• facebook
  • twitter
Saturday, 19 July, 2025

ফের অশান্ত মণিপুর, পাঁচ জেলায় বন্ধ ইন্টারনেট

ফের অশান্ত মণিপুর। শনিবার বিকেলের পর থেকেই বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে অশান্ত হয়ে ওঠে মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল।

ফের অশান্ত মণিপুর। শনিবার বিকেলের পর থেকেই বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে অশান্ত হয়ে ওঠে মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল। মেইতেই সংগঠন ‘আরামবাই টেংগোল’-এর পাঁচ স্বেচ্ছাসেবক গ্রেপ্তার হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই শনিবার রাতে ইম্ফলের একাধিক এলাকায় ছড়ায় ব্যাপক বিক্ষোভ। বড়সড় হিংসা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় পাঁচ জেলায় ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ-প্রশাসন।

সরকারি নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, শনিবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিট থেকে ইম্ফল পশ্চিম, ইম্ফল পূর্ব, থৌবাল, বিষ্ণুপুর এবং কাকচিং জেলায় ভিস্যাট ও ভিপিএন সহ সমস্ত ইন্টারনেট পরিষেবা পাঁচ দিনের জন্য বন্ধ থাকবে। প্রশাসনের মতে, সমাজবিরোধীরা যাতে ঘৃণামূলক বার্তা ছড়িয়ে পরিস্থিতিকে আরও অশান্ত করে তুলতে না পারে, সেইজন্যই এই কড়া সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মণিপুরের কমিশনার এবং স্বরাষ্ট্রসচিব এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘মণিপুরের ইম্ফল পূর্ব, ইম্ফল পশ্চিম, থৌবল, কাকচিং এবং বিষ্ণুপুর জেলাগুলির বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আশঙ্কা করা হচ্ছে কিছু ব্যক্তি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে জনগণের আবেগকে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। হিংসাত্মক বক্তব্য এবং ভিডিও ছড়াতে সমাজমাধ্যমকে ব্যবহার করতে পারেন বলে মনে হচ্ছে, যা মণিপুরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। তা আটকাতেই সাময়িক ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নির্দেশ লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

হিংসায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে ‘আরামবাই টেংগোল’ নামের একটি মেইতেই গোষ্ঠীর এক শীর্ষ নেতা-সহ পাঁচ স্বেচ্ছাসেবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই পাঁচ নেতার গ্রেপ্তারির পর থেকেই মেইতেই সংগঠনগুলি সোশাল মিডিয়ায় উসকানিমূলক প্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। শনিবার বিকেলেই রাস্তায় নামেন মেইতেইরা। মেইতেই গোষ্ঠীর বেশ কয়েক জন পশ্চিম ইম্ফলের কোয়াকেইথেল পুলিশ পোস্টে হামলা চালায়। ধৃতদের অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা।

বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড গুলি চালিয়েছে বলেও অভিযোগ। দুই পক্ষের ধস্তাধস্তিতে দুই সাংবাদিক-সহ তিন জন আহত হন। তার পরেই রাজ্যের বিভিন্ন দিকে অশান্তির আগুন ছড়াতে শুরু করে। চলে বিক্ষোভ, স্লোগান। থৌবল, কাকচিং-সহ বেশ কিছু এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরোধ করা হয়।

এরই মধ্যে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়। সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওয় দেখা গিয়েছে, কয়েকজন যুবক নিজেদের গায়ে পেট্রোল ঢেলে দিচ্ছেন। তাঁদের বলতে শোনা যায়, ‘আমরা অস্ত্র-শস্ত্রও ফিরিয়ে দিয়েছি। বন্যার সময়ও যা কিছু করার ছিল, করেছি। এখন আমাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আমরা নিজেদেরই মেরে ফেলব।’ যদিও এই ভিডিও সত্যতা যাচাই করেনি দৈনিক স্টেটসম্যান।

ইম্ফল-সহ একাধিক এলাকায় নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে মেইতেই বিক্ষোভকারীরা। খুরাই লামলং এলাকায় একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। পুলিশের লাঠিচার্জে একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, মণিপুরে কুকি ও মেইতেই গোষ্ঠীর সমস্যা বহু পুরোনো। কুকি বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘কুকি লিবারেশন আর্মি’ এবং মেইতেই বিদ্রোহী গোষ্ঠী ইউএনএলএফের মধ্যে সই হয়েছিল যুদ্ধবিরতি চুক্তি। সেই চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ তুলে সরব হয় মেইতেই গোষ্ঠী। তাদের দাবি, মণিপুরে সংঘর্ষের মূলে রয়েছে কুকিরাই। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সংঘর্ষবিরতি বাতিল করার আবেদন জানিয়েছিল মেইতেই গোষ্ঠী। কেন্দ্র অবশ্য সরকারিভাবে এই নিয়ে মুখ খোলেনি।

পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে, তাতে মণিপুর ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠার আশঙ্কা প্রবল। প্রসঙ্গত, গত ৩ মে, ২০২৩ থেকে মণিপুরে হিংসার ঘটনা ঘটেছে বার বার। মেইতেই এবং কুকি জনজাতির সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে। গত দু’বছরে মণিপুরে গোষ্ঠীহিংসায় ২৬০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং প্রায় ৫০ হাজার জন বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এরই মধ্যে বীরেন সিংহ মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন। বর্তমানে মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি রয়েছে। এরই মধ্যে ফের অশান্তি ছড়াল মণিপুরে।