জানিয়েছে, ইলেক্টোরাল বন্ড সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে কলকাতায়। ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সর্বাধিক বন্ড বিক্রি হয়েছে কলকাতায়। গত ৬ বছরে  এই শহরে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার শাখাগুলি থেকে মোট ৭৮৩৪ টি বন্ড বিক্রি হয়েছে। এরপরেই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মুম্বই। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানীতে বিক্রি হয়েছে ৫৪২৬টি বন্ড। তৃতীয় স্থানে তেলেঙ্গানার রাজধানী হায়দরাবাদ। ওই শহরে বিক্রি হয়েছে ৪৮১২ টি বন্ড। রাজধানী দিল্লিতে ৩,৬৬২ টি, চেন্নাইয়ে ১৮৬৯ টি এবং গান্ধিনগরে ১১৮৯ টি বন্ড বিক্রি হয়েছে।  সবচেয়ে কম বন্ড বিক্রি হয়েছে পাটনায়।  সেখানে বিক্রি হয়েছে মাত্র ৮ টি বন্ড।  

তবে কলকাতা থেকে সবেচেয়ে বেশি বন্ড বিক্রি হয়ে থাকলেও টাকার অঙ্কে তা কত সেই তথ্য জানা যায়নি। কলকাতায় বিক্রি হওয়া বন্ডের টাকা কোন দলের তহবিলে সবচেয়ে বেশ জমা পড়েছে সেই তথ্যও জানা সম্ভব হয়নি।


বৃহস্পতিবারের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট এসবিআই এবং নির্বাচন কমিশনকে বলেছে কোন দল ইলেক্টোরাল বন্ড থেকে কত টাকা পেয়েছে এবং কোন কোন সংস্থা ও ব্যক্তি সেই অর্থ জুগিয়েছেন সেই তথ্য ১৬ মার্চের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে। শীর্ষ আদালত বৃহস্পতিবার জানায়, রাজনৈতিক দলগুলিকে কারা অর্থ জোগাচ্ছে তা জানার অধিকার নাগরিকদের আছে। একই সঙ্গে বন্ড মারফত অর্থ সংগ্রহের ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক ও বেআইনি বলে উল্লেখ করেছে শীর্ষ কোর্ট। মামলায় বলা হয়েছিল, দাতা সংস্থার নাম গোপন থাকার সুযোগ নিয়ে সরকার শাসক দলকে বেশি চাঁদা দেওয়া সংস্থাকে বাড়তি সুবিধা দিতে পারে। আর তা হলে সেটা হবে সম্পূর্ণভাবে বেআইনি কাজ। ইলেক্টোরাল বন্ড ব্যবস্থায় সেই সুযোগ ছিল।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের বাজেটে নরেন্দ্র মোদি সরকার নির্বাচনী বন্ড চালু করার কথা জানায়। বিরোধী দলগুলি তখনই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল যে, শাসক দলের তহবিলে মোটা অর্থ সঞ্চয়ের ব্যবস্থা করতেই এই বন্ড । সেই আশঙ্কা যে ভুল ছিল না, তা বন্ড বিক্রি বাবদ প্রাপ্য অর্থ কোনও দল কত পেয়েছে সেই পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট। এখনও পর্যন্ত বিক্রি হওয়া বন্ডের মোট অর্থমূল্যের ৫৬ শতাংশ জমা পড়েছে শাসকদল বিজেপির কোষাগারে। বাকি ৪৪ শতাংশ বিরোধী দলগুলি পেয়েছে। ফলে বেশিরভাগ বিরোধী দল সামান্যই অর্থ পেয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, দেশের বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিক্রির টোপ দিয়ে শিল্পপতিদের কাছে থেকে টাকা তুলে কোষাগার ভরেছে বিজেপি।